কম্পিউটার ব্যবহাকারীদের কাছে ‘মাউস’ জনপ্রিয়। মাউসকে বলা হয় কম্পিউটারের ‘চাকা’।
ডগলাসের জন্ম পোর্টল্যান্ডে ১৯২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। তিনি একাধারে গবেষক এবং উদ্ভাবক। পড়াশোনা করেছে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এই বিষয়ে তিনি পিএইচডি অর্জন করেছেন। তাকে বলা হয় ইন্টারনেট পাইওনিয়ার। একইসঙ্গে কম্পিউটার ইন্টারেকশনের জন্য দীর্ঘসময় গবেষণায় সময় ব্যয় করেছেন। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ‘মাউস’ আবিষ্কার করে ফেলেন ডগলাস।
ইউজার ইন্টারফেস নিয়ে কাজ শুরু করেন ষাটের দশকের মাঝামাঝি। ১৯৬৭ সালে তিনি মাউস তৈরি করে ফেলেন। ১৯৭০ সালে এই ডিভাইসটির উদ্ভাবক হিসেবে পেটেন্ট পান। তবে এর জন্য কোনো অর্থ তিনি নেননি। এ আবিষ্কার সর্বজনীন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাউস আবিষ্কার বিষয়ে ডগলাস বলেন, বিশাল একটি প্রজেক্টের খুবই ক্ষুদ্র আবিষ্কার হচ্ছে এই মাউস। কম্পিউটার যেখানে বিশ্বকে দখল করে নিয়েছে সেখানে মাউস তো স্বাভাবিকভাবেই ছোট। তবে মানুষের মানসিক দিক বিবেচনা করে মাউস আবিষ্কারের জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ অংক করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে কোনো ডিভাইস বা প্রযুক্তি ব্যবহার করবে না। তার জন্যে সহজ কিছু করতে হবে। তাই কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে মাউস তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলাম। তবে এজন্য গাণিতিক অনেক কাজ আমাদের করতে হয়েছে।
তবে এর নাম ‘মাউস’ কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে একবার ডগলাস উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলেন, বিষয়টি সত্যিই আমি জানি না। কেন এর নাম মাউস? তবে যতটুকু মনে পড়ে যখন বিল ইংলিশ নামে এক গবেষক হার্ডওয়্যার ডিজাইন করেন তখন ছোট্ট একটি ডিভাইসের সঙ্গে তারের সংযোগ সবার কাছে মাউসের (ইঁদুর) মতই লাগে। তাই হয়ত ল্যাবে মুখে মুখে রটে যাওয়া নামটাই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।
অথচ এই মাউসের আবিষ্কারক ডগলাস পড়াশোনা শেষ করে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। জীবিকার জন্য ভালো কোনো চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হতাশাই তার সঙ্গী হয়ে যায়। হুট করেই তার হাতে আসে ‘অ্যাস উই মে থিংক’ নামে একটি বই। যে বই পড়ার পর জীবনের উদ্দেশ্যই পাল্টে যেতে থাকে ডগলাসের। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন যতদিন বেঁচে থাকবেন এই পৃথিবীর মানুষের জন্যই কাজ করবেন। এমন কিছু করে যাবেন যা দিয়ে মানবজাতি একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে গবেষণা কাজে লিপ্ত হন ডগলাস।
তবে প্রযুক্তি নিয়ে কখনই ডগলাস সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এবিষয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, একদিন আসবে যখন প্রতিদিন প্রযুক্তি পাল্টাবে। কে ভেবেছিল মাউসকে পেছনে ফেলে বর্তমান সময়ে টাচস্ক্রিন মানুষের পছন্দের জায়গা নিয়ে যাবে। এখনতো ভয়েস দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। এভাবেই মানুষকে নিত্যনতুন জগতে নিয়ে যাবে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি এমন একটি বিষয় যা কখনও মানুষ কল্পনাও করেনি। প্রযুক্তি মানেই হচ্ছে নিত্য-নতুন বিষ্ময়। প্রযুক্তি শুধু বিষ্মিত করতে জানে। আর এই বিষ্ময়ই তরুণদের অনুপ্রাণিত করে নতুন কিছু করার।
এই অসাধারণ ব্যক্তিটিকে বলা হয়, ফাদার অব মাউস। যিনি এখনও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মগ্ন থাকেন গবেষণায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক