ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

তারা রাতের রাখাল

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:৪৭, জুলাই ২২, ২০১২
তারা রাতের রাখাল

ঢাকা: রাখাল নামটি আবহমান গ্রাম-বাংলার চির পরিচিত নাম। গবাদিপশুকে মাঠে ঘাস খাওয়ানোসহ প্রতিপালনের যাবতীয় দায়িত্ব পালনই তাদের কাজ।

অজঁপাড়াগাঁ’য়ের হলেও জনপ্রিয় চরিত্র ‘রাখাল’ নানারূপে অঙ্কিত হয়েছে প্রাচীন ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্য, সংগীত, এমনকি চলচ্চিত্রেও।

সাধারণত; রাখালরা কোনো বনের ধারে নির্জন মাঠে গরু-মহিষ চড়াবেন, এমনটাই জানে সবাই। তবে আধুনিক নাগরিক জীবনে খোদ রাজধানী ঢাকায় রাতের বেলায়ও দেখা মিলে রাখালদের। তবে তারা গোঠের রাখাল নন, রাতের রাখাল।

প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাতে বাংলানিউজের টিম খবর সংগ্রহে বের হলে দেখা মিলে ‘‘রাতের রাখালদের’’। সহকর্মী আলোকচিত্রী মোশাররফ হোসেনকে বললাম বাইক থামাতে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর। শহরের ব্যস্ত রাজপথ প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। মাঝে মধ্যে দু’একটি ট্রাক চলে যাচ্ছে সাই সাই করে। সংবাদ গুরুত্ব বুঝাতে মোশাররফকে বললাম, আমার পরিচিত একটি বয়ান ‘‘জীবনের ধন কিছুই যাবেনা ফেলা’’। (যদিও এটি আমার কথা নয়, কবির বাণী)

মোশাররফ বাইক থামিয়ে আমাকে নামিয়ে দিয়ে ছবি তুলতে এগিয়ে চললেন। ততক্ষণে আমি মিশে গেছি ‘‘রাখালদের দলে’’। এক রাখালকে বললাম আজ রাতে আপনাদের সঙ্গেই রাজপথে হাঁটবো, দিনে তো সে সুযোগ নেই।

হেঁটে চললাম রাখাল আর তাদের গরুর পালের সঙ্গে সমান্তরালে পা’ ফেলে। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বিজয় স্মরনীর মোড় পর্যন্ত। চলতে চলতে অনেক কথা হলো তাদের সঙ্গে। সেই সঙ্গে জানা হলো অনেক না জানা তথ্য।

রাখালদের সঙ্গে এই রাত-দুপুরে একাত্ম হয়ে হাঁটছি-এতে তারা প্রশ্নের জবাব দিলেন অনেকটা স্বাচ্ছন্দে, যতটা না আমি চাইলাম-তার চেয়েও বেশি।

কথা হচ্ছিল ষাটোর্ধ্ব রাখাল নুরুল ইসলামের সঙ্গে। বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার বন্যা গ্রামে। তবে গ্রাম থেকে এই ব্যস্ত শহরে পাড়ি জমিয়েছেন একযুগেরও বেশি সময় হবে। থাকছেন রাজধানী ঢাকার গাবতলী এলাকার একটি বস্তিতে।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিরাতে গাবতলীর গরুর হাট থেকে এক পাল গরু নিয়ে মহাখালি, ফার্মগেট, নিউমার্কেট ইত্যাদি বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দেন তিনি। একা নন, সঙ্গে থাকে আরও কয়েকজন । গাবতলী থেকে পুরো পথই হেঁটে গরুর পালকে সামলে নিয়ে আসতে হয়। প্রতি রাতের ট্রিপের জন্য একেক জন পান ৫শ’ টাকা করে। এখানে অবশ্য সংখ্যার বিচার করা হয় না। কেউ ২টি গরু আনলেও ৫শ’ পান আবার কেউ ১০টি আনলেও তাই।

নুরুল ইসলাম জানান, ‘‘এভাবে গরু আনার ক্ষেত্রে ভয়ও আছে। একবার ৭/৮ বছর আগে ডাকাতরা জোর করে আমাদের মেরে সব গরু ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তখন থেকে ভয়ে ভয়ে গরু আনি। ’’  

এক পর্যায়ে চোখে পড়লো, রাখালদের মোটা দড়িতে বাঁধা গরুর পালের বেশির ভাগই গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে চামড়া উঠে গেছে। গরুগুলো দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে না খেতে পেয়ে বড়ই নেতিয়ে পড়েছে। আর যেন হাঁটতে পারছে না।

মায়া হলো, শত হলেও বোবা প্রাণী! রাখালরা ব্যথিত হয়ে জানালো, ‘এত গরু ঠাঁসাঠাসি কইরা আনবার সময় অনিচ্ছাতেই ঘষা লাগে, চামড়া উইড্যা যায়। আমগোরও কষ্ট লাগে। কি করমু ভাই। ’’

এক রাখাল বললো ‘‘মহাখালী যাইয়াই খাওন দিমু’’।

রাখালদের বিদায় জানিয়ে ততক্ষণে আমাদের বাইক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অতিক্রম করছে। দূর থেকে পেছনে ফিরে দেখলাম অবলা গরুদের মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলছে রাতের রাখাল!

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১২
এআই
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।