ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

কাজ মানেই নিজেকে গড়া

দেলোয়ার হোসেন বাদল, স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৬, জুলাই ২, ২০১২
কাজ মানেই নিজেকে গড়া

আগামীকাল সকাল ৬ টায় আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিবেন কিন্তু… বার বার আম্মুকে বলে ঘুমুতে গেলাম। কারন ৯টায় আমার ইন্টারভিউ।

আমার শ্রদ্ধেয় বাবুল ভাই আমাকে বার বার সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, তুমি এমন জনের সাখে সাক্ষাৎ করতে যাবে যিনি প্রতিটি মুহুর্তকে অনেক মুল্য দেন। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ভালো কাজের স্বীকৃতি দেন। তিনি হলেন অনলাইন পত্রিকার জনক এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। অতএব ৯টা ০১ মিনিট হলে তুমি আর ওনার সাথে সাক্ষাত করতে যাবে না। এ কারণেই আম্মুকে বার বার মনে করিয়ে দেয়া যেন আমার দেরী হয়ে না যায়।

ইন্টারভিউ ছিল বসুন্ধরা সিটির ১৩তলা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের অফিসে। সারারাত টেনশনের  কারনে ঠিকমত ঘুম হয়নি তাই ভোর ৬টা বাজার আগেই জেগে উঠলাম। আম্মুতো ৬ টায় আমার রুমে এসে ভ‍ূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। কারন যেই ছেলেকে সকাল ১০টার আগে থালা পিটিয়ে ঘুম থেকে উঠানো যায়না সেই ছেলে আজ এত সকালে উঠে পড়ল আম্মু কিছতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। কি ব্যাপার জানতে চাইলে, পরে বলব বলে আজো বলা হয়নি। কারন লজ্জা পাচ্ছিলাম। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পরিক্ষা দিয়ে, পাশ করে এসেছি। তাহলে আজ এতটা ভয় কিসের? ভয় ছিল একজন অনলাইন পত্রিকার জনকের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা নিয়ে, ভয় ছিলো অনলাইন পত্রিকায় জীবনের প্রথম কাজ করা নিয়ে। আমি পারবোতো?

ঠিক সকাল ৮টা বাজার ৫ মিনিট আগে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের অফিসে উপস্থিত হলাম। মনে মনে ভাবলাম যাক বাচা গেল এডিটর ইন চিফের আগেই এসে পৌছেছি। অফিসের মূল দরজায় অর্ভ্যথনা টেবিলে কালো টাই পরা ভদ্রলোক (রাজিব) আমাকে নাম জিজ্ঞেস করলেন এবং সোফায় বসতে বললেন। আমি বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন এডিটর ইন চিফ আসবেন ৯টা প্রায় বেজে গেল। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না। হঠাৎ সেই টাই পরা ভদ্রলোক আমাকে বললেন আপনাকে স্যার ডাকছেন। আমিতো পুরো হতভম্ব। তা কি করে হয় ??? আমি তো এখানেই বসা ছিলাম, কোথাও যাইনি। কখন অফিসের ভিতরে গেলেন ? কিভাবে গেলেন?? নানা প্রশ্নে মাথা এলো মেলো হয়ে গেলো। আমি ভদ্রলোককে প্রশ্ন করলাম ভাই এডিটর ইন চিফ অফিসে ঢোকার কি অন্য কোন রাস্তা আছে? আমিতো এথানেই বসা ছিলাম কিন্তু উনি যে ঢুকলেন আমি দেখলাম না । ভদ্রলোক হেসে উত্তর দিলেন স্যার অফিসে ঢুকেছেন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কথাটি শুনে আমি শুধু অবাকই হয়নি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে এই ভেবে যিনি সময়কে এত মূল্যায়ন করেন তিনি মহান না হয়ে পারেন না।

এডিটর ইন চিফ এর রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলাম তিনি মুঠো ফোনে কথা বলছেন। আমকে ইশারা দিয়ে বসতে বললেন। মিনিট দুয়েক মুঠো ফোনের কথা শেষ করতেই আমার সাথে খুবই আন্তরিকতার সাখে কথা বললেন, অনলাইন পত্রিকায় কাজ করা সম্পর্কে বুঝালেন কারন এর আগে আমি পত্রিকায় কাজ করেছি, অনলাইন পত্রিকায় একবারেই অজানা এবং সবশেষে চাকরিতে যোগ দিতে বললেন। তখন নিজেকে মনে হলো আমি খুবই ভাগ্যবান এমন একজন মানুষের সাখে কাজ করতে যাচ্ছি যার কাছ থেকে শিক্ষার অনেক কিছু আছে।

দুই দিন সময় নিয়ে যেই দিন কাজে যোগ দিতে আসলাম সেই দিনের কথা আমি মরনের আগে ভুলতে চাই না। এডিটর ইন চিফ আমাকে নিউজরুম পুরোটা হেঁটে দেখালেন এবং কয়েক জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, শেষে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শুধু একটি কথাই বললেন ‘কাজ মানে নিজেকে গড়া, মন দিয়ে কাজ করবে, কখনো বিপথগামী হবে না। কথাটি আজো ও প্রতিটি মুহুর্তে  আমার কানে বাজে । সেই দিন থেকে শুরু করে বাংলানিউজে কিভাবে যে দুইটি বছর পার হলো বুঝতেই পারলাম না। সবার আন্তরিকতা এবং এডিটর ইন চিফ এর সময়ের মূল্যায়ন সম্পর্কে ঞ্জান দান, দায়িত্বশীলতা সময়কে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পরম শ্রদ্ধেয় আলমগীর ভাই আমি আপনাকে কথা দিতে পারি, আপনার এই মহান বানী এবং আপনার সাথে দুই বছরের পথ হেটে যা কিছু শিখেছি, আগামীতে যা শিখব তা চিরজীবন পাথেয় হয়ে থাকবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম তৃতীয় বর্ষে পা রাখলো। হাটি হাটি পা পা করে কখন যে বছর দুয়েক কেটে গেলো টেরই পেলাম না। তাই তৃতীয় বছরকে স্বাগত জানিয়ে নিজের কিছু ভালো লাগা স্মৃতি সবার সাথে ভাগাভাগি করলাম।

বাংলাদেশ সময় ১৩০০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।