ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ: হুমায়ূনের জেদি স্বপ্ন

মুনিফ আম্মার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৯, আগস্ট ৪, ২০১২
শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ: হুমায়ূনের জেদি স্বপ্ন

ঢাকা: সদ্য প্রয়াত নন্দিত ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্র নির্মার্তা হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠা করা স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। এটাকে ঘিরে ছিল তাঁর বিস্তর স্বপ্ন।

স্কুল, কলেজের বাঁধাধরা গণ্ডিতে নয়, এটি একদিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে। দেশ জুড়ে নাম ছড়াবে। এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা আলোকিত করবে অসঙ্গতির সব অন্ধকার।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে পুরো দেশের মতো স্কুলটিও যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চোখে জলের বান। হৃদয়ের কোণে জমাট বাঁধা বেদনা। নেত্রকোনার গহীন গ্রাম কুতুবপুরের  এই বিদ্যাপীঠের কোনো কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকদের হাতের মুঠোয় কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলেছিল, “আমাকে ঢাকায় নিয়ে চলেন, আমি হুমায়ূন স্যারকে শেষবারের মতো দেখবো। ”

তখন তাদের পরীক্ষা চলছিল। সবকিছু স্থগিত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও কুতুবপুর গ্রামবাসী তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় হুমায়ূন স্যারের জন্য কোরআন খতম, কালো ব্যাজ ধারণ, শোকযাত্রা পালনসহ বাদ রাখলো না কোনো কিছুই। তারপরেও কি শোক থেমে যায়?

কয়েকদিন পরেই কথা হলো স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য আরো কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে। তখনও তারা পুরোপুরি শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা।

প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বললেন, “স্যার আমাদের হাতে তাঁর স্বপ্ন তুলে দিয়ে গেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, তাঁর সেই স্বপ্নকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। আমরা আপ্রাণ সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ”

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর হুমায়ূন নিজেই স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও দাতা সদস্যের দায়িত্ব পালন করতেন। স্থানীয় আরো কয়েকজনকে পরিচালনা পর্ষদে রেখে গেছেন। কিন্তু স্কুলটির সমগ্র ব্যয়ভার ও সার্বিক সবকিছু লেখক নিজেই দেখাশোনা করতেন। ”

স্কুল শিক্ষকরা বলেনে, “স্যার সবসময় মাসের প্রথম দিন আমাদের হাতে বেতন তুলে দিতেন। কখনো সেটা দ্বিতীয় দিন হতো না। আমরা স্যারকে স্কুলের এমপিওভুক্ত নিয়ে প্রশ্ন করলেই তিনি বলতেন, স্কুল একেবারেই সরকারি হবে। তোমরা কোনো চিন্তা করো না। ”

স্কুলটি সরকারি হওয়ার আগেই বিদায় নিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর এমন করে চলে যাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বেশ আশঙ্কার মধ্যে দিন কেটেছে। মাস ফুরোলেই শিক্ষকদের বেতন, স্কুলের আনুষঙ্গিক খরচ কোত্থেকে আসবে ইত্যাদি নিয়ে।

যদিও সব শিক্ষকই অকপটে বলেছেন, “আমরা কোনো বেতন না পেলেও এই স্কুল ছেড়ে যাবো না। স্কুলটি ঘিরে স্যারের যে স্বপ্ন ছিল, আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। ”

তবে নতুন মাস আগস্ট শুরুর দিনেই প্রথমবারের মত শংকা কেটে গেল। স্কুলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত মো. ইব্রাহিমের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে গেল বেতন ও আসন্ন ঈদের বোনাস। কিছুটা স্বস্তি ও আশার আলো দেখা গেল। ”

কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখনো বাধা অনেক। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চারপাশ থেকে অনেক আশ্বাসের বাণী শোনা গেলেও বাস্তবে সামনের এগুনোর গতি অত্যন্ত মন্থর। গেল বছরের ২৩ এপ্রিল শিক্ষা সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের স্কুলটি পরিদর্শন করে দ্রুত এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে এসেছিলেন। এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হুমায়ূন আহমেদের মাকে দেখতে গিয়েও স্কুলটি দেখভাল করার ঘোষণা দিয়ে এলেন। এমন অনেক আশ্বাস শোনা গেল বিভিন্ন মহল থেকেও। কিন্তু কারো আশ্বাসই বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না।

হুমায়ূন আহমেদের চাচা আলতাফুর রহমান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “হুমায়ূন কোনদিন স্কুলের জন্য কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য নেয়নি। সে বলতো, স্কুলটি একদিন সত্যি সত্যিই অনেক বড় হবে, নাম ছড়াবে। সরকারই নিজ আগ্রহে স্কুলটি নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হবে। ”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, “আমাদের অন্য কোনো চাহিদা নেই। স্যারের স্বপ্নটি বাস্তবায়ন হোক, এটাই একমাত্র চাওয়া। এজন্য স্কুলটি দ্রুত এমপিওভুক্ত হওয়া দরকার। জানি না, সরকার এসব নিয়ে ভাবছে কি না। ”

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “যেহেতু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, তাই আমাদের করার মতো কিছু নেই। তবে আমরা নতুন করে একটি আবেদন পাঠাতে পারি। ”

স্কুলটি ঘিরে হুমায়ূন আহমেদের যতো স্বপ্ন ছিল, তা যেন কোনভাবেই থমকে না যায়। স্বপ্নটি যেন আলোর মতো প্রস্ফূটিত হয়, স্কুলের শিক্ষক, এলাকাবাসী ও হুমায়ূনভক্তদের সেটাই একমাত্র চাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১২
এমএ/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।