ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রূপগঞ্জের পল্লীতে নির্ঘুম রাত

সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৪, জুন ৪, ২০১২
রূপগঞ্জের পল্লীতে নির্ঘুম রাত

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): ক্ষেত-খামারে উদয়াস্ত পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত দেহে ঘরে ফেরেন কৃষকরা। কিন্তু বিশ্রামের সুযোগ নেই।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে কোনোমতে দু’মুঠো খেয়ে আবারও নতুন কাজে নামতে হয় তাদের।

ক্ষেতের ফসল আর ঘরের আসবাবপত্র ও নগদ যৎসামান্য টাকা রক্ষা করতে রাতের বেলায়ও জোট বেঁধে গ্রাম পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। শেষরাতে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবারও কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে ছুটতে হচ্ছে মাঠে। গ্রামগুলোর মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ।

ফলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই অবর্ণনীয় চাপ আর কাজের মধ্যে পার করতে হচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের শেষ সীমানার সাতটি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকদের।

সরেজমিন দেখা যায়, ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক, পূবেরগাঁও, গুতুলিয়া, করাটিয়া, কান্দাইল, দিঘুলিয়া ও ছনপাড়া গ্রাম রূপগঞ্জের শেষ সীমানায় পড়েছে। ফলে, এখানকার মানুষ নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশাসনিকভাবে তারা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।

এদিকে, সারাদিন কৃষি কাজ শেষে রাতে ঘুমানোর সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না তারা। শেষ সম্বলটুকু রক্ষার জন্য সারারাত গ্রাম পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। যে কোনো সময় ডাকাত হানা দিতে পারে এ আশঙ্কায় স্বস্তি নেই তাদের।

প্রতি বছরের এ সময় ডাকাতরা ওই গ্রামগুলোতে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। রাস্তাঘাট ভালো থাকলেও পুলিশ একবার আসে। তাও সপ্তাহে ৩/৪ দিন।

পূবেরগাঁও এলাকায় গিয়ে কথা হয়, কৃষক মোছেন মোল্লার সঙ্গে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘কী আর কমু ভাই। আমাগো দেহার কেউ নাই। ডেহাইতদের রুখতে আমাগোই পাহারা দিতে হইতাছে। আমি রাইতে বিলে-জমিতে পানি লইতে যাই। ওই সময় দেহি ডেহাইতদের খেলা। হেরা দেরটনি টেরাক দিয়া আইয়া নামে। সুযোগ বুইযা কাম কইরা আবার চইলা যায়। ‘

একই এলাকার কৃষক ওমর আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘গেরামে মা-বইন আছে। ডেহাইতগোতো মায়াদয়া নাই। হে জন্যেই পাহারা দিতাছি। ’

একই চিত্র মেলে চারিতালুক এলাকায়। ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মিল্টনসহ গ্রামের লোকজন পাহারা দিচ্ছেন। এ প্রতিবেদককে দেখে ওই ইউপি সদস্য এগিয়ে আসেন। তিনি খুশি হয়ে গ্রামের লোকজনকে ডেকে জড়ো করেন।

এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, প্রতি রাতেই ডাকাতরা বিভিন্ন বাড়িতে হানা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। পুলিশকে খবর দিলে তারা সময় মতো আসে না। ডাকাত রুখতে টেঁটা, বল্লম, জুইতাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান মিল্টন জানান, ৬ বছর আগে স্থানীয়রা চার ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে হত্যা করে। এর পর থেকেই ডাকাতরা এ মৌসুমে গ্রামগুলোতে হানা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

জানা যায়, গুতুলিয়া এলাকায় নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের পর্যন্ত ঘুম নেই। সপ্তাহখানেক আগে ওই এলাকার দুই বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এসময় ডাকাতরা পাঁচজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তাদের শেষ সম্বলটুকুও লুট করে নিয়ে যায়। এর পর থেকেই ওই গ্রামের মানুষের চোখে ঘুম নেই।

কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘স্যার আগে ২/১ বার র‌্যাব আইতো। অহনে আর র‌্যাবও আহে না। আমাগো গরিবগো কাছে কেউ নাই। `

সহজ সরল মানুষগুলো সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তাদের জানমালের নিরাপত্তার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) সফিক আহাম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘অল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্যের কারণে আমরা নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করতে পারছি না। পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হলে নিয়মিত টহল জোরদার করা সম্ভব হবে। ’

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্রামগুলোতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে- এমন সংবাদ আমি সবেমাত্র জানলাম। ব্যাপারটি আমি দেখছি। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১২
সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।