নান্দাইল (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অসংখ্য হাড় ভাঙা রোগীর চিকিৎসার নামে কবিরাজ আব্দুল হেকিম ও তার ছেলে জামাল উদ্দিন অপচিকিৎসা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের চরজিথর গ্রামের আব্দুল হেকিম ও তার ছেলে জামাল উদ্দিন অনেক দিন ধরে হাড় ভাঙা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এক যুগ ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় উপজেলা সদর পুরাতন বাজারে চেম্বার বসিয়ে প্রকাশ্যে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন বাবা আব্দুল হেকিম ও ছেলে জামাল উদ্দিন।
এ অপচিকিৎসার কারণে অসংখ্য মানুষ স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এককালের বিত্তহীন আব্দুল হেকিম এখন বিপুল সম্পদের মালিকও হয়েছেন এ অপচিকিৎসার টাকায়।
এ বিষয়ে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হলুদ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা সদরে এ অপচিকিৎসা অনেক দিন ধরেই করে আসছেন বাবা ও ছেলে। তিনি এ অপচিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করার দাবি জানান।
এদিকে, বাবা-ছেলের কবিরাজিতে পঙ্গুত্ব বরণকারীর এক বিক্ষুব্ধ অভিভাবক কাহেদ গ্রামের শহীদুল ইসলাম সুরুজ ১১ জুন থানায় অভিযোগ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কবিরাজের চেম্বারে গিয়ে তদন্ত করে চলে আসে। অভিযোকারী জানান, পুলিশ অভিযোগ পেয়েও রহস্যজনক কারণে ওই কবিরাজদের গ্রেফতার করেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলার কাহেদ গ্রামের সুরুজ আলী জানান, অনেক দিন চিকিৎসার পরও তার ১ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সুর্বণার (৬) হাত ভাঙার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং অবনতিই হয়েছে।
সেই সঙ্গে কবিরাজ তেলের মালিশ ও বিভিন্ন ওষুধের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সরেজমিন কবিরাজের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, ৭ থেকে ৮ জন হাড়ভাঙা রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন কবিরাজের চেম্বারে। তাদের মধ্যে কারো হাত-পা, আবার কারো কোমর ভাঙা।
এদের অনেকে জানান, তারা ৩/৪ মাস ধরে নিয়মিত কবিরাজের কাছে আসা-যাওয়া করছেন। এ সুযোগে চিকিৎসার জন্য বেশ খরচাপাতিও নিচ্ছেন কবিরাজ বাবা ও ছেলে।
এদিকে, কবিরাজ আব্দুল হেকিম হাড় ভাঙার চিকিৎসার বিষয়ে বাংলানিউজকে জানান, রোগীর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও মালিশের তেল ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক ও মালিশের তেলে কী কী উপাদান আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওস্তাদ তাকে উপাদান সর্ম্পকে কিছুই জানাননি। বাজার থেকে মালিশের তেল কিনে রোগীদের দিয়ে থাকেন তিনি।
হাড়ভাঙা চিকিৎসার সরকারি কোনো প্রশিক্ষণ বা সনদপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে এ ধরনের কিছুই নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, হাড় ভাঙায় এ ধরনের চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। চিকিৎসার নামে এ অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জীব কুমার চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, ন্যূনতম এমবিবিএস পাশের নিচে কেউ হাড় ভাঙা চিকিৎসা করতে পারেন না। কবিরাজির নামে অপচিকিৎসা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, এ ধরনের চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। তাছাড়া এর আইনগত কোনো বৈধতাও নেই।
এ অপচিকিৎসায় কোনো কোনো রোগী সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হাড়ভাঙা কবিরাজকে থানায় আসতে বলা হয়েছে।
এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: নাজিম উদ দৌলা সাদি, নিউজরুম এডিটর