বন্ধু তোমার পথের সাথিকে চিনে নিও/ মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও/ ভুলোনা তাকে ডেকে নিতে তুমি বন্ধু...’ সুবিনয় রায়ের জনপ্রিয় গানের লাইন এটি। অবশ্য শ্রীকান্ত আচার্য্য পরে এ গানটি গেয়েছেন।
‘বন্ধু’ একটি শব্দ। কত আপন। আমাদের জীবনে বন্ধুর আবির্ভাব যে কখন হয়; তা আমরাও টের পাই না। হয়ত সেই ছোটবেলায় পাড়ায় খেলতে খেলতে বন্ধুত্ব; নয়ত স্কুলে পড়তে গিয়ে বন্ধুত্ব। সেই যে শুরু তারপর দীর্ঘ হতে থাকে বন্ধুর তালিকা। তারপরও স্বপ্নযাত্রার পক্ষ থেকে জানতে হয় প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে কিছু লাইন উৎসর্গ করতে। আমাদের অনেকেই লিখে পাঠিয়েছে।
স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
আমার পাগলা বন্ধু রুম্পা: অথৈ রহমান

পুরাই পাগল, উরাধুরা আমার একটু জুনিয়র কিন্তু অনেকটুকু কাছের প্রিয় একটা বান্দর মুখ- ‘রুম্পা’। আমার খুব প্রিয় বন্ধু সৈয়দা ফারজানা জামান রূম্পা, এদানিং নামের আগে টাইগার বসিয়ে দিয়েছে। বাংলার ক্রিকেটার টাইগারদের জন্য ভালবাসা থেকে। এমনি পাগলামি। আমরা ডাকি ‘রুম্পস’ বলে।
বহুবার রাগ হয় অনেক কিছু নিয়ে, কিন্তু সামনে আসলেই হায় হায়, সব কই যেন উড়ে যায়। ছেলে নাকি মেয়ে, কাকে নিয়ে দৌড়াচ্ছি, রূম্পাকে সাথে নিয়ে চলার এটাই অনেক বড় ব্যাপার। কারণ বাস, রিকশা, টেম্পু বা পায়ে হেঁটে দৌড়ে ওরে নিয়ে কোন চিন্তাই নাই।
উরাধুরা কোন প্ল্যান, নিশ্চয়ই তা রুম্পার মাথা থেকেই আসবে। ভোর বেলা বের হয়ে স্টার এ নাস্তা করতে হবে, কিম্বা ভ্যান ভাড়া করে সারারাত বাইরে ঘোরাঘুরি, পুরান ঢাকায় গিয়ে মাঝরাতে বিরিয়ানি খাবার শখ, দুই ঘণ্টার প্ল্যানে বিরিশিরি চলে যাওয়া। এই মুহূর্তেও একটা সেরকম উদ্ভট প্ল্যান আছে, তা হল সেহেরী করতে হবে পুরান ঢাকায়। হুম, নিশ্চিত এটাও ওর মাথা থেকেই আসা।
একটাই বড় চাওয়া, এই পাগলামিগুলা যেন থেমে না যায়। সবাই ভালো হয়ে যাবে, এর কোন আবশ্যকতা নাই। আমি, তুই আমরা কয়েকজন না হয় পাগলই রয়ে যাই।
দেখা হবে বন্ধু।
রবিনকে শুভেচ্ছা: নাজমুল হিমেল

রবিনের সঙ্গে আমার পরিচয় সেই ক্লাস নাইন থেকে। ক্লাশের নোট শেয়ার করা কিংবা খেলার মাঠে ঝগড়া করা সবকিছুতেই আমরা একসাথে।
স্কুলে থাকতে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। আমি কোনো একটা অন্যায় করেছি। তখন ক্লাসে স্যার এসে কাজটি কে করেছে জিজ্ঞেস করছে।
ঐ অপরাধটি আমিই করেছিলাম। তাই উঠে দাঁড়াই। পাশে দেখি রবিনও দাঁড়িয়ে আছে। স্যার তো অবাক! বলল, তুই দাঁড়িয়েছিস কেন?
রবিন বলে, ‘স্যার আমিও ওর সঙ্গে ছিলাম। ’ আরও অবাক করার বিষয় ছিল ক্লাসের সবাই তখন উঠে দাঁড়ায়। অপরাধ সবাই ভাগাভাগি করে নেয়। আমি ঐদিনের কথা কখনও ভুলব না।
রবিন এখন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাকে চিৎকার করে বলতে চাই – ‘দোস্ত শুভ বন্ধু দিবস’।
এছাড়াও বন্ধুর তো অভাব নেই। সবাই-তো কাছের বন্ধু। যাদের নাম বলতেই হয় তারা হলো- নদী, নাসির, সাইফুল, লাকী, নান্টু, উজ্জ্বল, তাসনিম, মিরাজ, শাহীন এবং নাম না বলা আরো সব বন্ধুদের।
আমার এই পথ চলাতে যারা বন্ধুর মতই ছিল- জুয়েল ভাই, সুনাম ভাই, শাওন ভাই, অভিজিৎ ভাই, রোহান ভাই। সবাইকে বন্ধু দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
তোরা সবাই আমার পাশে থাক: কাজী রত্না

সেলিম আমার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কলেজ কর্মসূচির প্রথম ছেলে বন্ধু। বছর কয়েক আগে শুনতে পাই, সেলিম চলে গেছে না ফেরার দেশে।
যা এখনও আমি বিশ্বাস করি না। প্রায়ই ভাবি সেলিম কোনো একদিন ফিরে আসবে। এসে বলবে, ‘রত্না কেমন আছিস? আমাদের কিন্তু অনেক বড় হতে হবে। মনে আছে?’
খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, ‘সেলিম, শুনতে পাচ্ছিস? আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি, একবার ফিরে আয়, দেখে যা আমাদের। ’
যারা এখনও আছে তাদের সবার নাম বলে তো শেষ করা যাবে না। তাই ধন্যবাদও জানাবো না, কারণ আমি জানি আমি না বললেও তারা আমার পাশে থাকবে। কারণ তারা প্রত্যেকেই জানে আমি তাদেরকে অনেক ভালোবাসি। নাম না হয় নাই বললাম ।
তবুও কয়েকজনের কাছে ক্ষমা চাই। প্রথমেই বিপ্লব তোর কাছে। সারা জীবন তোকে অনেক জ্বালিয়েছি। গত একবছর তোকে শুধু ভুলই বুঝেছি। ক্ষমা করে দিস আমাকে।
তারপর মিনা। তোর কাঁধে মাথা রেখে কান্নার জায়গাটা কখনো আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবি না, প্রমিজ কর।
তানি গত একবছর তুমি পাশে ছিলে। হতে পারো তুমি অফিস কলিগ, ভুল বোঝাবুঝিকে মনে না রেখে এস আমরা, আবার বন্ধু হই। তোমার জন্য শুভ বন্ধু দিবস।
বন্ধুদের জন্য ভালোবাসা: ফারহাত রহমান খানলোকে বলে, পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র এবং স্বার্থহীন সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুত্ব। কেউ কেউ ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুত্বকে উপরে স্থান দেন। আমি সেই তর্কে যাবো না। আমি শুধু বলবো, বন্ধুত্বর তুলনা বন্ধুত্বই। সেই বন্ধু হতে পারে বাবা-মার সঙ্গেও।
যাইহোক। জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমার নানান মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সবাই বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। তবে কিছু মানুষের মুখচ্ছবি আমার বন্ধুত্বের অ্যালবামে স্থান করে নিয়েছে। তাদের কথাই বলছি; তাদের উদ্দেশ্যেই বলছি।
আলাদা করে সবার সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হবে। আদনান, আফরিন, অপূর্ব, আসাদ, সজিব, প্রিয়াঙ্কা, এনাম, শান্ত, হিমু, হিমেল, হুমায়রা, জাকিয়া, মারুফ, নাফিসা, তাসবির, প্রেম, রিমি, রবিন, শেখ, ডোরা, সায়েম, শিবলী, নির্ঝর তোরা সবাই আমার জীবনের অনেকখানি অংশ জুড়ে আছিস। তোদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের খাতায় লেখা হয়ে গেছে অকৃত্রিম ভালোবাসায়।
আমরা একসঙ্গে হাসি, এক সঙ্গে কাঁদি, ঝগড়া করি। আবার মিলে যাই। কেউ রেগে থাকলে তাকে সবাই হাসাই। মজা করি। মনে হয় জীবনটা এভাবেই কেটে যাক।
আমি শুনেছি, জীবনের ব্যস্ততা মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। তবে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এইটুকু বলতে পারি, কোনো ব্যস্ততা আমাদের আটকে রাখতে পারেনি। তাই তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, ভবিষ্যতেও যেন ব্যস্ততা আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে খেয়ে ফেলতে না পারে।
একটি কথা বলে শেষ করতে চাই। তোদের আমি অসম্ভব ভালোবাসি। তোরা যে সবাই আমার প্রিয় বন্ধু। তোদের নিয়েই আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত পার করতে চাই। তোদের সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১২