ছোটবেলা থেকেই হুমায়ূন আহমেদের নাম শুনে আসছি। বন্ধু ও পরিচিতজনের অনেককেই বলতে শুনেছি হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় লেখক।
কিন্তু তার লেখার অনুরাগী পাঠক হিসেবে বিশেষ কোনো ব্যাপার আমার মধ্যে কোনাদিনই কাজ করেনি। তবে টের পেয়েছি- তিনি অনেক বড় শিল্পী। বিস্ময়করভাবে তার শিল্পীসত্ত্বাটা স্বতঃস্ফূর্ত। শিল্প-সাহিত্যের যে-শাখাতেই তিনি বিচরণ করেছেন, কোথাও কাঁচামি পাওয়া যায়নি।
গত ৪০ বছর ধরেই বাংলাদেশে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তিনি বিচরণ করে গেলেনÑ তা দেখেছি-শুনেছি-ভেবেছিও; কিন্তু এসব নিয়ে নিজের ভেতর কোনো আলোড়ন খুঁজে পাইনি।
স্যারকে প্রথম দেখি চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে যখন তিনি ঢাকায় এলেন এবং সরাসরি নুহাশ পল্লীতে উঠলেন। একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে শুক্রবার (১১ মে, ২০১২) সকাল নটায় ফোন ‘হুমায়ূন আহমেদের সারাদিন’ এই নামে একটা লেখা দরকার। তুমি যেতে পারবে?
সেদিনই ভোরে স্যার দেশে ফিরেছেন। আমি রওনা দিলাম নুহাশ পল্লীতে। যখন পৌঁছলাম, তখন দুপুর সাড়ে বারোটা। আমার একটা কথাই আসলে বলবার হুমায়ুন স্যারের সঙ্গে পরিচয় না হলে, গত দুদিন ধরে হৃদয়ে যে নৈ:শব্দের বিষণ্ণ সুর বেজে চলেছে, কান্নার মতো বোবা ব্যথা আছড়ে পড়ছে থামতেই চাইছে না; এসব ঘটতো না হয়ত।
দুইদিন তার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছি। ছবি তুলেছি। একসঙ্গে দীর্ঘ সময় হেঁটেছি। খেয়েছি। মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছি। এসব এখন আমার রক্তে-অনুভবে এবং কাজের টেবিলে মিশে গেছে। বড় কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর। ঠিক স্বজন হারানোর বেদনার মতো। আমাদের সমাজ তো লেখালেখিকে কোন কাজ হিসেবেই গণ্য করে না, তবু এর মাঝেই কি তিনি কী মহিমায় সমগ্র দেশকে তার সৃষ্টির ঐশ্বর্যে নিমগ্ন করে গেলেন এতগুলো বছর- সত্যিই বিস্ময়কর।
ভালো থেকো, প্রিয় লেখক-প্রিয় মুখ হুমায়ূন আহমেদ।
লেখক: তরুণ গল্পকার এবং সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক