ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সঙ্কটাপন্ন ‘মায়াদ্বীপ’

তানভীর হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২৪, জুলাই ১০, ২০১২
সঙ্কটাপন্ন ‘মায়াদ্বীপ’

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল নুনেরটেক ‘মায়াদ্বীপ’র চারপাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধই হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এ চরের চারদিকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চরের গ্রামগুলো দিন দিন মেঘনায় বিলীন হতে চলেছে।



ইতোমধ্যে, চরের নদীর তীরবর্তী অনেক জায়গা মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ৩ বর্গ কিলোমিটারের চরটির ৯৫০ পরিবারের প্রায় ৮ হাজার অধিবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র আতঙ্ক আর শঙ্কা।

মায়াদ্বীপ, নুনেরটেক, হারিয়া, ভাটিবন্দর ও ভুরভুরিয়া গ্রামের লোকজনের অভিযোগ- ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বালুমহালের ইজারা পাওয়ায় তারা জোর খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দাপটশালী নেতাকর্মীরা নুনেরটেক মায়াদ্বীপের চারদিকে বিনা ইজারায় ড্রেজার বসিয়ে বালু কেটে নেওয়ার ফলে চরটির চারদিকে ভাঙন শুরু হয়েছে।

বর্তমানে জনৈক সেলিনা ইসলামের মালিকানাধীন ফোর পয়েন্ট কনস্ট্রাকটিং কোং লিমিটেড, ইকবাল মিয়ার মালিকানাধীন মাইক্রো ইন্টারন্যাশনাল, মাসুম ও হুমায়নের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে বেশ কিছুদিন ধরে নুনেরটেক বালুমহাল থেকে ২৫ থেকে ৩০টি শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। নদী তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

১ জুলাই সকালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় নুনেরটেক ও মায়াদ্বীপের গ্রামবাসীরা ড্রেজারে হামলা চালালে মিতু লোডিং ড্রেজার, এমভি হাজিনুর, দু’টি ড্রেজারসহ ৫ জনকে আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে জানায়। পরে তাদের সোনারগাঁও থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু চরবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ উৎকোচ গ্রহণ করে বালু সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিয়ে শুধু ড্রেজার দু’টি থানায় আটক রাখে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও এঘটনায় সোনারগাঁও থানায় কোনো মামলা হয়নি।

গত ৪ জুলাই অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা, বালুমহালের ইজারাদারদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মেঘনা ও সোনারগাঁও প্রসাশনের পক্ষ থেকে ইজারাভুক্ত নলচর ও ছোট দেওভোগ বালুমহালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দু’দিন পর থেকেই বালু সন্ত্রাসীরা প্রসাশনের নির্ধারণ করা সীমানা ভেঙে আবারও নদীর তীরবর্তী চর নুনেরটেক ও মায়াদ্বীপ ঘেঁষে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। এমনকী রাতের আঁধারে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বালু উত্তোলন চলছে।

সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ কারও পক্ষ নিচ্ছে না। পুলিশের বিরুদ্ধে করা ওই ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। মামলার বিষয়টি এসিল্যান্ড অফিসের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাগরিকা নাসরিন বাংলানিউজকে জানান, প্রায় সময়ই উপজেলা প্রশাসন সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ ড্রেজার ধরে জরিমানা করছে। সেখানে নিয়মিত অভিযান চলছে।

গ্রামের লোকজনদের অভিযোগ, বালু সন্ত্রাসীদের কবল থেকে গ্রাম রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন গ্রামের লোকজন। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চর নুনেরটেকের মায়াদ্বীপ নামে পরিচিত গুচ্ছগ্রাম-সবুজবাগ-রঘুনারচর, রামপ্রসাদের চর, ফরাদেরকান্দী ও সংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হলে ২০১০ সালের ১৭ অক্টোবর সে সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক সামছুর রহমান নুনেরটেক গ্রাম পরিদর্শন করেন।

ওইদিন এলাকার গণ্যমান্যদের সমন্বয়ে শাহেদ কায়েসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ‘মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রতিরোধ কমিটি’ নামে ২১ সদস্যের কমিটি গঠন করেন এবং জেলা প্রশাসক গ্রামবাসীকে যে কোনো উপায়ে বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

অভিযোগ রয়েছে, গত দেড় বছর ধরে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীরা বালু কেটে নিলেও প্রশাসন থেকে গ্রামের লোকজনদের তেমন কোনো সহায়তা করা হয়নি। বরং এ দেড় বছরে গ্রামের লোকজনদের ওপর কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার হোমনা, সোনারগাঁও থানায় গ্রামের শত শত লোকের নামে বালু সন্ত্রাসীরা কয়েকটি মামলা করে নানাভাবে হয়রানিও করে।

শাহেদ কায়েস অভিযোগ করে বলেন, “নুনেরটেক ও মায়াদ্বীপের লোকজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল উচ্চ আদালত নুনেরটেক ও আশপাশে বালু কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা অমান্য করেই চলছে বালু কাটা ও উত্তোলন। ”

বাংলাদেশ সময় : ২২১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।