ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

প্রদীপের নিচে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী

ফিরোজ আমিন সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০২, জুন ২৫, ২০১২
প্রদীপের নিচে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী

ঠাকুরগাঁও: প্রযুক্তির সংস্পর্শে দিনের পর দিন মানুষের গতি বৃদ্ধি হচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা।

কঠিন পরিণত হচ্ছে সহজে। সবকিছুই আজ হাতের মুঠোই চলে আসছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে, সেই সঙ্গে এগিয়ে চলছে দেশের মানুষও। কিন্তু সেই চলা থেকে আজও পিছিয়ে রয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ৩৫ হাজার মানুষ।

এখনও তাদের বসবাস প্রদীপের নিচে। দীর্ঘদিনেও সামান্যতম আলো পোঁছায়নি তাদের কাছে। আজও যেন তাদের বসবাস আদিম যুগের মতোই। পূর্বপুরুষদের মতোই তারা জীবনধারণ করছেন বন্যপ্রাণী শিকার করে।

আজও ছোঁয়া লাগেনি শিক্ষার আলো। নিজস্ব গতিতেই যেন চলছেন তারা। গুটিকয়েক পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শেষে চাকরিতে গেলেও, বেশিরভাগেই ডুবে আছেন অন্ধকারে।

সরেজমিন জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাঁওতাল, ওঁরাও, মুণ্ডা, পাহান ও মসহুর সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। যুগের পরিবর্তনে সমাজ বদলালেও, বদলায়নি তাদের জীবনধারা।

ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর এই মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ভোর হলেই তীর-ধনুক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শিকারের উদ্দেশে। বনজঙ্গল আর ক্ষেতখামারে ঘুরে তারা শিকার করেন পশুপাখি ও বন্যপ্রাণী।

সদর উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের ঢেনা মুরমু বাংলানিউজকে বলেন, “জমি-জিরাত নেই। তাই, জঙ্গলে ঘুরে ইঁদুর, বনবিড়াল, খরগোশ, বেজিসহ বিভিন্ন পাখপাখালি এবং কচু-ঘেচু সংগ্রহ করি। ”
 
সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন এভাবেই নির্বিচারে নিধন হচ্ছে এ এলাকার বন্যপ্রাণীগুলো। এদিকে, বন্যপ্রাণী শিকারের ফলে পরিবেশের ওপরও এর বির‍ূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।  

ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “বন্যপ্রাণী শিকার করা আইনত অপরাধ। তারপরও এই মানুষগুলো জীবনধারণের জন্য বণ্যপ্রাণী শিকার করছেন। ”

তিনি জানান, এই সম্প্রদায়ের মানুষদের সচেতন করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর এই মানুষগুলোকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে সরকারের বেশকিছু কর্মসূচি রয়েছে। ”

তিনি বলেন, “এই গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে আর ১০টি উন্নয়ন কর্মসূচির মতো রুটিন ওয়ার্ক করে ৩৫ হাজার মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আনা খুব একটা সহজ হবে না। ”

তবে, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি এই গোষ্ঠীকে আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন আদিবাসী নেতারা। তারা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে আদিবাসী পরিষদের সভাপতি সূর্য মুরমু ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল তিগ্যা বাংলানিউজকে বলেন, “চরম দরিদ্রতার কারণে এই জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে অবশেষে ধর্মান্তরিত হচ্ছে। এতেও তাদের ভাগ্য খুলছে না। ক্ষুধা মেটাতে তারা ঝোঁপজঙ্গলের প্রাণী শিকার করছে। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ ও ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।