ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নিউজার্সিতে মিলল হিটলার বাহিনীর মার্সিডিস

সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০২, জুলাই ১২, ২০১২
নিউজার্সিতে মিলল হিটলার বাহিনীর মার্সিডিস

এতোদিন সবার কাছে বিষয়টি ছিল একেবারেই অজানা। তাই পুরোনো মডেলের এ কারটির দিকে কেউ তেমন একটা নজর দেননি।

বা বলা যায় আমলে আনেননি কেউ।

কিন্তু হালে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন কারটির দখল নিতে। যতো দামই হোক না কেন এ কারটি চাই- চাই। একবার বাগে পেলে হয়ে যাবেন খ্যাতনামা। বিশ্বজুড়ে সেলিব্রেটির খাতায় উঠে যাবে নাম । সবাই চাইছেন এ নাম কুড়াতে। তাই কারটি নিয়ে এতো কাড়াকাড়ি।

নিউজার্সির ফ্রেড ডায়াবেস অনেকটা অনিচ্ছায় বশেই এক লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারে কিনেছিলেন পুরনো মার্সিডিজ গাড়িটি। কেনার পর তার মন খারাপ ছিল গাড়ি কিনে ঠকেছেন- এই ভেবে। কিন্তু যেই না তার আসল ইতিহাস জানতে পেরেছেন। তাই এখন আর  দ্বিগুণ দাম পেলেও গাড়িটি আর বেচবেন না ।

কারণ মার্সিডিজ কোম্পানি গাড়িটির মডেল নম্বর শুনে জানিয়েছে, ‘দ্যাট’স হিটলার’স কার। ’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটা নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কিনা গাড়িটি জার্মান একনায়কতন্ত্রী নেতা অ্যাডলফ হিটলারের।

খোদ হিটলারের নির্দেশে নাৎসি বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছিল এই বিশেষ ‘মার্সিডিজ ৩২০ ক্যাব্রিওলেট ডি’ মডেলের গাড়ি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে সীমিত সংস্করণে গাড়িটির মাত্র আটটি মডেল বানিয়েছিল মার্সিডিজ কোম্পানি। তারই একটি এখন ফ্রেডের মালিকানাধীনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টা ছিল বিশ্ব জুড়ে হাহাকারে ভরা। বিশ্বজুড়ে মন্দা। খাদ্যাভাবে মানুষ দেদারছে মারা যাচ্ছে। বোমা ঘায়ে পৃথিবী ক্ষতবিক্ষত। রক্ত ঝড়ছে অবিরত। তার মাঝে বিশ্ব জয়ে বিভোর একনায়কচারি অ্যাডলফ হিটলার।
ওই সময় চার চাকাওয়ালা গাড়িগুলোর দরজা থাকত   দু’টো করে। শুধু নাৎসি নেতা হিটলারের অর্ডারেই চার দরজাবিশিষ্ট গাড়ি বানিয়েছিল মার্সিডিজ। সীমিত সংস্করণে সেই গাড়ির সংখ্যা ছিল মাত্র আটটি।

কারণ নাৎসি কর্তাদের জন্য ওই আটটি গাড়িরই অর্ডার দিয়েছিল হিটলার। নাৎসিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি বলে গাড়ির হেডলাইন দুটির মাঝখানে মার্সিডিজের কোম্পানির লোগোর পাশাপাশি পরিচিতির জন্যই লাগানো হয়েছিল নাৎসি পতাকার ধাতব সংস্করণও।

বেশ কয়েক যুগের ধাপে এগিয়ে থাকা গাড়িটির মডেল দেখে সে জন্যই বেকূপ বনে গিয়েছিলেন গাড়ির এখনকার গর্বিত মালিক ফ্রেড। আর সে কারেণেই দালাল জেনপ টান্সারকে বলেছিলেন গাড়িটি কিনে তিনি দারেুণভাবে ঠকে গিয়েছেন। গাড়িটি নকল।

অর্থাৎ গাড়িটি সাম্প্রতিককালে তৈরি। ফ্রেডের কথা শুনে গাড়িটি নিজের গ্যারেজে নিয়েও আসেন জেনপ। ঠিক করেন গাড়িটিকে সারিয়ে বেঁচে দেবেন অন্য কারও কাছে।

সেই মতো কিছু খারাপ হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশের বিকল্প খুঁজতে ফোন করেন মার্সিডিজের দফতরে। আর তারপরেই খুলে যায় আসল রহস্য। জানতে পারেন এই অভিনব তথ্য।

কিন্তু, গাড়িটির ঐতিহাসিক মূল্য জানার সঙ্গে সঙ্গেই মাথা ঘুরে যায় তার। গাড়িটির মালিক হতে জেনপের কাছে পৌঁছে যান ফ্রেড। জেনপ গাড়িটির জন্য বেশি দাম দিতে চাইলেও গাড়িটি বেচতে রাজি হননি ফ্রেড।

মার্সিডিজ সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে, হিটলার নিজে কখনও এ গাড়িটি চড়েননি। তিনি সওয়ারি হতেন সে যুগে মার্সিডিজের সবচেয়ে উন্নত মডেল ‘মার্সিডিজ ৭৭’ গাড়িটিতে।

হিটলারের অর্ডার মোতাবেক ৩২০ মডেলটি নিউজার্সিতে আনা হয়েছিল চিকাগো হয়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় আগে। দীর্ঘ ব্যবধানে এক মার্কিন নাবিকের বাড়ির অব্যবহৃত অংশে পড়েছিল কালো রং করা গাড়িটি। ঘসে তুলে দেওয়া হয়েছিল নাৎসির পাতাকা দু’টিও। তার নাতির থেকেই গাড়িটি কেনেন ফ্রেড।

এর থেকেই ফ্রেডের নাম এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৪৫ ঘন্টা, জুলাই ১২, ২০১২
সম্পাদনা : এসএস
kumar.sarkerbd@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।