“আজি শ্রাবণ-ঘন-গহন-মোহে
গোপন তব চরণ ফেলে
নিশার মতো নীরব ওহে
সবার চিঠি এড়ায়ে এলে।
প্রভাত আজি মুদেছে আঁখি,
বাতাস বৃথা যেতেছে ডাকি,
নিলাজ নীল আকাশ ঢাকি
নিবিড় মেঘ কে দিল মেলে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাধারণ লেখনীতে শ্রাবণের এমন রূপ আঁকা হলেও কালের বিবর্তনে আবহাওয়ার পরিবর্তনে সে রূপ আজ অনেকটাই বিবর্ণ-মলিন। কালো মেঘে ঢেকে থাকাআকাম আর ঝুম বৃষ্টির ঘনঘটা খুব বেশি না থাকলেও প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মে বছর ঘুরে আবারও এসেছে শ্রাবণ।
শ্রাবণের প্রথম দিনে সোমবার সকালে বৃষ্টি এসে খানিকটা বদনাম ঘুচিয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র খরতাপ শ্রাবণের চিরচেনা রূপ যেন বুঝতেই দিচ্ছিল না-- তবু আজ পহেলা শ্রাবণ!
প্রকৃত অবয়বে ধরা না দিলেও বেতার-টেলিভিশন ও সাহিত্যসভার আড্ডা, গান আর আবৃত্তিতে শ্রাবণকে টিকিয়ে রাখবার চেষ্টা অবশ্য দৃশ্যমান! শ্রাবণের অঝোর বারিবর্ষণ না হলেও যেটুকু হয়েছে, তার পরশেই ফুটতে শুরু করেছে কদম, হিজল, কেয়া ও যুথিকা। ফোটার প্রতীক্ষায় শাপলা, পদ্ম ও নাম না জানা কত বনফুল।
আম, কাঁঠাল শেষ হয়ে আসলেও বাজারে উঠছে বর্ষার ফল আনারস, আমড়া, লটকন, পেয়ারা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, বিলিম্বি, বিলাতী গাব ইত্যাদি।
এই সময়ে আবহমান বাংলায় আমন ধান লাগানো, পাট জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানোর ব্যস্ততা লক্ষ করা যায়। চিরায়ত সে দৃশ্য খনার বচনে ফুটে ওঠেছে এভাবে, “পান পুঁতলে শ্রাবণে/খেয়ে না ফুরোয় বারণে”, “শ্রাবণের পুরো, ভাদ্রের বারো/ধান্য রোপণ যতো পারো”, “আষাঢ় কাড়ান নামকে/শ্রাবণে কাড়ান ধানকে” ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহমান বাংলার ঋতৃবৈচিত্র তাদের চিরচেনা রূপ হারাচ্ছে। শ্রাবণের এমন রূপ যেন তাই জানান দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ১৬ জুলাই, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর