ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চবির তিন তরুণের উদ্ভাবন

পরিবেশবান্ধব ‘জৈব ডিটারজেন্ট’

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৪, আগস্ট ৭, ২০১২
পরিবেশবান্ধব ‘জৈব ডিটারজেন্ট’

চট্টগ্রাম: কাপড় কাচার জন্য আমরা প্রতিদিনই ডিটারজেন্ট ব্যবহার করি। কিন্তু বাজারে যেসব ডিটোরজেন্ট পাওয়া যায় সেগুলো অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী।

একথা মাথায় রেখে ডিটারজেন্টের দূষণ থেকে পরিবেশ বাঁচাতে পরিবেশবান্ধব ‘জৈব ডিটারজেন্ট’ উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের তিন ছাত্র।

এ ডিটারজেন্টের ব্রান্ডিং নাম ‘ডার্ট কিক’।

‘আইডিয়া কিভাবে এলো?’- বাংলানিউজের এ প্রশ্নের জবাবে তিন তরুণের মধ্যে অয়ন সাহা বলেন, “আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের ডিটারজেন্টের প্যাকে ‘করোসিভ’ বা ক্ষতিকর লেখা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন বিশ্বব্যাপী সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’। আর আমরা এখান থেকেই এ কাজ শুরু করি। ”

তার সঙ্গে যোগ দিলেন প্রকল্পের আরো দুই তরুণ--- বিভাগের চতুর্থ বর্ষের কুতুব উদ্দিন মুহম্মদ আশরাফ ও  দ্বিতীয় বর্ষের মু. হামিদ হোসাইন।

তারা বলেন, বাজারে প্রচলিত ডিটারজেন্ট থেকে নির্গত বর্জ্য পানির মাধ্যমে মাটিতে মিশে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া এই ডিটারজেন্ট মানুষের ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর। ’

তারা জানান, বাজারের ডিটারজেন্টের ফ্র্যাগরেন্স বা সৌরভ খুবই কম স্থায়ী। কিন্তু পরিবেশবান্ধব জৈব ডিটারজেন্ট হবে প্রাকৃতিক সৌরভে ভরপুর, যা ৪ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হবে। এছাড়া অন্যান্য ডিটারজেন্টের চেয়েও পরিমাণে কম লাগবে।

‘কিভাবে তৈরি হবে?’ জবাবে মার্স্টাসের ছাত্র অয়ন সাহা বাংলানিউজের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসে আলাপচারিতায় বলেন, “জৈব ডিটারজেন্ট গবেষণাগারে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হবে। এর আগে ব্যাকটেরিয়া প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। ”

বাজারজাত করা প্রসঙ্গে তারা বলেন, জৈব ডিটারজেন্ট তৈরির পর সামাজিক যোগাযোগসহ অনলাইনে এ খবর ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এর প্রচারের মাধ্যমে বাজার সৃষ্টি করা যেতে পারে।

পরিবেশবান্ধব এ পণ্যে তৈরি ও এর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তুলে ধরে কৃতিত্বেরও স্বাক্ষর রেখেছেন এই তিন তরুণ।

সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ তরুণ জৈবপ্রযুক্তিবিদ’ (ইয়ং বিবি) আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় তাদের এ প্রকল্পটি দলগতভাবে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়।  

জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইনে ৩০টিরও বেশি প্রকল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে টপ-৫টি প্রকল্পের ডাক পড়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে তাদের ‘ডার্ট কিক’ প্রকল্পটির পক্ষে তারা নানা যুক্তি তুলে ধরে দেশের কর্পোরেট ব্যক্তিত্বদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন।

স্বপ্নবাজ তিন তরুণ বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবীতে নতুন আইডিয়া নিয়ে অনেকেই স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এ ধরণের একটি আইডিয়ার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি। ’

‘মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পরিবেশবান্ধব এই ‘জৈব ডিটারজেন্ট’ ভালো সাড়া ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পণ্যের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। ’ একসঙ্গে আত্মবিশ্বাসে বলে ওঠেন অয়ন, কতুব এবং হামিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১২
এমবিএম/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।