ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বইও কথা বলে: লুথার

শেরিফ সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪২, জুন ১১, ২০১২
বইও কথা বলে: লুথার

বই হচ্ছে গল্পের রাজা। বই পড়ে মানুষ নিজের সঙ্গে কথা বলতে শেখে।

পড়ার অভ্যাস মানুষের মনের দুয়ার খুলে দিতে পারে। বই হচ্ছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য গল্প বলা কিংবা শোনার মাধ্যম। কিন্তু বিষয়টি ঊনবিংশ শতকের দিকে খুব একঘেয়ে হয়ে পড়েছিল। এখন তো সব কিছুতেই নতুনত্ব চাই; ঠিক তেমনি সেই সময়েও সবাই নতুনত্বের সন্ধান করেছে।

‌ঊনবিংশ শতকের আগে প্রায় ৪০০ বছর গল্পে বলার ঢঙে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিশেষ করে গল্প বলার বাহক হিসেবে বইয়ের ভেতর কোনো পরিবর্তন আসেনি। হুট করেই একজন লেখক আর্বিভূত হলো। সেই লেখক নিমিষের মধ্যে সব পরিস্থিতি চিরকালের জন্যে বদলে দিলেন। নাম তার লুথার মেগগেনডর্ফার।

লুথার মেগগেনডর্ফার এগিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে! তারপর তিনি কলমের সঙ্গে কাঁচি চালালেন। তিনি কাগজে কলমের কালির সঙ্গে কাগজ ভাঁজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। লুথার মেগগেনডর্ফার হলেন বাচ্চাদের পপ-আপ বইয়ের জনক। যেখানে বাচ্চারা গল্প শুনবে। আর ঠিক পাশেই সেই গল্পের চরিত্রগুলোকে দেখতে পাবে। বিশেষ পদ্ধতিতে সেই চরিত্রগুলোকে নড়াচড়াও করা যাবে।

বিশ্বের অন্যসব লেখকদের মাথায় তখন হাত! লুথার তো গল্পের ধারণাকেই পাল্টে দিলেন। শুধু কি তাই? বিশ্বের অন্য সবাইকে ভিন্নভাবে চিন্তা করার উৎসাহও দিলেন। যেমন রেডিও সংবাদ থেকে রেডিও নাটক, স্থিরচিত্র থেকে চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্র থেকে সবাক চিত্র, রঙিন ছবি, ত্রিমাত্রিক ছবি, যা ভিএইচএস থেকে ডিভিডির মতো মাধ্যমেও প্রবেশ করেছে।

১৮৪৭ সাল। লুথার জার্মানির মিউনিখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একশতরও বেশি বই প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশ বইগুলোকে তিনি বলতেন মেকানিক্যাল বই। যেখানে মজার মজার বিষয় নিয়ে তিনি গল্প বলতেন। শিশুদের মনুষ্যত্ব বিকাশে এবং নতুন কিছু শেখাতে বইগুলোর গুরুত্ব আছে।

লুথারের প্রথম বই প্রকাশ পায় ১৮৬২ সালে। প্রথমে অল্প করে কৌতুক আকারে প্রকাশ করতো। পরে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর লুথার প্রতি সপ্তাহে ছোট আকারে পপ-আপ বই প্রকাশ করা শুরু করল। ধীরে ধীরে পপ-আপ বইয়ের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এ ধারণাকে আরও কত সুন্দর করা যায় এ বিষয়ে অনেকেই কাজ শুরু করলেন। সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় অন্যরকম গল্পকার হিসেবে ঠাঁই করে নিলেন লুথার মেগগেনডর্ফার।

এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির জয়গান। স্টিভ কিংবা বিল গেটসকে নিয়ে কারো আগ্রহের অন্ত নেই। কিন্তু ইতিহাসে বইয়ের ভেতর অন্যরকম প্রযুক্তির ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন লুথার মেগগেনডর্ফার। লুথার ১৯২৫ সালে মারা যান। কিন্তু এখনও লুথারের কীর্তি পপ-আপ বইয়ের মধ্যে জীবন্ত রয়ে গেছে। প্রতিবছর নিত্যনতুন আইডিয়ার পপ-আপ বই নিয়ে কাজের জন্য যারা আলোচিত হচ্ছেন তাদের ‘মেগগেনডর্ফার’ নামেই আজও পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।




বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।