ঢাকা: দিনে প্রচণ্ড গরমের পর রাতের মেঘলা আকাশ দেখলে সবার মনে প্রশান্তির ছাপ দেখা দেয়। এই ভেবে যে আজ রাতে বৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে, আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় পেয়ে যান, যারা ফুটপাতে থাকেন। এ অবস্থায় তারা বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন এই বলে যে, আকাশ যেন মেঘলাই থাকে। বৃষ্টি হয়ে মাটিতে না পড়ে। যত বৃষ্টি হওয়া দরকার তার সব যেন দিনের বেলায় হয়। কারণ বৃষ্টি হলে ফুটপাতে থাকা এই শ্রমজীবী মানুষগুলো একটুকু ঘুমাতে পারেন না।
তখন সবাই মিলে একসাঙ্গে বসে বসে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাত কাটাতে হয়। আবার সারারাত না ঘুমিয়ে পরের দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। বর্ষার মৌসুমে তাদের প্রায় প্রতিরাতই অতিক্রম করতে হয় বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে। এভাবে যুদ্ধ করতে করতে শ্রমজীবী মানুষগুলো এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আর জমদূত হয়ে বৃষ্টি না এলে, আসে পুলিশ। ঘুমের মধ্যেই লাঠি-পেটা করতে থাকে তারা। আর গালি দিতে দিতে বলতে থাকে এটা কি ঘুমের জায়গা। পুলিশের লাঠি-পেটা ভয়ে এই মানুষগুলো দৌঁড়ে পালায়। এভাবে বৃষ্টি আর পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করে রাত অতিক্রম করতে হয় এই শ্রমজীবীগুলোর।
সোমবার রাতে বাংলানিউজরে রাতের দল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফুটপাতের ছিন্নমূল মানুষের এই কষ্ট প্রত্যক্ষ করে।

জামালপুরের জুলু মিয়া। ঢাকায় রিকশা চালান। এক স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ের সংসার। গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে প্রায় ৯ বছর আগে ঢাকা আসেন। পরিবারসহ ঢাকাতেই থাকতেন। গত চার বছর আগে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসেন। কারণ বাসা ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় তার জন্য স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকা দুসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ঢাকা নতুন কোনো বাড়ি ভাড়া নেননি। রিকশা, ফুটপাতে, ট্রাফিক আইসল্যান্ড, মার্কেট বা দোকানের বারান্দা যেখানে সুযোগ পান সেখানেই ঘুমান।
তবে বর্ষকালে তাকে ঘুমানোর জন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কখন বৃষ্টি চলে আসে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। বৃষ্টি আসলে রিকশা, ফুটপাতে, ট্রাফিক আইসল্যান্ড, মাকের্ট বা দোকানের বারান্দা ঘুমানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে বসে বসে কাটাতে হয় তাকে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাত হলেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আল্লাহ, আজ রাতে যেন বৃষ্টি না হয়। একটুকু শান্তিতে যেন ঘুমাতে পারি। ’
এর সঙ্গে যোগ করে রংপুরের জামাল বলেন, ‘বৃষ্টি না এলে আসে পুলিশ। ঘুমের মধ্যেই লাঠিপেটা করে। তখন ঘুম ভেঙ্গে দৌঁড়ে পালাতে হয়। আমাদের মতো গরীবের জন্য কোনো শান্তি নাই। ’
পান্থপথ সিগন্যালের সামনে কথা হয় দিনমজুর রফিক মিয়ার সঙ্গে।

দোকান বা মার্কেটের বারান্দায় দাঁড়াতে পারেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মার্কেট বা দোকানের বারান্দায় দাঁড়াতে গেলে মার্কেটের দাঁড়োয়ান বা নৈশ্য প্রহরী দূর দূর করে তাড়িতে দেয়। ’
এই অবস্থায় শুধু জুলু মিয়া, জামাল বা রফিক মিয়ার নয়। এটা ঢাকার সব ফুটপাতবাসীর কষ্টের কথা। এভাবে ফুটপাতের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিন কষ্ট করে রাত অতিক্রম করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শামছুন নাহার শুচী বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাতে না ঘুমালে অনেক ক্লান্তি লাগবে, ওজন কমে যাবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, মাথা ব্যথা করবে। শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেবে। নিয়মিত কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। নিয়মিত ভাবে না ঘুমিয়ে কঠিন পরিশ্রম করলে এক সময় গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই কঠোর পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো উচিৎ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১২
টিএইচ/সম্পাদনা: শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর