সিলেট: ফুঁসছে চা শ্রমিকরা। বাগানে বাগানে বিরাজ করছে অসন্তোষ।
পরিস্থিতি যখন এই পর্যায়েÑতখন চা শ্রমিক নেতৃত্বে বিভাজন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিকপক্ষ বিভেদের কারণে চুক্তি নবায়ন থেকে বিরত রয়েছে। বিভক্ত শ্রমিক নেতৃত্বের কোন পক্ষের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হবে এমন প্রশ্ন রেখে কৌশলে মালিক পক্ষ ৭টাকা করে প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। তবে, বিভক্ত শ্রমিক নেতৃত্বের উভয় পক্ষই এই ঘোষণায় অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মূলতঃ সে সময়ই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ইউনিয়ন। তের মাসের মাথায় ‘চা শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটি’র ব্যানারে নির্বাচিত কমিটিকে হটানো হয়। এডহক কমিটি শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় লেবার হাউস নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে মামলা করে নির্বাচিত পক্ষ। এরপর থেকেই বিবদমান অবস্থায় দু’টি পক্ষ শ্রমিকদের বেতনবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
বিভক্তভাবে কর্মসূচি পালনের কারণে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না কোনো পক্ষই। বিশেষ করে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে উভয়পক্ষ সোচ্চার থাকলেও মামলা এবং বিভক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে আটকে আছে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি।
নিয়মানুযায়ী প্রতি দুই বছর পর পর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর চা শ্রমিকদের মজুরি সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা করা হয়। সেই অনুযায়ি গত বছরের ৩১ আগস্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
সিলেটের চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, প্রতি দুই বছর অন্তর চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা সংসদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে দেশের ১৬৫টি চা-বাগানে কর্মরত ৮৫ হাজার নিবন্ধিত ও প্রায় ১৫ হাজার অনিবন্ধিত শ্রমিকের মজুরি, রেশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মালিক পক্ষ বিভক্ত দুইপক্ষের মধ্যে কোনো পক্ষের সঙ্গেই চুক্তি করছে না এবং আদালতে মামলা চলমান থাকায় চুক্তি নবায়ন থেকে বিরত রয়েছে।
তবে, বাগান মালিকেরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৭টাকা করে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত সেপ্টেম্বর মাস থেকে তা কার্যকর হবে। মজুরি বৃদ্ধির টাকা বকেয়া দুই কিস্তিতে শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করা হবে এবং আগামী ১ জুলাই থেকে নিয়মিত ৫৫ টাকা মজুরি পাবে শ্রমিকরা।
মালিকপক্ষের এইহারে মজুরি বৃদ্ধিতে শ্রমিকসহ বিভক্ত নেতৃত্বের কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট নয়।
এদিকে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটির নেতৃত্বে ১৫০ টাকা মজুরি নির্ধারণসহ ১৮ দফা দাবিতে ২১ জুন থেকে দেশের সবগুলো বাগানে লাগাতার ধর্মঘট শুরুর যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তা স্থগিত করা হয়েছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটির আহ্বায়ক বিজয় বুনার্জি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর আশ্বাস এবং বাংলাদেশ চা সংসদ নেতৃবৃন্দের অনুরোধে এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া প্রদানে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে। দৈনিক ৭ টাকা মজুরি বৃদ্ধিকে মালিকপক্ষের কৌশল হিসেবে মনে করেন বিজয় বুনার্জি।
তবে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা করাসহ ২০ দফা দাবিতে যে আন্দোলন চলছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি জানান, আগামী মাসে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের নিয়ে মহাসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে, মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৬২৭ ঘণ্টা, ২০ জুন, ২০১২
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর