ঢাকা: সম্পূর্ণ শরীর অচল হওয়ার পরও এক পিণ্ড মাংসের মতো হু্ইল চেয়ারে বসেই তিনি অসীম এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার কথা জানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত এ বিজ্ঞানী আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম পুরোধা।
মোটরনিউরনে আক্রান্ত হকিং খুব দ্রুতই ভাব প্রকাশে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম হয়ে যাবেন এ আশঙ্কায় নতুন এ যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানী প্রফেসর ফিলিপ লো। এ যন্ত্রের সাহায্যে হকিংয়ের ভাবনাগুলো ভাষায় রূপান্তর করা যাবে।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী লো জানান, তিনি আশা করছেন অবশেষে হকিংয়ের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অনুরণন সনাক্ত করে মস্কিষ্কের ভাবনাগুলো ‘শব্দে’ রূপান্তরিত করা যাবে। বর্তমানে গালের পেশীর নড়াচড়া শব্দে রূপান্তর করার মাধ্যমে যোগাযোগ করেন হকিং।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে হকিংয়ের শরীরে জটিল মোটরনিউরন রোগ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে যেতে থাকে তার। ১৯৮০’র দশকের দিকে শুধু বুদ্ধাঙ্গুল নাড়ানোর ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে যার মাধ্যমে কম্পিউটারের কারসর নাড়িয়ে লিখতে পারতেন তিনি।
কিন্তু পরে এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। সব অঙ্গ অচল হয়ে যায়। এখন তার চশমার সঙ্গে এমন এক যন্ত্র বসিয়ে দেওয়া হয়েছে যা তার ডান গালের পেশীর নড়াচড়া সনাক্ত করে তা শব্দে রূপান্তরিত করে।
তবে এখন অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার গালের স্নায়ুগুলোও দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ কারণে এ বিস্ময়কর বিজ্ঞানীর চিন্তা-ভাবনাগুলো জানতে বিকল্প উপায় খুঁজতে হচ্ছে।
হকিং হয়ত খুব শিগগির গালের পেশীর নড়াচড়ার মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষমতাও হারাবেন- এ আশঙ্কা থেকেই এখন তার মস্তিষ্ক পড়ার মতো যন্ত্র উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে প্রফেসর লো কে তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করার অনুমতি দেন হকিং। এরপর সিলিকন ভ্যালির উদ্ভাবিত নিউরোভিজিলের উন্নত সংস্করণ আইব্রেইন যন্ত্রের সাহায্যে তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়।
প্রফেসর লো তার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে খুব শিগগির হকিংয়ের জন্মশহর ক্যামব্রিজে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। তবে ওই অনুষ্ঠানে স্টিফেন হকিং উপস্থিত থাকবেন না। যদিও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে তার আগ্রহের শেষ নেই।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে অসাধারণ কিছু কাজ করেছেন। মহাবিশ্ব সৃষ্টির অন্যতম তিনটি তত্ত্বের মধ্যে সবচে আলোচিত এবং নির্ভরযোগ্য তত্ত্ব ‘বিগব্যাংগ’ তিনিই তত্ত্বগতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মহাবিশ্বের রহস্যময় উপাদান ‘কৃষ্ণগহ্বর’ তত্ত্বকেও তিনি বলিষ্ঠ ভিত্তি দিয়েছেন। তার লেখা ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম’ বইটি সাধারণের কাছে অনেকটা দুর্বোধ্য ঠেকলেও বিজ্ঞানে আগ্রহী মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের মধ্যে এটি একটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর