নোয়াখালী: হুমকির মুখে নোয়াখালী সোনাইমুড়ী উপজেলার ৩শ বছরের মুঘল স্থাপত্য ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদ।
দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে ৩শ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদের গায়ে সংস্কারের প্রলেপ পড়ে ১৭৭ বছর পর অর্থাৎ ১৯০৯ সাল আগে।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটি সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই মসজিদের দক্ষিণ পাশের গম্বুজ চুইয়ে পানি এর ভেতরে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে নামাজ পড়তে যেমন মুসল্লীদের সমস্যা হচ্ছে তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে এর ইতিহাস।
১৭৪১ সালে মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ’র রাজত্বকালে তার নির্দেশে ও অর্থে মিয়া আম্বরের সহযোগিতায় জমিদার আমান উল্যাহ খান দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
জমিদার প্রথা উচ্ছেদের পর মসজিদের মোতাওয়ালী মৃত মুন্সী নাছির উদ্দিন ও তার ওয়ারিশদের কেউ শাহী জামে মসজিদের তত্ত্বাবধান করতে আসেননি।
এর আগে জমিদার আমলে ছনগাঁও বজরার পূর্বাংশ মসজিদের উন্নয়নকল্পে ওয়াকফ্ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর ওই ওয়াকফভুক্ত গ্রামগুলো সরকারি খাসজমি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
বর্তমানে জমিগুলো সরকারি খাসজমি হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকায় মসজিদ তার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে ওই জমিগুলো এলাকার কতিপয় ব্যক্তির দখলে রয়েছে।
এছাড়া মসজিদের মুসল্লীদের অজু, গোসলের জন্য ৩০ একর এলাকা জুড়ে বিরাট একটি দীঘি ছিল। বর্তমানে দীঘিটি ভরাট করে জমিতে পরিণত করার ফলে ছোট একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, বাদশাহ’র একান্ত আগ্রহে মক্কা শরীফের বাসিন্দা তৎকালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকী এ মসজিদের প্রথম ও প্রধান ইমামের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
শাহ আবু বকরের মৃত্যুর পর থেকে তার পরবর্তী পুরুষরা যোগ্যতার ভিত্তিতে আজ পর্যন্ত ওই মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বর্তমানে মসজিদটিতে সপ্তম ইমামের দায়িত্বে রয়েছেন হাছান সিদ্দিকী।
মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বজরায় আসেন এর সৌন্দর্য্য দেখার জন্য।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৮ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারি গেজেটে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে মোঘল স্থাপত্যকলায় নির্মিত এই মসজিদটির সৌন্দর্য্য অম্লান হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
একদিকে, সম্পত্তি বেদখল হওয়ায় মমজিদের নিজস্ব আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ৩শ বছরের ঐতিহাসিক মোঘল স্থাপত্য শৈলী বজরা শাহী মসজিদ।
মসজিদের সপ্তম ইমাম হাছান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, ঐতিহাসিক এ মসজিদে এখন আর মুসল্লিদের জন্য কোনো বিশ্রামাগার নেই। জমিদারের দানকৃত ২৭১ একর ৮১ শতাংশ জমির মধ্যে ২৫৯ একর ৪২ শতাংশ প্রজা বিলি দিয়ে ১২ একর ৩৯ শতাংশ জমি মসজিদের জন্য রাখা হলেও বর্তমানে মাত্র ১ একর ৬০ শতাংশ জমি মসজিদের আছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বাংলানিউজকে জানান, কথিত আছে এ মসজিদে কোনোকিছু মানত করলে সে আশা পূর্ণ হয়। এছাড়া মক্কার শেষ নবীর বংশধরদের তত্ত্বাবধানে এ মসজিদ থাকায় সেই সময় থেকে বিভিন্ন জায়গার মানুষ এখানে আসতো মানত করতে।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমান বেদখল হয়ে যাওয়া মসজিদের জমিগুলো উদ্ধার করে এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর