ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নবাব সিরাজউদ্দৌলার আজ মৃত্যুবার্ষিকী

আবদুল হামিদ মাহবুব, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৫, জুলাই ৩, ২০১২
নবাব সিরাজউদ্দৌলার আজ মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ৩ জুলাই। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

তার মৃত্যু দিবসের দুইশত পঞ্চান্ন বছর এবার পেরুচ্ছে।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন (সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার) বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা তার ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভের কাছে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেন।

পশ্চিমবঙ্গের পলাশী প্রান্তরে নওয়াবের সেনাপতি মীর জাফর আলী খান, রাজবল্লভ, শওকত জঙ্গদের বেঈমানির কারণে তার বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ে মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। পলাশীর ভাগ্য বিপর্যয়ে হতভাগ্য ভারতবাসীর কপালে কলঙ্কের কালিমা লেপন হয়। বাংলাসহ ভারতে ঘটে ইংরেজ শক্তির অভ্যূদয়।

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এরপর পাটনা যাওয়ার পথে মীরজাফরের পুত্র মীরণের নির্দেশে তাকে ধরে এনে ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই করা হয়। নওয়াবকে নির্মমভাবে হত্যার পর তার লাশ হাতির পিঠে নিয়ে সমগ্র মুর্শিদাবাদ শহর প্রদক্ষিণ করা হয়।

মুর্শিদাবাদের জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার জন্যই মীরজাফর ও ক্লাইভ এই কর্ম করেছিল। পলাশীতে সিরাজউদ্দৌলা বাহিনীর পরাজয়ের পরপরই নওয়াবের বিশ্বাসঘাতকতাকারী মীর জাফরকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন নওয়াব মনোনীত করে। এরপর থেকে বাংলায় ইংরেজ আধিপত্যের বিস্তার শুরু হয়।

সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত ও নিহত হওয়ার পর ইংরেজরা বাংলার নওয়াবদের হাতের পুতুলে পরিণত করে এবং তারাই বাংলার প্রকৃত শাসকে পরিণত হয়।

নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার পূর্বে তার নানা আলীবর্দী খান বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার শৈশব ও শিক্ষা জীবন কেটেছে আলীবর্দী খানের কাছে থেকেই। নবাব আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে শাসনকাজ পরিচালনার কলাকৌশল ও অন্যান্য গুণাবলীতে পারদর্শী করে তোলেন।

নবাব আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে ঢাকায় নৌ-বাহিনীর দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৭৫২ সালের মে মাসে আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধীকার হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সময় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিও তাঁকে অভিনন্দন জানায়।

আলীবর্দী খান ৮০ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। সিরাজউদ্দৌলা মাতামহের মৃত্যুর পরই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার অধিকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনকাল ছিল ১৭৫৬ সালের এপ্রিল থেকে পলাশীর প্রান্তরে পরাজয় বরণের দিন ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই তাঁর জন্য বাংলার মসনদ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। এই অল্প দিনের শাসনকালে তাঁকে পরিবারের ভেতরের ও বাইরের শত্রুদের মোকাবেলা করতে হয়। কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ।

এই ঘরের শত্রুরাই ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পলাশীর ঘটনা ঘটায়। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কোন কারণই ছিলো না।

বিভিন্ন গ্রন্থের তথ্য ও তত্ত্ব মতে নবাব ও কোম্পানির সামরিক শক্তি ছিল- নবাব বাহিনীর অশ্বারোহী সৈন্য ১৫ হাজার, পদাতিক সৈন্য ৩৪ হাজার, কামান ৪০টি। অপরপক্ষে কোম্পানির সামরিক শক্তি হলো-  ইউরোপীয় ও দেশীয় সৈন্য ২৩০০, কামান ৮টি।

নবাবের পক্ষে অশ্বারোহীতে পদাতিক মিলে প্রায় অর্ধলক্ষ সেনা আর ৪০টি কামান এবং অভিজ্ঞ সেনানায়কবৃন্দ থাকার পরও প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলীর  ইশারায় সৈন্যরা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আর এরফল দাঁড়ালো নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে গিয়ে বন্দী হন। পরবর্তীতে মীর জাফর আলীর পুত্র মীর মীরনের নির্দেশে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়।

বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হবার দুইশত বছরের মাথায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই বাংলা আবারো স্বাধীন হলো। এই বাংলা, বাংলাদেশ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে কখনো ভুলবেনা। তাঁর মৃত্যু দিবসে আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।  

লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক
ahmahbub@gmail.com  

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১২
সম্পাদনা :সুকুমার সরকার,কো-অর্ডিনেশন এডিটর
kumar.sarkerbd@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।