ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

তরুণদের বাজেট প্রতিক্রিয়া

কথার ফুলঝুরি নয়, সুফল চাই

তাহজিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:১৯, জুন ১৭, ২০১২
কথার ফুলঝুরি নয়, সুফল চাই

ঢাকা: ‘অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় যেসব সাফল্যের গীত গাইলেন, আমরা তরুণরা তাতে মোটেই তৃপ্ত হতে পারলাম না। তার তুলে ধরা সফলতার চিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি।

কারণ, সাফল্যের সব চিত্র তার তাত্ত্বিক বক্তব্য আর লাল ফিতার ডিজিটাল ফাইলেই সীমাবদ্ধ। সে জগতে আমাদের তরুণদের বিচরণ নেই। তথ্য-প্রযুক্তির এ ডিজিটাল যুগে আমরা আর রূপকথার রাজ্যে বিচরণ করতে চাই না। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তাই বাজেটের আকার ছোট হলো না বড় হলো তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমাদের মাথাব্যাথা এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে। বিটিভির সংবাদ, মন্ত্রী-এমপিদের গলা ফাটানো বক্তব্য আর সরকার সমর্থক গণমাধ্যমের কাগজে-কলমে নয়, আমরা বাজেটের সুফল দেখতে চাই সচিত্র বাংলাদেশে। ’

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে দেওয়া নিজের প্রতিক্রিয়ায় অনেকটা ক্ষুব্ধ স্বরেই এ কথা বলেন তরুণ সমাজ বিজ্ঞানী এনামুল হক।

Enamul-Haqueতিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের যে বড় আকারের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তাতে সরকারের কর্তা-বিশেষজ্ঞরা অনেক বাহবা দিচ্ছে। আমরা তরুণরা বাহবা দিতে পারছি না। এতে অনেক টাকার বাজেট ঘাটতি রয়েছে। বড় ঘাটতির বড় বাজেটের উদ্দেশ্য থাকে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া। আক্ষরিক অর্থে মোটা অংকের ঘাটতি বাজেট দিয়ে জনগণের ভাগ্যের উন্নতির মিথ্যা ফুলঝুরি প্রকাশ করা হয়। ’

তিনি আরো বলেন, ‘তাই বাজেটের আকার কত বড় হল, কোন খাতে কত বরাদ্দ হল, কোথায় কম হয়ে গেল, কোন খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানো উচিত এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন বিশেষজ্ঞ-অর্থনীতিবিদরা। ’

বাংলানিউজের কাছে এভাবেই দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার তরুণ প্রস্তাবিত বাজেটের উপর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান। তারা যেমন বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলোর সমালোচনা করেন, তেমনি বাজেটের ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করেন। তরুণরা চান বছর শেষে যেন বাজেটের ষোল আনা বাস্তবায়ন। বাজেটের দুর্বল দিকগুলো সংশোধন হয়েই যেন আগামী অর্থবছরের বাজেট সংসদে পাশ হয়।  

৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়

Zobayerসিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অর্থনীতি বিভাগের তরুণ প্রভাষক যোবায়ের আহমদ নিজের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা অর্জন করা অনেক বেশি কঠিন হবে। কারণ, গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ভাল অবস্থায় আছে, পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সফল। তারপরও ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে বলা যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতিটা বড় বাধা হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া আমাদের বাজেট বিশ্লেষণে অনেক সময় অর্থনীতি বহির্ভূত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যেমন, এ বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিকূলে কাজ করতে পারে। এ অবস্থায় কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। ’
 
তিনি আরো বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নে আমরা সবসময়ই শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারি না। এ থেকে আমাদের বেরিযয়ে আসতে হবে। প্রকল্প অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময় টাকা ছাড় করতে দেরি হওয়ায় যথাসমযয়ে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয় না, তাছাড়া কিছু কিছু প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। তারপরও এডিপি বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। ’
 
যোবায়ের আহমদ বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক বাজেটের কথা অনেকদিন ধরে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে আমাদের বাজেট এখনো অংশগ্রহণমূলক হয়নি। কারণ, আমাদের বাজেট মূলত তৈরি করেন আমলারাই। বিশেষ করে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবানের ক্ষেত্রে এখনো জনগণের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ শুধু বাজেট পাশ করা আর বাজেট বক্তৃতার নামে রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মূল বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ণ ও পর্যবেক্ষণ এর ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ নেই। এমনকি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতেও বাজট প্রণয়নের আগে বা পরে আলোচনা হয় না। ’

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে নতুন কোনো উদ্যোগের কথা নেই

Romanতরুণ গবেষক ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার রোমান মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে নতুন কোনো উদ্যোগের কথা নেই। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। অথচ আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলাম যে, সরকার গবেষণা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রথমবারের মত গবেষণায় একটা থোক বরাদ্দ রাখবে। যার ফলে দেশীয় গবেষকরা বুক আরেকটু ফুলিয়ে গবেষণা করতে মন দেবেন। কিন্তু এটা আর হল কই?’

তিনি আরো বলেন, ‘গত কয়েক বছর গবেষণা করতে যেয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছি তাই একটু শেয়ার করবো। গত কয়েকদিন আমরা কয়েকজন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে (এনআইবি) গিয়েছিলাম। "বেসিক বায়োটেকনোলজি" শিরোনামে একটা ট্রেইনিং এ অংশ নিতে। সেখানকার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম ভালই হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার মনে কতগুলি প্রশ্নও জমা হয়েছে। এক. আমরা এনআইবিতে কেন ব্যাসিক ট্রেইনিং প্রোগ্রাম এ যাব? অ্যাডভান্স নয় কেন? দুই, এনআইবি কেন প্রতিষ্ঠার এক যুগ পরেও সারা বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজিস্টদের কাছে এখনও কেন ``কমন রিসার্চ হাব `` হিসেবে গড়ে উঠতে পারে নি?

রোমান মাহবুব বলেন, ‘এ প্রশ্ন গুলির উত্তরও পাওয়া গেছে। গত এক যুগে এনআইবি মাত্র আট জন বিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কোন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে বিজ্ঞানীরাই প্রকৌশলী, উন্নয়ন কর্মকর্তা, মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে রাত দিন কাজ করছেন। ফলে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ল্যাব গুলি এমনিতেই পড়ে আছে। আমার একান্ত ইচ্ছা এনআইবিতে গবেষণা ভাল করে শুরু হোক। সেই সঙ্গে এনআইবি আরেকটা বড় কাজ করবে, তারা এনআইবিকে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের জন্য গবেষণা সহায়তা দেবে। তার ফলে আমাদের মত বায়োটেকনোলজিস্টরা তাদের গবেষণা এগিয়ে নিতে পারবেন। এতে দেশেরই লাভ। ’

বাজেট বিনিয়োগ বান্ধব নয়

Shorifসিলেটের শরীফ উদ্দিন তার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগবান্ধব নয়। এমন কি এতে দারিদ্রদূরীকরণের যথেষ্ট উপাদান নেই। তবে এতে কয়েকটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ব্যাংক লোনের উপর নির্ভর করবে। এটি  মূল্যস্ফীতির উপর চাপ বাড়াবে। দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ব্যক্তি বিশেষের বিনিয়োগ কমে যাবে। জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। ’
 
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন অর্জিত সমুদ্র সীমার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এই নতুন সীমার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটা সংসদীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কৃষি পণ্য, উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, নিউজপ্রিন্ট কাগজের কাঁচামালের উপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া ভাল লক্ষণ। সিগারেটের উপর আরো বেশি কর আরোপ করা উচিত। বিলাস দ্রব্যে কর বৃদ্ধি করা খুব ভাল পদক্ষেপ। ’

ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

Salmaঅর্থনীতির ছাত্রী উম্মে সালমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন অর্থ বছরের বাজেট মানেই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়া। এটি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৩ হাজার ৩০২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধ বাবদ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ২১ হাজার ৬০৮ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ শোধের জন্য ১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। বাজেটের ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘এবার কৃষিখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়া স্বত্ত্বেও প্রতিবছরই কৃষিখাতে বরাদ্দের পরিমাণ কমছে। একই ব্যাপার শিক্ষাক্ষেত্রেও। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। যা ২০০৮-০৯ সালে ছিলো ১০ দশকি ৫ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কৃষি বা শিক্ষাখাতে বছর বছর বরাদ্দ কমলেও, বাড়ছে সামরিক খাতের বরাদ্দ। এছাড়াও নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরির যথাযথ দিক নির্দেশনা না থাকায় আমরা হতাশ!  তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটি প্রশংসা পাবার যোগ্য!’

অধিক ব্যাংকঋণ তারল্য সংঙ্কট সৃষ্টি করবে

shoyebবাজেট প্রতিক্রিয়া অর্থনীতির ছাত্র মোহাম্মদ শোয়াইব বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ৩শ’ ৯৮ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য। বাকি ২৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন দেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। এতে তারল্য সংঙ্কট দেখা দেবে। শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রায় সব ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি পাবে। যা প্রত্যাশিত নয়। আমি মনে করি, উচ্চ হারের এই কর আরোপ রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত করবে। কারণ, অনেকে নানাভাবে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে। সত্যিকার অর্থে এই বড় বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ দ্রব্যে দাম আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেক কম হলে, এটি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সত্যি দু:খজনক। যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেন, এ পদক্ষেপ তাদের জন্য একপ্রকার অবিচার। ’

প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ভাল হয়েছে

sayeeda-jahanবাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে অর্থনীতির ছাত্রী সাঈদা জাহান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ভাল হয়েছে। তবে সরকারের জন্য এ বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশসনিকভাবে দক্ষ না হলে এই সুন্দর বাজেট খাতা কলমে থেকে যাবে। বছর শেষে দেখা যাবে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। একটা বিষয় খুব আশ্চর্যে যে, সরকার মূল্যস্ফীতি ৭ দশকি ৫ এ রাখতে চায়। আবার তৈরি পোষাক থেকে শুরু করে খাবার, নৈত্য প্রয়োজনী দ্রব্য যেমন সাবান সবকিছুর দাম বাড়িয়েছেন। সামনে রোজা। নিশ্চিতভাবে সবকিছুর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি না হলে, একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়বে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘মোবাইলের ব্যবহারের উপর উৎস কর আরোপ করে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা আরো বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য যাদের আয় বেশি তাদের কাছ থেকে বেশি আয়কর আদায় করা উচিত। সিগারেট, এসি যে গুলো উচ্চ আয়ের মানুষ ব্যবহার করে সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধি ভাল পদক্ষেপ। সরকারের বিভিন্ন রকম ঋণের সুদের হার অনেক বেড়ে যাচ্ছে। নূন্যতম আয়কর ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়কর মুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। এটাও বাড়ানো উচিত। মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঔষধের দাম কমানো হলেও বাড়ানো হয়েছে ফল, হিমায়িত মাছ, মাংস, তৈরি পোষাক ইত্যাদির দাম। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি হচ্ছে না। এই মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে দিচ্ছে। এতে জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে। ’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি

afsaruzzaman-nadimপ্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফসারুজ্জামান নাদিম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের উপর নির্ভরতা তারল্য সঙ্কটের সৃষ্টি করবে। এতে বিনিয়োগ কমে যাবে। আর বিনিয়োগ কমে গেলে প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্য মাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। বাজেটে ৫২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলা হচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপ কতটুকু সফল হয়, এটা দেখার বিষয়। রপ্তানি খাতে উৎসকর বাড়িয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। আয়কর মুক্ত আয়সীমা দুই লাখে রাখা উচিত ছিল। কারণ, এখন মূল্যস্ফীতি খুব বেশি। করের নিম্নসীমা ৩ হাজার টাকা করা ঠিক হয়নি। কৃষিখাতে র্ভতুকি কমানো, মোবাইল কলে উৎসকর বসানো ঠিক হয়নি। তবে বিদেশি পণ্যে কর বৃদ্ধি খুব ভাল পদক্ষেপ। এতে দেশি ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ সহজ হবে।

সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা অনেক বেশি

Tasnim-chy-lubabaসিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী তাসনিম চৌধুরী লুবাবা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বাজেটে অনেক বেশি ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। বাজেটের আকার অনেক বড়। তাই দেশের সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝাও অনেক বেশি। দেশের কৃষক শ্রমিক কেউ করের বাইরে না। সাধারণের এই করের টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য কর বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের উপর আরো বেশি কর চাপানো হয়েছে। দ্রব্যমূল কমানোর ব্যাপারে এ বাজেটে বিশেষ কিছু বলা হয়নি। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হবে এতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংঙ্কট দেখা দিতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্র্যৎ ও জ্বালানি খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া ইতিবাচক। এতে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। ’

সরকারকে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে

Shahinul-Islamবাজেট প্রতিক্রিয়া শাহীনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা অনেক বড় বাজেট। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন বছরের প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে প্রচুর বাজেট ঘাটতি রয়েছে। যা পূরণে সরকার ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করবে। এতে ব্যাংকে তারল্য সংঙ্কট দেখা দেবে। ফলে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ পাবেন না। তাই বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে।


বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির রূপরেখা নেই

niluনতুন বছরের বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে দিয়ে সিলেট এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফারজানা হক নিলু বাংলানিউজকে বলেন, ‘৭ জুন অর্থমন্ত্রী ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন তাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই। এতে আমরা তরুণরা অনেকটা হতাশ হয়েছি। কারণ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সরকারের বিনিয়োগের ফলে দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ অধিকহারে বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বিনিয়োগের ফলে কর্মক্ষম নারীর সংখ্যা বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরেষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এতে সর্বসাকুল্যে দেশে কাজ করতে ইচ্ছুক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় দেশে বেকারত্বের হার অস্বাভাবিকভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বেকারত্বের ফলে দেশে যুব অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস-রাহাজানি, ইভটিজিংসহ বিভন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য বাজেটে বিনিয়োগ-বান্ধব প্যাকেজ প্রস্তাব রাখতে হবে। ’

ফারজানা হক নিলু বলেন, ‘প্রতিবছরই বাজেটের একটি সিংহভাগ চলে যায় বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোষ করতে। এজন্য সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে। বাজেটকে স্বণির্ভর করতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে দুর্নীতি বাড়বে। এটা নিয়ে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। সর্বোপারি কাগজে-কলমে না রেখে যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই বাজেটের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে। ’

ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর থেকে বিল প্রত্যাহার করতে হবে

Sabbir-Ahmedতথ্য প্রযুক্তির উপর আরো জোর দেওয়ার দাবি জানিয়ে তরুণ সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে গত বারের তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পরিমাণ ২৯৪ কোটি টাকা। তবে এই টাকা ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট খাতের কথা বলা হয়নি। এমনকি ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার যে দাবি ছিল। তার কোন সুনির্দিষ্ট বক্তব্য বাজেটে নেই। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্প্রসারণ বাধার মুখে পড়বে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ’

ঢাকাতে ৩টি ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি আইটি পার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে এ জন্য বরাদ্দ না থাকায় প্রযুক্তিপ্রেমীরা হতাশ হয়েছে। কম্পিউটারের দাম বাড়ায় তরুণ প্রজন্ম কম্পিউটার কেনার সামর্থ হারাবে। এটা তরুণদের জন্য হতাশার খবর বটে। কম্পিটারের দামের বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার। কেননা, কম্পিউটারের মাধ্যমে আউট সোর্সিং করে তরুণ প্রজন্মের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করার সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১২
টিএইচ/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।