ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সীমার হাতে ল্যাপটপ

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৪, জুলাই ১৪, ২০১২
সীমার হাতে ল্যাপটপ

ঈশ্বরদী: সীমা রায়। গতবছর সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি পাস করে সে।

তাই সীমার হাতে নতুন ল্যাপটপ আর তার ঘরভর্তি মৌসুমি ফল। আর তা দেখে সুইপার কলোনির সবার চোখই যেন ছানাবড়া।  

হরিজন সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত এক সুইপারের বাড়িতে আম, কাঁঠালসহ হরেক রকম মৌসুমি ফলভর্তি পিকআপ ভ্যান আর নতুন ল্যাপটপ দেখে তাদের অবাক হওয়ারই কথা।

নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য হিসেবে আম-কাঁঠালসহ উচ্চমূল্যের মৌসুমি ফলের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ তাদের খুবই কম। আর ল্যাপটপ কেনা তো স্বপ্নেরও অতীত। কিন্তু সমাজের তথাকথিত ‘নিচুজাত’ বা ‘মেথর’ বলে অবজ্ঞার পাত্র পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সন্তানের হাতে ল্যাপটপ-- সেতো কল্পনাতেও আসে না।

সুইপার (পরিচ্ছন্নকর্মী) জালিম কৃষ্ণা রায় বাংলানিউজকে জানান, তার মেয়ে সীমার জন্য এসব পাঠিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। শুক্রবার ঈশ্বরদী শহরের রেলগেট এলাকার সুইপার কলোনিতে এ নিয়ে যেন আনন্দের সীমা ছিল না। কলোনির ছেলে-বুড়ো সবাই সীমাকে একনজর নতুন করে দেখতে ভিড় করে তাদের নতুন বাড়িতে (এই বাড়িটিও করে দিয়েছেন মন্ত্রী)।

ঈশ্বরদী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী সীমা রায় বাংলানিউজকে জানায়, একজন পরিচ্ছন্নকর্মীর মেয়ে হয়েও গত বছর আমি এসএসসি পাস করি। পরবর্তীতে এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। বর্তমান সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নজরে পড়ে ওই খবরটি।

মন্ত্রী তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সীমাকে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদীতে একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। সীমা কলেজে ভর্তির পর তার পড়ালেখার সব খরচ যোগানোর ঘোষণা দেন। এমনকি মাঝে-মধ্যে তিনি নিজেই সীমা ও তার বাবাকে ফোন করে খোঁজ-খবর নেন।

কয়েকদিন আগে মন্ত্রী সীমাকে ফোন করে মৌসুমি ফল খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। এরপরই তার বাড়িতে পাঠানো হয় ফল আর ল্যাপটপ।

বাংলানিউজকে সীমা জানায়, তাকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করে তার স্বপ্ন পূরণের সব দায়িত্ব নিয়েছেন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার জন্যও এখন থেকেই সীমার নামে সঞ্চয় গড়ে তুলছেন।

মন্ত্রীর পাঠানো পিকআপ ভ্যানে ২ ঝুড়ি আম, ১০টি কাঁঠাল, জাম-জামরুল, কলা, আনারস, বাঙ্গি, আপেল, কমলা, শশা, ডাব, বাতাবি লেবু, পেয়ারা, দুধ, ২ বস্তা চাল, আটা, ডাল এবং বিভিন্ন সবজিও ছিল।

সীমার বাবা এগুলো দেখিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে মহানুভব আখ্যায়িত করে বাংলানিউজকে বলেন, "সীমার জন্য সারা জীবনে আমার পক্ষে যা করা সম্ভব হতো না, মহানুভব মন্ত্রী তা করেছেন। "

সীমার বাবা আরও জানান, এত ফল তো তাদের পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। তাই, সুইপার কলোনিতে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে ভোগ দিয়ে সমাজের সবাইকে নিয়ে প্রসাদ বানিয়ে খাবেন তারা।

এ ব্যাপারে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, "সীমার মতো আরও অনেক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি নিভৃতে কিছু করার চেষ্টা করছি। "

তিনি বলেন, "আমি যখন মৌসুমী ফলসহ ভালো কোনো খাবার খাই, তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে সীমার মতো অবহেলিত শিশুদের মুখ। সীমাদের মতো মানুষকে আমার সীমিত সাধ্যের মধ্যে আর দশটা মানুষের মতো ন্যূনতম চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। "

উল্লেখ্য, ঈশ্বরদীর হরিজন পল্লী (মেথর পাড়া) থেকে সীমাই প্রথম মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরুনো একমাত্র মেয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।