ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

আনারস পাকাতে বিষাক্ত ইথোপেন!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৫, জুলাই ৪, ২০১২
আনারস পাকাতে বিষাক্ত ইথোপেন!

ময়মনসিংহ: আনারসের নাম শুনলেই এর রং, সুগন্ধ ও স্বাদের কারণে তৃপ্তিতে মন ভরে ওঠে। জাতীয় অর্থনীতিতেও সুস্বাদু এ ফলের গুরুত্ব অনেক।



কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমানে আনারস পাকানো ও রং করার জন্য দেদারসে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ইথোপেন। ইথোপেন ব্যবহারের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই চাষিরা আনারস বাজারজাত করতে পারছেন।

অথচ এ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে কিডনির রোগ, ক্যান্সার, লিভারের মারাত্মক ক্ষতিসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তাদের মতে, প্রতিদিন বাজার থেকে ইথোপেন দিয়ে পাকানো আনারস কিনে নিয়ে খাচ্ছেন ক্রেতারা। অথচ তারা জানেন না এ রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আনারস মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এজন্য ক্রেতা, বিক্রেতা ও চাষিদের সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।  

জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নরসিংদী, পঞ্চগড়, কুমিল্লা ও দিনাজপুরের মতো ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে ব্যাপক আনারস চাষ হয়।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফুলবাড়ীয়ায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে।

দেখা গেছে, আনারসের দাম বেশি পাওয়ার আশায় চাষিরা আনারস পাকানো ও রং করার কাজে ইথোপেন গ্রুপের রাইফেন নামক রাসায়নিক, পটাশ সার ও লবণ ব্যবহার করছেন।

স্থানীয় আনারস চাষিরা জানান, ১৮ মাস ও ৩ বছর পর আনারস গাছে ফল হয়। কিন্তু তারা ১৮ মাসে আগাম ফল পাওয়ার আশায় তাদের ক্ষেতে আনারসের বড় চারা রোপন করেন। আনারসের চারা সুস্থ ও সবল করার জন্য ফল আসার ২/৩ মাস আগে থেকেই অ্যাসিটিক অ্যাসিড ই-গোল্ড (পিজিআর) ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও ফল আসার ২ মাস পর ফল বড় করার জন্য অ্যাসিটিক ই-গোল্ড (পিজিআর) এবং ন্যাপথাইন অ্যাসিটিক ৪.৫ পার্সেন্ট এস.এল. ক্রপসকেয়ার প্ল্যান্ট হরমোন নামে এ রাসায়নিক দ্রব্য ১২ দিন পর পর স্প্রে-মেশিনের সাহায্যে আনারস ক্ষেতে স্প্রে করা হয়।

তারা আরও জানান, আনারস যখন রসালো হতে শুরু করে, ঠিক তখনি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রক্রিয়াটি শুরু করেন চাষিরা। ফল বিক্রির নির্ধারিত দিনের ২ থেকে ৩ দিন আগে বিষাক্ত ইথোপেন গ্রুপের ২৫ থেকে ৩০ মিলি গ্রাম রাইফেন, ২শ গ্রাম পটাশ সার ও ২শ গ্রাম লবণ ১৬ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৬শ থেকে ৭শ গ্রাম আনারসে প্রয়োগ করা হয়।

সবুজ পাহাড়বেষ্টিত ফুলবাড়ীয়া উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুর ও রাঙ্গামাটিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আনারস চাষিরা ফল পাকানো ও রং করার জন্য তাদের ক্ষেতে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে রাইফেন দিচ্ছেন।

মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক কেন ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে সন্তোষপুর কান্দের বাজার এলাকার আনারস চাষি আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে জানান, রাইফেন, পটাশ সার ও লবণ মিশিয়ে স্প্রে না করলে ফল দেরিতে পাকে। আর ফলের রং না এলে ভালো দামও পাওয়া যায় না।

তিনি জানান, এ রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের ক্ষতি হয় কিনা তা তাদের জানা নেই।

আব্দুস সামাদ নামের অপর এক আনারস চাষি জানান, স্থানীয় কৃষি কার্যালয় বা এনজিও এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালালে ইথোপেনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে ফল পাকানো অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. হারুন আল মাকসুদ জানান, ইথোপেন দিয়ে পাকানো আনারস খাওয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেক মেডিক্যাল অফিসার কামরুল হাসান অপু বাংলানিউজকে বলেন, ইথোপেন দিয়ে পাকানো আনারস খেলে কিডনি ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাশার বলেন, ‘চাষিরা শুধু আনারস নয়, শাক-সবজিসহ সব ক্ষেতেই বিষাক্ত কীটনাশক ছিটালে আমাদের কিছুই করার নেই। ‘

তিনি বলেন, ‘তবে আমরা কৃষকদের রাসায়নিক দিয়ে ফল পাকানো এবং রং করাসহ শাকসবজিতে কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। ‘

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১২
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।