ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চাটমোহরে বট-পাকুড়ের বিয়ে!

শাহীন রহমান ও শামীম হাসান মিলন, জেলা ও চাটমোহর প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২১, জুলাই ৮, ২০১২
চাটমোহরে বট-পাকুড়ের বিয়ে!

পাবনা-চাটমোহর: দেব-দেবীর আশীর্বাদ ও কাঙ্খিত সন্তান লাভের আশায় সনাতন (হিন্দু) ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘বট-পাকুড়’ গাছের বিয়ে দেওয়ার আদি প্রচলন রয়েছে। তবে এবার পাবনায় মুসলমান সম্প্রদায়ের দুই বন্ধু বট-পাকুড় গাছের মধ্যে বিয়ের আয়োজন করেছেন।

পাবনার চাটমোহরে এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

দু’জনই জানিয়েছেন তারা কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খায় নয় বরং নিজেদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে দু’টি গাছের বিয়ের আয়োজন করেছেন।

গত শনিবার রাতে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের কুমারগাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের শুকুর আলী ও মহরম মোল্লা এই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন।

গ্রামের সরকারি রাস্তার পাশে পরস্পর সংযুক্ত দু’টি গাছের মধ্যে ‘পাকুড়’ গাছকে বর এবং ‘বট’ গাছকে কনে সাজিয়ে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছিলো উৎসবের আমেজ।

এ বিয়েতে কনের (বট) অভিভাবক ছিলেন মহরম মোল্লা আর বরের (পাকুড়) অভিভাবক ছিলেন শুকুর আলী।

মুসিলম সম্প্রদায়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মতো ওই গাছ জুটির বিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, বিয়েতে দাওয়াত করে নিজ গ্রামসহ আশাপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।

এতে আয়োজকদের খরচ পড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা।

শনিবার রাত ৮টার দিকে সরজমিনে কুমারগাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে বেশ ধুমধাম সহকারে চলমান ওই ‘বিয়ের’ আনুষ্ঠানিকতা চোখে পড়ে। চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। এলাকাবাসীর উপচেপড়া ভীড়। বর ও কনে পক্ষ এলাকায় মাইকিং করে বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রচার করেন বলে জানান স্থানীয়রা।

একই গ্রামের হযরত আলী (কাজীর ভূমিকায়) এলাকার নারী-পুরুষের সামনে মহরম মোল্লা ও শুকুর আলীর হাতে পান-সুপারী দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বট-পাকুড় গাছের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

পরে উপস্থিত কয়েক শত শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিয়ে আয়োজক কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান, আব্দুল হামিদ, নাজমুল হোসেন, ইয়াছিন আলী, মিন্টু মোল্লাসহিআশপাশের কুমারগাড়া, চরপাড়া, জালেশ্বর, রামনগর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশত উৎসুক জনতা উপস্থিত ছিলেন।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘বর-কনের’ পিতা শুকুর আলী ও মহরম মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গাছ দু’টি লাগিয়েছি। আমরা একদিন থাকবো না, কিন্তু গাছ দু’টি থাকবে বহু বছর-- আমাদের স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।

তারা আশা করেন, গাছের শীতল ছায়ায় এলাকাবাসী ও পথচারীরা বিশ্রাম নেবে। এতে তাদের স্মৃতি মানুষের মাঝে জাগরুক থাকবে।

এদিকে, মুসলামানদের মধ্যে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা পৌর সদরের চক চাতিয়ানী মোল্লাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মামুনুর রশিদ নুরী বাংলানিউজকে বলেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে এ কাজ (হিন্দুদের সংস্কৃতি মুসলমানদের অনুসরণ করা) সম্পূর্ণ হারাম। তারা যদি স্মৃতি রক্ষা করতে চান তাহলে অন্য কিছু করা যায়, এ ধরনের বিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। ”

অপরদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বট ও পাইকড় গাছের বিয়ে দেবার প্রচলন রয়েছে। সনাতনী ধর্ম বিশ্বাস মতে, শরৎ ঋতুতে হিন্দুদের দেবতা ‘মহাদেব’ পাইকড় গাছে এবং দেবী ‘মহামায়া’ বট গাছে এসে অবস্থান করেন। এসময় তাদের কৃপা লাভ ও কাঙ্খিত সন্তান লাভের আশায় পরস্পর সংযুক্ত বট ও পাইকড় গাছের বিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।