ঢাকা : মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ময়লা পরিষ্কার করায় তারা এখন শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগচ্ছেন ।
সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকার বিভিন্নস্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাস্ক, গ্লাভস ও বুট জুতা ছাড়াই ময়লা পরিষ্কার করছেন উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতা ছাড়া ময়লা পরিষ্কার করছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আবু তাহের বাংলানিউজকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, মাস্ক, গ্লাভস, বুটজুতা কোথায় পাব? পরিচ্ছনতা বাবদ যে টাকা দেয়া হয় তাতে পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করাই কঠিন ।
গ্লাভস ছাড়া কাজ করতে সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নের জবারে আবু তাহের বলেন, অসাবধানতাবশত: অনেক সময় কাচের টুকরা বা অন্য কিছু দিয়ে হাত-পা কেটে যায়।
কর্তৃপক্ষ মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ করে কি না জানতে চাইলে তাহের বলেন, কর্তৃপক্ষ ময়লা পরিষ্কারের জন্য সামান্য কিছু টাকা ছাড়া আর কিছুই দেয় না। তিনি জানান, দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে তাদের অনেকেই বিভিন্ন শারিরীক সমস্যায় ভুগছেন।
বাংলানিউজকে একই কথা জানান জামাল, রউফ, দীনেশসহ আরো কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তারা আরও জানান, কাজ শেষে শুধু পানি দিয়ে হাত-মুখ পরিষ্কার করেন তারা। কোন সাবান বা জীবানুনাশক ব্যবহার করেন না।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক ডা. খন্দকার রেজাউল হক রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য পরিষ্কার কাজে নিয়োজিত থাকলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
একজিমা, চুলকানিসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের নানা সমস্যাও হতে পারে।
তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ শুরু করার আগে তাদের গ্লাভস,মাস্ক এবং বুটজুতা ব্যবহার করতে হবে। কাজ শেষে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত মুখ পরিষ্কার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সাধারণত রাতে কাজ করেন।
তাই একজনের প্রতি রাতে কাজ করা ঠিক হবে না। তাদের একদিন অন্তর-অন্তর কাজ করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। অপর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিদিন ৫ হাজার ৯’শ ৫০ মেট্রিক টন গৃহস্থালি , মেডিক্যাল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৫০ এবং রাস্তাঘাট থেকে চার’শ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন মাত্র ৭ হাজার ৫শ জন।
বাংলাদেশ সময় : ১১০৯ ঘণ্টা, ০৭ জুন, ২০১২
টিএইচ/ সম্পাদনা : শাহেদ হোসেন, সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর
kumar.sarkerbd@gmail.com