ঢাকা, রবিবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ জুলাই ২০২৫, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

বাংলানিউজ-ওয়ালটন ফটো প্রতিযোগিতা

দৃষ্টি তোমার অপেক্ষায়...

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৬, জুন ৪, ২০১২
দৃষ্টি তোমার অপেক্ষায়...

প্রতি মুহূর্তের ঘটনা আটকে যাচ্ছে ক্যামেরা ফ্রেমে। আর কিছু ঘটনা থেকে যাচ্ছে দগদগে ইতিহাস হয়ে।

এমন অনেক গল্পই তো আছে। তবে আজকের গল্পটা একটু ভিন্ন।

স্টিভ ম্যাককারি একজন ফটোগ্রাফার। ১৯৮৪ সালের দিকে ম্যাককারি পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে যান। সেখানে আফগানিস্তানের হাজারো অসহায় মানুষ জড়ো হয়েছেন। সে সময় সোভিয়েত হামলায় আফগানিস্তান রণক্ষেত্র। সেই রিফুজি ক্যাম্পে মানুষের দুর্দশা দেখে স্টিভের মন অস্তির হয়ে ওঠে। তিনি সবাইকে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন।

আফগানরা ধর্মীয় রীতিনীতি বিষয়ে বেশ কঠোর। স্টিভের হাতে ক্যামেরা দেখে শুরুতেই আফগান পুরুষ ও নারীরা তাকে ছবি তুলতে নিষেধ করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে স্টিভও সম্মান দেখিয়ে ছবি তোলা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু মনে মনে কারো সহযোগিতা প্রত্যাশা করছিলেন। এমন সময়েই এক আফগান কিশোরীর সামনে দাঁড়ান স্টিভ। হাতে ক্যামেরা দেখে প্রথমে নিজের মুখটি সে ঢেকে ফেলে। তবে তার চোখে তখনও আগুন জ্বলছে।

আর সেই আগুনের ছবি তোলার জন্যই মেয়েটির ছবি তোলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন স্টিভ। মেয়েটি তাকে সম্মতি দেয় চোখের পালক ফেলে। তখনই স্টিভের ক্যামেরায় এসে যায় আফগান কিশোরী মুখ। এ ছবিটি পরের বছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকার প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়। এরই সঙ্গে ইতিহাস হয়ে যায় ছবিটি। সারা বিশ্বের দিকে আগুন জ্বলা চোখটির ক্রদ্ধতা দেখে হাজারও মানুষ থমকে যায়।

অচেনা, অজনা হয়ে থাকলেও একটি ছবির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আফগান নারীদের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে মেয়েটি। স্টিভ সেই মুহূর্তটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, শেষ বিকেলের সময় আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। কোনোভাবেই কেউ রাজি হচ্ছিল না। হুট করেই মেয়েটিকে আমি স্কুলের বাইরে দেখি।

শুরুতে মেয়েটি খুব লজ্জা পাচ্ছিল। চোখ ছিল সবুজ। ওর চোখটিই আমাকে কাছে টানছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা, আতঙ্ক, ক্ষোভ সবই ছিল সবুজ চোখটির মাঝে। আমি মেয়েটির সম্মতি পেয়ে এক মিনিটও দেরি করিনি। তবে সেই ছবিটি বিখ্যাত হয়ে যাবে, তা এক মুহূর্তের জন্যও ভাবনায় আসেনি।

এখানেই শেষ নয়। হুট করেই ২০০২ সালে জিওগ্রাফিক টেলিভিশন ও ফিল্ম চ্যানেল স্টিভকে ডেকে পাঠায়। তাকে বলা হয়, ১৯৮৫ সালে জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে যেই অপরিচিত মেয়েটির ছবি প্রচ্ছদ করা হয়েছিল তাকে খুঁজে বের করতে হবে। এ মিশনটি স্টিভেরও পছন্দ হয়। যদিও চ্যালেঞ্জের। তারপরও তিনি পাকিস্তানের সীমানা ঘেঁষে আফগান রিফুজি ক্যাম্পে যেতে রাজি হলেন। বলে রাখা ভালো, তখনও রিফুজি ক্যাম্প সেই একই জায়গায় ছিল।

স্টিভ ও জিওগ্রাফি চ্যানেলের লোকজন একটি ছবিকে অনুসরণ করে পৌঁছে গেল রিফুজি ক্যাম্পে। কোনোভাবেই ছবির মেয়েটিকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। এক পর্যায়ে একজন বলল, তিনি মেয়েটিকে চেনেন। কিন্তু বর্ণনা সঙ্গে তেমন মিল না পেয়ে স্টিভ হতাশ হন।

এদিকে আরেকজন লোক এসে ছবিটি দেখে হকচকিয়ে যান। তিনি এ মেয়েকে চেনেন। ছোটবেলা থেকে তারা একসঙ্গেই এ রিফুজি ক্যাম্পে ছিল। খেলার সঙ্গীকে ভোলা যায়? লোকটি বলল, সে এখন আফগানিস্তানে। তোরা বোরা নামে এক পাহাড়ি গ্রামে মেয়েটিকে পাওয়া যাবে। তবে সেখানে যেতে অনেক সময় লাগবে।

লোকটির কথা সবার বিশ্বাস হলো। রওনা দিল ছবির মেয়েটির খোঁজে। যেখানে যেতে সময় লাগল তিন দিন। মেয়েটির ঘরের সামনে দাঁড়ালো। সেই মুহূর্তে মেয়ে হেঁটে হেঁটে যখন সামনের দিকে আসছিল স্টিভ ততই দূর্বল হয়ে পড়ছিলেন। বিস্ময়, আবেগ কোনোটিই যেন তিনি সামলাতে পারছিলেন না। এই সেই ছবির মেয়েটি। নাম ‘শরবাত গুলা’।

শরবত গুলা সম্পর্কে স্টিভ বলেছিলেন, মেয়েটির বয়স কত ছিল আমি ঠিক তা জানি না। এখনও তার বয়স কত তাও জানি না। এখন হয়ত আটাশ কিংবা ত্রিরিশ হবে। হয়ত মেয়েটিও জানে না ওর বয়স কত। তবে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে। বাস্তবতা ও সময় মেয়েটির সৌন্দর্যকে খেয়ে ফেলেছে। আগের মতো সেই চোখে এখন আর আগুন নেই। সময় সেই আগুনকেও নিভিয়ে ফেলেছে।

এভাবেই ছবি ইতিহাসের নিরব সাক্ষী হয়ে থাকে। আজকের তারুণ্য কালকের বৃদ্ধ। ছবি মানুষের গল্প বলতে পারে, জীবনের গল্প বলতে পারে। সময়কে ধরে রাখতে পারে একটি সুন্দর ফ্রেমে।

এ ফ্রেমকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতেই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের উদ্যোগে ওয়ালটনের সহযোগিতায় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তারুণদের ছবি তোলার আগ্রহকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতেই এ আয়োজন। ছবি বলবে প্রত্যেকের মনের, সমাজের, দেশের, তারুণ ভাবনার আর সংগ্রামের কথা।

সামাজিক ফেসবুক মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। শুধু নিজের তোলা ছবি নিয়েই এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যাবে। বিচারকদের বিচারে সেরা ছবিগুলো হবে উন্মুক্ত প্রদর্শনী। এ ছাড়া পুরস্কার তো থাকছেই।

এখান থেকেই হয়তো কোনো ছবি ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এখান থেকেই কোনো ক্যামেরাবাজের স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগবে। এ স্বপ্নের গন্তব্য অনেক দূর। এমন কোনো তরুণের দেখা ক্যামেরা ছবিই দেশকে নিয়ে যেতে পারে সৃষ্টির অনন্য উচ্চতায়। এমন স্বপ্নই দেখে বাংলানিউজ পরিবারের প্রতিটি সদস্য।

আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ভিজিট করুন
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।