ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

তরুণদের জন্য একজন তারেক মাসুদ

একরামুল হক শামীম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৪, আগস্ট ১২, ২০১২
তরুণদের জন্য একজন তারেক মাসুদ

ঢাকা: তারেক মাসুদের মতো মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা বাংলাদেশে খুবই কম এসেছে। তার সময় ও সময়ের মানুষকে তিনি প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন।

তরুণ প্রজন্ম তার কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। তাকে দেখেছে চলচ্চিত্র নির্মাণের আইকন হিসেবে।

বর্তমান সময়ের তরুণরা ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাচ্ছেন, ফিল্ম পরিচালনার স্বপ্ন দেখছেন। এই স্বপ্নকে উসকে দিয়েছেন তারেক মাসুদের মতো মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তার চিন্তা-ভাবনা, সমাজ পর্যবেক্ষণ, জীবনবোধ আমাদের ছুঁয়েছে গভীরভাবে। তার কাজের ধরণ আমাদের আন্দোলিত করেছে। তার প্রকাশভঙ্গি তরুণদের মুগ্ধ করেছে। একটা প্রজন্মের কাছে, যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে এবং দেখছে তাদের কাছে তারেক মাসুদ একজন আইডল।

তারেক মাসুদের কাজ, জীবন যাপন, চিন্তার প্রতি তরুণরা আকৃষ্ট হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া তারেক মাসুদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই যুক্ত ছিলেন তারেক। ১৯৮২ সালে তিনি ‘আদম সুরত’ নামের একটি ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। শিল্পী এসএম সুলতানের ওপর নির্মিত এই ডকুমেন্টারিটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। তারপর তিনি ডকুমেন্টারি, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু, দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে নির্মাণ করেছিলেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’।

মাটির ময়না চলচ্চিত্রটি দিয়ে তারেক মাসুদ সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া মাটির ময়না চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।

তার যে কাজ তরুণ প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করেছে তার নাম ‘মুক্তির গান’।   মুক্তির গান ৭৮ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলের ওপর নির্মিত হয়েছে এই পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রটি।

নানা বিষয় নিয়ে তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারণ গ্রামীণ জনগণের অভিজ্ঞতা বিষয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৯)। যুদ্ধে বেঁচে থাকা নারীদের অভিজ্ঞতার ওপর ডকুমেন্টারি করেছিলেন ‘নারীর কথা’ (২০০০) নামে। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’তে (২০১০) চলমান সমাজের অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে। এখানে তিনি ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদের সমস্যা দেখিয়েছেন, পোশাক শিল্পের নারীদের কষ্ট দেখিয়েছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের বঞ্চনা দেখিয়েছেন। তার বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তরুণদের প্রভাবিত করেছে নতুন করে ভাবতে।  

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে পরবর্তী ছবি ‘কাগজের ফুল’ এর শ্যুটিং লোকেশন খুঁজতে গিয়েছিলেন তারেক মাসুদ। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। তার মৃত্যু আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবে তরুণদের মধ্যে চলচ্চিত্র নিয়ে যে স্বপ্নশিখা তিনি জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন তার মাধ্যমেই তিনি বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০১২
সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, নিউজরুম এডিটর; আহ্‌সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।