ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মাইক্রোবায়াল মেটাজিনোমিক্সঃ সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

রোমান মাহবুব হাসান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৭, জুন ২৫, ২০১২
মাইক্রোবায়াল মেটাজিনোমিক্সঃ সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

২০১০ সালের ১৬ জুন জাতীয় সংসদে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স (জীবন নকশা) অবমুক্ত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আমাদের অনেক স্বপ্নের খোরাক জুগিয়েছে। তারপর থেকেই জিনোমিক্স আমাদের কাছে বেশ উৎসাহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তার ঠিক এক বছর পর ৭ আগস্ট পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং দলের প্রধান ড. মাকসুদুল আলম স্যার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমাদের স্বপ্নের ডানায় হাওয়া দিয়ে যান। তার ঠিক এক বছর পর ২১ জুন এলেন আরেক বিজ্ঞানী ড. মুনিরুল আলম স্যার। তিনি একাধারে আইসিডিডিআর’বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক। তিনি শোনালেন মেটাজিনোমিক্স কি, আর এর প্রায়োগিক দিক।

আমরা ড. আলম স্যারের এর কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম। স্যারের কাছ থেকে শোনা কথাগুলো নিচে সংক্ষপে উপস্থাপন করছি:

প্রকৃতিতে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি রকমের অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি) পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে  মাত্র কয়েক হাজার অণুজীবকে আমরা ল্যাবে কৃত্রিম পরিবেশে কালচার করতে পারি। বাকিরা ল্যাবের কৃত্রিম পরিবেশে সাড়া দেয় না। কিন্তু এরা আমাদের চারপাশের পরিবেশে আছে, সেখান থেকে তাদের পুষ্টি নিচ্ছে, বংশবৃদ্ধি করছে। তার মানে হল তারা পরিবেশেরই অংশ। তাদের কোনো কোনো প্রজাতি উপকার করছে আমাদের অজান্তে আবার কোনো কোনো প্রজাতি করছে অনেক ক্ষতি। তার মানে আমাদের আরও অনেক জানার বাকি আছে। সেটা জানতে হলে আমাদের মেটাজিনোমিক্সের আশ্রয় নিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে মেটাজিনোমিক্স কি? খুব সহজে পরিবেশের নমুনা (হতে পারে নদীর পানি, মাটি, বৃষ্টির পানি, কারখানার বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি) হতে ডিএনএ সংগ্রহ করে তার  সিকোয়েন্স বের করে বিশদ বিশ্লেষণ করার বিজ্ঞানই মেটাজিনোমিক্স। এই বিশ্লেষণ দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে করা যায়।

এক. পরিবেশে আমাদের প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট কোন জিনবাহী নতুন জিনোম আছে কী না?
দুই. মোট কতগুলি জিনোম আছে এবং এরা আমাদের জানা কোন জিনোমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

এখন কথা হচ্ছে আমরা কিভাবে মেটাজিনোমিক্স কে কাজে লাগাতে পারি? বর্তমানে শিল্প-কারখানার বর্জ্যরে জৈবিক শোধন (বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট) বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে মেটাজিনোমিক্স আরও ফলপ্রসূ করতে পারে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য থেকে নতুন কিছু জিনোম পেলে, এর মানে হল এই অণুজীবগুলি শিল্প-কারখানার বর্জ্য থেকে পুষ্টি নিতে পারে। শিল্প-কারখানার বর্জ্যকে শোধন করতে পারে। তখন এইসব জিনোমের নতুন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত প্রোটিনগুলো বাছাই করে খুবই কার্যকরগুলোকে ল্যাবের কৃত্রিম পরিবেশে সারা দেয় এমন ব্যাকটেরিয়াতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে ঢুকিয়ে দিলে এমন জিএম ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে যা  শিল্প-কারখানার বর্জ্যকে কার্যকরভাবে শোধন করতে পারবে। একইভাবে নতুন নতুন জিনোম দিয়ে চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে পারি। আর মেটাজিনোম বাখ্যা বিশ্লেষণ করার জন্য অনেক বইয়োইনফর্মেটিক্স সার্ভার আছে। সেগুলি দিয়ে খুব সহজেই নতুন মেটাজিনোমটির জিন ও প্রোটিনগুলির ধরন বোঝা যায়। সেটা যে কেউ চাইলেই করতে পারে। তবে তার জন্য মেটাজিনোম সিকোয়েন্স দরকার। সেই কাজটা আমাদের করে দিতে পারে আইসিডিডিআর’বি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি’র মত দেশীয় প্রতিষ্ঠান। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে সিকোয়েন্সিং করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই রয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেটাজিনোম ডাটাবেস তৈরি করে আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে। যার ভিত্তিতে পরবর্তী বায়োইনফর্মেটিক্সের কাজগুলো করা যেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলী কি আমাদের একটা মেটাজিনোম ডাটাবেস তৈরি করে দেবে?

নিচের সাইটগুলো থেকে এই কাজের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে-
1. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/genbank/metagenome
2.http://blast.ncbi.nlm.nih.gov/Blast.cgi
3.http://www.phylogeny.fr/
4.http://www.megasoftware.net/
5.http://www.ebi.ac.uk/Tools/msa/clustalw2/
6.http://web.expasy.org/protparam/
7.http://bp.nuap.nagoya-u.ac.jp/sosui/sosui_submit.html
8.http://www.hsls.pitt.edu/obrc/index.php?page=URL1118170797
9.http://www.genomesonline.org/cgi-bin/GOLD/index.cgi

ড. মুনিরুল আলম স্যারের বক্তব্যের উপর আলোচনায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. আবুল কালাম আজাদ স্যার জানালেন আরও মজার তথ্য। তিনি বলেন, “আমরা যখন গবেষণা শুরু করি তখন আমাদের শিক্ষকরা বলতেন আমরা নতুন যুগের শুরুতে দাঁড়িয়ে। আজকে এই মেটাজিনোমিক্স-এর কথা বলতেও আমাকে বলতে হচ্ছে আমরা নতুন যুগের শুরুতে দাঁড়িয়ে এবং আমাকে হয়ত ১০ বছর পর একই কথা বলতে হবে! কারণ প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়। আর তরুণরাই নতুন কিছু ভালভাবে করতে পারে”। তাহলে মেটাজিনোমিক্স নিয়ে আমাদের চিন্তার দুয়ার খুলে দিতে বাধা কোথায়?

লেখক: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।