বর্তমান সময়ে তরুণদের হাতে ক্যামেরা খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত সবাই সময় ধরে রাখায়।
তবে ডিজিটাল ক্যামেরার দিকে যুগকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিল পোলারয়েড প্রযুক্তি। এটিকে বলা হয় ইন্সট্যান্ট ফিল্ম। পোলারয়েড এমনই এক প্রযুক্তি যা ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে ফিল্ম থেকে ছবি স্বচ্ছ হয়ে বের হয়ে আসে। এই পোলারয়েড প্রযুক্তির আবিষ্কারক হচ্ছে এডউইন হার্বার্ট ল্যান্ড।
এডউইন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী, গবেষক এবং উদ্ভাবক। তিনিই প্রথম পোলারাইজিং লাইটের জন্য ফিলটার আবিষ্কার করেন। ১৯৪৮ সালে প্রযুক্তি জগতে এই আবিষ্কার সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ছবি তোলার মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ঝকঝকে ছবি ফিলটার হয়ে বের আসে।
এডউইনের জন্ম ১৯০৯ সালের ৭ মে। পড়াশোনা করেছেন নরউইচ ফ্রি একাডেমিতে। পরে রসায়নে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথম বছর পরেই তিনি হার্ভার্ডে পড়াশোনা ছেড়ে নিউইয়র্ক সিটিতে চলে যান। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, এডউইন পড়াশোনার গন্ডির ভেতর থাকতে পছন্দ করতেন না। তিনি নিত্যনতুন বিষয়ে শিখতে ও কাজ করতে পছন্দ করতেন। তাই নিউইয়র্ক সিটিতে গিয়ে তিনি স্বল্পমূল্যের ফিলটার নিয়ে কাজ শুরু করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে কাজ করার মতো গবেষণাগার না থাকায় এই কঠিন সিদ্ধান্ত তিনি নেন।
১৯৩২ সালের দিকে তার গবেষণা সাফল্যের মুখ দেখে। এরপর তিনি পড়ার জন্য হার্ভার্ডে ফিরে আসেন। কিন্তু তার আর কোনোভাবেই পড়াশোনা হয় না। পড়তে গিয়ে তিনি কোনো উৎসাহ পান না। সেমিস্টার শেষে দেখা যায় তিনি সব বিষয়ে ফেল করছেন। তাই তার আর পড়াশোনা হয়নি।
একই বছর এডউইন একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেন। হার্ভার্ডে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি গবেষণা শুরু করেন পোলারাইজিং টেকনোলজি নিয়ে। এরপর তিনি সানগ্ল¬াসের জন্য ফিলটার, ফটোগ্রাফিক ফিলটার তৈরি করে হার্ভার্ড শিক্ষকদের মন জয় করতে শুরু করেন।
পরে এই গবেষণাগারকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। কারণ তিনি ব্যবসা শুরু করতে চান। ১৯৩৭ সালে পোলারয়েড কর্পোরেশন নামে তিনি প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন। পোলারয়েড যার ট্রেডমার্ক হয়। শুরুতে তারা সানগ্লাস তৈরি ও বাজারজাতকরণ শুরু করে। পরে ১৯৪৭ সালে তার গবেষণায় আবিষ্কৃত ইন্সট্যান্ট ক্যামেরা বাজারে নিয়ে আসেন। যাকে সবাই তখন বলতো ল্যান্ড ক্যামেরা। মাত্র এক বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় এডউইন। সেই সঙ্গে ছবি তোলার বিষয়টিও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে তরুণদের মধ্যে।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এডউইন কালার ভিশন, থ্রিডি গ্লাস নিয়ে গবেষণা করে গেছেন। ছবির জগতকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেওয়া এডউইন মারা যান ৮১ বছর বয়সে ১৯৯১ সালের ১ মার্চ। এখনও তার বিভিন্ন নোট ও লেখালেখি নিয়ে হার্ভার্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক