রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মানদী। নদীর ওপারে ভগবানগোলা, লালগোলা, ডুমুরিয়া, চরকুঠিবাড়ি, আখেরিগঞ্জ, হনুমন্তনগর, রাধাকৃষ্ণপুর, বাঁশগড়া, হাসানপুর, কালমেঘা আরও কত জায়গা।
এসব জায়গা রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার অভ্যন্তরে। ভাবলাম, একবার মুর্শিদাবাদ জেলা দেখবো। ইচ্ছে ছিল বলেই মুর্শিদাবাদে এ যাবৎ ৫ বার বেড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে।
সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণ-সুবর্ণ ছিল মুর্শিদাবাদে। মুসলমান শাসনের সময়েও দীর্ঘদিন মুর্শিদাবাদ ছিল বাংলার রাজধানী।
১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ সুবেবাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে ভাগীরথীর পূর্ব তীরে অবস্থিত মুখসুদাবাদ গ্রামে নিয়ে আসেন। পরে তা হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ শহর। মুর্শিদকুলি খাঁর নাম অনুসারে ওই শহরের নাম হয় ‘মুর্শিদাবাদ’। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ হয় পৃথক জেলা। জেলাটি বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্গত।
মুর্শিদাবাদের উত্তরে মালদা জেলা ও গঙ্গা নদী। পূর্বে বাংলাদেশ, দক্ষিণে বর্ধমান ও নদীয়া জেলা। পশ্চিমে বীরভূম জেলা, এই জেলার আয়তন ৫, ৩২৪ বর্গ কিমি। জনসংখ্যা ৭১ লাখের কিছু বেশি (২০১১ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী)।
সদর দফতর- বহরমপুর। মহকুমা ৫টি। যথা- বহরমপুর সদর, লালবাগ, কান্দি, জঙ্গিপুর, ডোমকল। নদ-নদী- গঙ্গা, ভাগিরথী, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, জলঙ্গী। দর্শনীয় স্থান হলো- বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ মহাবিদ্যালয়, সৈদাবাদের আর্মেনিয়া গির্জা, দয়াময়ী মন্দির ও কালীবাড়ী।
কৃষ্ণঘাটায় রয়েছে মহারাজ নন্দকুমারের বাড়ি, কর্ণ-সুবর্ণে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ, কাশিমবাজারের রাজবাড়ি। মুর্শিদাবাদের দ্রষ্টব্যস্থান- কাটরা মসজিদ, জাহানকোষ কামান, ত্রিপলিয়া তোরণ, হাজারদুয়ারি, খোসবাগে নবাব আলীবর্দী খাঁ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি। নবাব সিরাজের হিরাঝিল প্রাসাদ, মোতিঝিল, সাগরদীঘি, কিরীটকনায় কিরীটেশ্বর মন্দির, বড়নগরে নাটোর রাজপরিবারের বিভিন্ন মন্দির।
কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৯৭ কিলোমিটার, বহরমপুর থেকে ১০ কিমিঃ আর পলাশী থেকে ৫৩ কিমিঃ দূরে এই মুর্শিদাবাদ। ট্রেন ও বাস দুইই যাচ্ছে পলাশী-বহরমপুর হয়ে। তবে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে ভাগিরথী এক্সপ্রেসে গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদে। শুনলাম মুর্শিদাবাদকে ওখানকার লোকজন বলে থাকে ‘লালবাগ’। এবারও হোটেল ইন্দ্রজিৎ-এ উঠে ভাবলাম, কালকে না হয় ফারাক্কা ব্যারেজ দেখবো।
বাস ধরে এলাম ফারাক্কা। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন, আর এক মুখ্য স্থপতি দেবেশ মুখার্জির নেতৃত্বে ভারতীয় কলাকুশলীদের শ্রমে রূপ পেয়েছে এই ফারাক্কা। এর উপরে রয়েছে দুটি ব্রিজ। একটি রেল, অপরটি সড়ক সেতু।
মালদা আর মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটিয়েছে এই ব্রিজ দুটি। এখানের ব্যারেজকে ঘিরে ছবির মত পটে আঁকা শহরও গড়ে উঠেছে ফারাক্কায়। ব্যারেজ ধরে হেঁটে চলছি। যে দিকে তাকাই তখনই মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে এখানের স্নিগ্ধ সমীরের পরশে।
দেখলাম, ব্যারেজের নীল জলে মাছের জলকেলি, সেও আর এক মনোহর দৃশ্য। ওখানেই পরিচয় হলো সুলতান নামের একজনের সঙ্গে। মুর্শিদাবাদ থেকে সে এসেছে ফারাক্কা দেখবার জন্য। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে সময় লাগেনি।
সুলতান জানালো- এই গঙ্গায় নৌকা বা ফেরি স্টিমারে উঠতে পারেন। শীতের দিনগুলোতে চড়–ইভাতিরও ধূম পড়ে এই ফারাক্কায়। ব্যারেজ থেকে ৩ কিমিঃ উত্তরে গুমানী নদী ও গঙ্গার সঙ্গমে এক দ্বীপাকার ভূমে নীলকুঠির ভগ্নাবশেষ রয়েছে।
সেখানে পার্ক হয়েছেÑ হরিণ না মিললেও নাম তার ‘ডিয়ার পার্ক’। গঙ্গার নাব্য বাড়াতে গিয়ে মাটি কাটতে আবিষ্কৃত হয়েছে আর এক হারানো অতীত। খননে মিলেছেÑ নানান মূর্তি, মৃৎপাত্র, টেরাকোটার মাতৃকামূর্তি, মুদ্রা, মোগল যুগের অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও নানান কিছু। শুনেছি, সুদূর অতীতকাল থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত ফারাক্কা ছিল সমৃদ্ধ এক নগরী। মোগলযুগে নাম ছিল এর ফারাক্কাবাদ।
সুলতান ও আমি ঘুরে ঘুরে দেখলাম ফারাক্কা ব্যারেজ। সন্ধ্যার আগেই আমরা মুর্শিদাবাদ ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। তবে সুলতান আমাকে জানালো, ইচ্ছে করলে ফারাক্কায় থাকতে পারেন। থাকারও নানান ব্যবস্থা আছে ফারাক্কায়। এই ব্যারেজ শহরে থাকার জন্য আবাসিক হোটেলও রয়েছে।
এক সকালে মুর্শিদাবাদ শহর দেখতে বের হলাম। পিছু পিছু হেঁটে আসলেন পঁচিশ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি বললেন, নাম আমার নুরুদ্দিন। গাইড হিসেবে কাজ করি ...।
জিজ্ঞেস করলাম মুর্শিদাবাদ ঘুরিয়ে দেখাতে কত নেবেন?
- দেড়শ’ টাকা দিলেই চলবে।
বললাম, দুপুরে খাওয়া পাবেন। তবে ১০০ টাকার বেশি দেবো না।
নুরুদ্দিন রাজি হয়ে গেলেন।
দু‘জনে পথ চলছি ...।
ওই যে দেখুন হাজার দুয়ারি। ১৮২৯ সালের ২৫ আগস্ট ভিত্তি স্থাপিত হয়। ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৩৭ সালে তদানীন্তন নবাব নাজিম হুমায়ূন বসবাসের জন্য ব্রিটিশ স্থপতি স্যার ডানকান ম্যাকলিয়ডের নকশায় ব্রিটিশরাজ তৈনি করান ইতালিয়ান শৈলীতে এই প্রাসাদটি।
আটটি গ্যালারিসহ ১১৪ ঘরের এই প্রাসাদের হাজারটি দরজা থেকে নাম হয়েছে হাজারদুয়ারি। হাজারদুয়ারি নবাব প্রাসাদ হলেও সেদিনের নবাব কিন্তু একে বয়কট করেন বাসগৃহরূপে । হাজারদুয়ারিতে এখন বসেছে মিউজিয়াম। রয়েছে কত কী।
নবাবদের ব্যবহৃত অসংখ্য জিনিসপত্রের প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। চাইনিজ পোর্সেলিন প্লেটগুলোও অভিনবত্বে ভরা। নবাবরা খেতেন এই প্লেটে। খাবারে বিষ থাকলে প্লেটটি ফেটে যেতো। মুর্শিদকুলি খাঁ থেকে সর্বশেষ নবাব- তৈলচিত্রে বংশপরম্পরা তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
নিচুতলায় রয়েছে অস্ত্রাগারে ২৭০০ অস্ত্রের সম্ভার। ওই যে দেখুন ... নবাবকে খুন করা মোহাম্মদী বেগের ছুরি, ওই যে নবাব সিরাজ ও আলীবর্দী খাঁর ব্যবহৃত তলোয়ার।
বারবার দেখেও যেন দেখে যাচ্ছি ...। দেখার ইচ্ছে, শখ কোনোটাই যে পূরণ হচ্ছে না। সোনা দিয়ে মোড়া কোরআন শরীফ, আবুল ফজলের লেখা আইন-ই-আকবরীর পাণ্ডুলিপি, নবাবী চিঠিপত্র সবই দেখে নিলাম।
হাজারদুয়ারি দেখার পরে প্রাসাদের সামনে দেখলাম- কারবালা থেকে আনা মাটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার তৈরি মদিনা মসজিদ, ঘড়িঘর, কামান ...।
কামানটি দেখিয়ে গাইড বললেন, ১৬৪৭ সালে জনার্দন কর্মকারের তৈরি ১৮ ফুট দীর্ঘ, ১৬ হাজার ৮৮০ পাউন্ডের কামান এটি। ১৮ সের বারুদ লাগতো একবার তোপ দাগতে। একদা কামানের বিকট আওয়াজে গর্ভবতী এক নারীর সন্তান প্রসব হওয়ায় নাম হয় এর ‘বাচ্চাওয়ালি কামান’।
ওই যে দেখেছেন- ‘ইমামবাড়া’। সিরাজের তৈরি দারুণ ইমামবাড়াটি ১৮৪৬ সালে ভস্মীভূত হলে ৭ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ১৮৪৮ সালে এটি তৈরি করান নবাব নাজিম মনসুর আলী। হাজারদুয়ারির পিছে দক্ষিণে যেতে রয়েছে নিউ প্যালেস। এর আরেকনাম ওয়াসেফ মঞ্জিল।
ওয়াসেফ মঞ্জিল দেখার পরে হাজারদুয়ারি থেকে ৩ কিমি উত্তরে মহিমাপুরে গিয়ে দেখলাম কুঠিবাড়ি। পরে গেলাম কাঠগোলায়। গাইড বললেন, এসব কিছুই ছিল জগৎশেঠের। পাঞ্জাব থেকে আসা যোধপুর নিবাসী জগৎশেঠ উপাধি ভূষিত মানিকচাঁদ-ফতে চাঁদদের কুঠিবাড়ি ঘেঁষে পথ গিয়েছে কাঠগোলার দিকে। কেবল উপাধিই নয় জগতের অন্যতম শেঠও ছিলেন এই জৈন পরিবার। জগৎশেঠের বিশাল সাম্রাজ্যের নিদর্শন এই কুঠিবাড়ি।
নসীপুর রাজপ্রাসাদ, মোহনদাসের আশ্রম, জাফরাগঞ্জ দেউড়ি, নিমকহারাম দেউড়ি দেখার পরে এলাম জাফরাগঞ্জ কবরস্থানে। দেখলাম, এখানে রয়েছে মীর জাফর ও তার বংশের অসংখ্য লোকের কবর। এখানে গেট বরাবর শেষ (পূর্ব) থেকে তৃতীয়ে শায়িত রয়েছে মীর জাফর। মীর জাফরের বিবি মনি বেগম, বিব্বু বেগমÑ এরাও শায়িত রয়েছেন এখানে। গাইড ছিল বলেই এসব দেখতে ও বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
মহিমাপুরে রয়েছে মুর্শিদকুলী খাঁন কন্যা আজিমউন্নিসার সমাধি। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কন্যাও সমাহিত হয়েছেন ১৭৩০ সালে সোপানতলে। এর একটু দূরে একসময়ে কাটরা বা বাজারঘাট ছিল অতীতে।
কাঠরার পথে রেললাইন পেরুতেই চোখে পড়লো ‘কদম শরীফ’। ওখানে গিয়ে শুনলাম অতীতে হজরত মোহাম্মদ (দ.)-এর পদচিহ্ন ছিল এখানে- যা আজ গৌড়ে দৃশ্যমান। মসজিদটি আজ পরিত্যক্ত হলেও এর গঠন নৈপুণ্য চলার পথে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এবার গাইডের সঙ্গে চলছি হাজারদুয়ারির ২ কিমি দক্ষিণে সদরঘাটে। পাশেই ভাগিরথী নদীÑ এই নদী পেরিয়ে ওপারে এসে একটি হোটেলে ঢুকে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলাম। মুরগির রান খেয়ে গাইড বেজায় খুশি।
রিকশায় উঠে এবার খোশবাগের দিকে যা”িছ। গাইড বললেন, এখান থেকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি ক্ষেত্র খোশবাগ প্রায় দেড় কিমি দূরে। খোশবাগ অর্থ তার আনন্দের বাগিচা। শান্ত স্নিগ্ধ সুমধুর পরিবেশে নবাব আলিবর্দী খাঁ, নবাব সিরাজ, বেগম লুৎফুননেছা ছাড়াও নবাব পরিবারের নানানজন চিরনিন্দ্রায় শায়িত রয়েছেন খোশবাগে।
এদিকে আমরা চলে এলাম খোশবাগে। ঘুরেফিরে কবর¯’ান দেখে নিলাম। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতেই গাইড বলতে শুরু করলেন- ওখানে আরও রয়েছে জাতীয় বিশ্বাসহন্তা ব্রিটিশের বিচারে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সেই দানশাহ ফকিরÑ যার সহায়তায় সিরাজ ধৃত হন রাজমহলে। একটু দূরে গেলে দেখতে পাবেন বর্গীর নেতা ভাস্কর পণ্ডিতের শিবমন্দির। রোশনীবাগ অর্থাৎ সুশোভিত উদ্যানের মাঝে ১৭৩০ সালে মসজিদ গড়েন নবাব আলীবর্দী খাঁ। ওখানে সমাহিত রয়েছেন সুজাউদ্দৌলা ছাড়াও নবাব পরিবারের বিভিন্নজন। এদিকে বিকেল হয়ে এলো। ফিরে এলাম হোটেলে।
সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদ রেলস্টেশনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওখানে বসেছিল ষোল বয়সী একটি ছেলে।
ওর পাশে গিয়ে বসলাম!
কী তোমার নাম?
একটু হেসে- সেলিম রেজা।
কোথায় যাবে?- ভগবানগোলায়। কিš‘ অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। ট্রেন যে আসছে না। ওর সঙ্গে বেশ আলাপ জমলো। বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ইন্দ্রজিৎ হোটেলে আছি- শুনে আমার প্রতি ওর কৌতূহলটা বেড়ে গেল।
বললাম, কালকে হোটেলে আসবে ...। পরদিন সেলিম রেজার সঙ্গে এলাম বহরমপুরের ব্যারাকের মাঠে। এখানেই ব্রিটিশ ভবনে বসেছে নানান সরকারি দফতর। সেলিম বললো, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শুরু হয় এই ব্যারাকের মাঠ থেকে। সেই স্মৃতিতে স্মারক হয়েছে, এটিও দেখে নিলাম।
পথে শিবমন্দির দেখা হলো। খাগড়াবাজারে এসে দেখি কাঁসার বাসন-কোশন। পছন্দ হলেও নিয়ে আসার কথা ভাবতে পারিনি। সঙ্গে করে নিয়ে আসা বড্ড কষ্ট হবেÑ এটাই ছিল প্রধান কারণ। সেলিম বললো, ওই যে দেখেন হাতির দাঁতের সামগ্রী। নিতে পারেন।
বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, দাম কতো?
উনি জানালেন, ৭০০ টাকা!
দামটা বেশি মনে হলো। তাই হাতির দাঁতের ওই মালাটি আর কেনা হলো না।
মুর্শিদাবাদ ফেরার পথে ফরাসডাঙ্গায় ফরাসিদের তৈরি গির্জা ও সমাধি দেখে নিলাম। কথায় কথায় সেলিম বললো, মুর্শিদাবাদ থেকে কয়েক মাইল দূরে আজিমগঞ্জ। চলুন কালকে ওখানে যাই।
সেলিমকে বললাম, কাল সকালে চলে এসো।
এবার ভ্রমণ আজিমগঞ্জের দিকে। খাগড়াঘাট রোড স্টেশন থেকে ট্রেনে এলাম আজিমগঞ্জ শহরে। ওখান থেকে গঙ্গার তীরে এসে দেখলাম একটি মন্দির। এর নাম বড়নগরের মন্দির।
ওখানে এসে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানলাম, ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নাটোরের রানি ভবানীর হাতে মন্দিরের পর মন্দির গড়ে ওঠে নাটোর রাজপরিবারের গঙ্গাবাস বড়নগরে।
বঙ্গেশ্বরীর ই”ছা ছিল কাশীধামের সমপর্যায়ে বড়নগরকে গড়ে তোলা। সামনে ভাগিরথীÑ ওপারে মুর্শিদাবাদ, সেকালে বড়নগরেও ছিল বিশাল গঞ্জ। এখানে আছে এখন মন্দির আর মন্দির। ওই যে মন্দিরটি দেখছেন, এর নাম এক বাংলা পঞ্চানন শিব।
শিব ঠাকুর এখানে মূর্তিতেÑ পাঁচটি আসন তার। সামনে এগোলেই দেখতে পাবেন চার বাংলা মন্দির। কিছুদূর যেতেই কয়েকজন কীর্তনিয়ার সঙ্গে দেখা।
ওদের কণ্ঠেÑ ঘণ্টা যখন উঠবে বেজে দেখবি সবাই আসবে সেজে/ এক সঙ্গে সব যাত্রী যত একই রাস্তা লবেই লবে/ নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে ...গানখানি শুনে শুধুই যে অবাক হয়ে রইলাম। হঠাৎ এক কীর্তনিয়া এসে গালে চুমা দিয়ে চলে গেল।
‘বাহ ওরাতো মজার লোক ...কথাটা বলে সেলিম হেসে উঠলো।
এভাবে সাঙ্গ হল নবাবী দর্শনÑ এবার মুর্শিদাবাদ ফিরে যাওয়ার পালা। সেলিম বললো, আপনাকে হোটেলে দিয়ে আসি। ওই রাত হোটেলে থেকে পরদিন সকালে ট্রেনে ফিরলাম কলকাতায়। ভাবলাম, রাজশাহীর পদ্মানদী পেরিয়ে মুর্শিদাবাদে এলে কতোই না ভালো লাগতো। সে সুযোগ এ জীবনে কী আর ঘটবে?
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৩ ঘন্টা, জুলাই ১৯, ২০১২
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর
kumar.sarkerbd@gmail.com