ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

অনলাইনে অন্যরকম উদ্ভাবক

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৩, জুলাই ১৪, ২০১২
অনলাইনে অন্যরকম উদ্ভাবক

অনলাইনে বিশ্ব এগিয়ে চলছে দুরন্ত গতিতে। বর্তমান বিশ্বের মানুষ অনলাইনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন।

জ্ঞান অর্জন থেকে শুরু করে বন্ধুও পাওয়া যায় অনলাইনে। এজন্য অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তবে অনেকেই আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও চিন্তা করেন। ইন্টারেকটিভ কমিউনিকেশনের পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা এবং তথ্য উপাত্ত অনলাইন স্টোরে রেখে দেওয়া নিয়েও কাজ করেন।

স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য আজ এমনই দুই উদ্ভাবকদের গল্প তুলে ধরা হলো। যারা অনলাইনে যোগ করেছেন ভিন্ন মাত্রা।

পেন ড্রাইভ হারিয়ে উদ্ভাবক!

পকেটে পেন ড্রাইভ নিয়ে ঘুরছেন। হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন পেন ড্রাইভটি নেই। হয়ত মনের অজান্তেই কোথাও ফেলে এসেছেন। পেন ড্রাইভের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও হারিয়ে গেল। কিন্তু এর সমাধান নিয়ে ভাবেন কয়জন?

ড্রিও হাউসটন নামে এমআইটির এক শিক্ষার্থী এভাবেই পেন ড্রাইভ হারিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছিলেন বারবার । এ নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই। কি করে এমন বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়? ভাবতে ভাবতে বের করলেন ইন্টারনেট জগতে তথ্য রেখে দেওয়া যায়। তখন থেকেই ড্রপবক্সের কাজ শুরু করেন।    

 নতুন সাইট ড্রপবক্স তৈরি করে ফেলেন ২০০৬ সালের দিকে। শুরুতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এটি ব্যবহার করতেন। সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পরের বছর।

হাউসটনের জন্ম ১৯৮৩ সালের ম্যাসাচুসেটসে।   তিনি বক্সবোরো রিজিওনাল হাই স্কুলে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে।   সেখানেই পড়তে গিয়ে পরিচয় হয় অ্যারাশ ফেরদৌসির সঙ্গে। বন্ধুত্ব হয় ফেরদৌসির সঙ্গে এবং পরে এই বন্ধুর সঙ্গেই ড্রপবক্সের যাত্রা শুরু করেন।

হাউসটন ইন্টানেটে ব্যবসা শুরু করে খুব দ্রুত উপরে এসেছেন। বর্তমানে তিনি ড্রপবক্সের সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন। অনলাইনে প্রতিটি মানুষের তথ্য উপাত্ত অত্যন্ত নিরাপদভাবে যাতে থাকতে পারে সে বিষয় নিয়ে এখনো সোচ্চার থাকেন হাউসটন।

অনলাইনে বিনোদন ভাবনা

needhamঅনেকেই বলেন, যেদিন টেলিভিশন আবিষ্কৃত হয়েছে সেদিনই পৃথিবী বদলে গেছে। আবার কেউ কেউ বলেন, চলচ্চিত্রই পৃথিবী বদলে দিয়েছে। মোট কথা, মানুষের চোখের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল চলমান চিত্র। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসব কিছু থেকেই মানুষ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। কারণ একটাই। তা হলো সময়ের বড্ড অভাব। পছন্দের টিভি শো কিংবা সিনেমা দেখার সময় ব্যস্ত মানুষগুলো করতেই পারছে না। ব্যস্ত মানুষদের জন্য ইন্টারনেটই হলো প্রধান ভরসা। যেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো সময়েই তারা বিনোদন পেতে পারে। সেই বিনোদন জোগাতেই ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ তৈরি করেছেন কোল নিডহ্যাম।

নিডহ্যামের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরে। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন স্টোক পোর্টে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আগ্রহের শেষ ছিল না। এক সাক্ষাৎকারে নিডহ্যাম জানান, ‘যখন আমার ১২ বছর বয়স, সে সময় আমার ঘরে প্রথম কম্পিউটার আসে, যা আমাকে নতুন এক দিগন্তে নিয়ে যায়। অন্যদিকে আমি ছিলাম ভালো মুভির ভক্ত। আমি সব মুভির তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে পছন্দ করতাম, যা পরে ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল। ’

অনেকটা শখের বসেই ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ সাইটটি শুরু করেন তিনি। সেটা ১৯৮৭ সালের ঘটনা। সে সময় এর নাম ছিল ‘দোজ আইজ’।

নব্বইয়ের দিকে তিনি ‘ইউজনেট’ নামে একটি সফটওয়্যার ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন। যার মাধ্যমে সাইটের ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ছবির তথ্য কিংবা নাম দিয়ে সার্চ করতে পারবে। সেই সঙ্গে একটি দলও তিনি গড়ে তোলেন। সেই দলের প্রত্যেক সদস্য টিভি শো কিংবা চলচ্চিত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। তাঁরা এ কাজটি আনন্দের সঙ্গেই করে দেন। ছবির তথ্য যখন জমা পড়তে থাকে, তখন নিডহ্যাম নজর দেন সেই সময়ের ছবিতে অভিনয়শিল্পীদের দিকে। পরে প্রতিটি শিল্পীর তথ্যও অনলাইনে সংগ্রহের কাজ করতে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে নিডহ্যাম বলেন, ‘আমি ভাবলাম, আমার মতো অনেক পাগল আছেন, যারা চলচ্চিত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে এসব তথ্য দেখে আনন্দ পান। এই দুটি দলের মানুষদের একটি প্লাটফর্মে নিয়ে এলে মন্দ হয় না। সে ভাবনাই ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজকে সামনে এগিয়ে নিতে আমাকে উৎসাহী করে। ’

১৯৯৮ সালে বিশ্বখ্যাত অনলাইন লাইব্রেরি অ্যামাজন নিডহ্যামের সাইটটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। নিডহ্যাম এ প্রজেক্টকে আরো সম্প্রসারণ করার জন্য অ্যামাজনের হাতে ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ তুলে দেন। তখন থেকে আরো তথ্যবহুল সাইটে পরিণত হয়ে চলছে এই সাইটটি। বর্তমানে নিডহ্যাম অ্যামাজনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।