...আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে অপরিচিতা
নিঃশব্দে হেসে উঠলেন
অতঃপর আমি স্থির নিশ্চিত হলাম, আমাদের; ফিরে যাবার
আর কোনো পথ নেই।
তীর্থযাত্রীরা সব প্রার্থণায় বসে গেলেন, অবিশ্বাসীরা কেঁদে উঠলো ডুঁকরে
আর আমি অগ্রসরমান রইলাম বিরামহীন যাত্রাপথের পলায়নপর সেই গন্তব্যে।
অকস্মাৎ সামনেই দিগন্ত প্রসারিত সুবিশাল উদ্যান!
একি! আজই কি তাহলে সেইদিন? ভূমিকে কি তাহলে বিস্তৃত করা হয়ে গেছে?
এর আগে আকাশ কি বিদীর্ণ হয়েছিল? প্রত্যাদেশ মোতাবেক?
সহসাই সামনে জেগে উঠলেন এক হিমালয় পুরুষ।
আমি চমকালাম না! কারণ আজকের এই মহামুসিবতময় প্রতিদান দিবসে
এই পূণ্যবানেরই সাক্ষাৎ আশা করে আসছিলাম
সেই কলংকিত জাহিলিয়াতের রাত থেকে।
বিস্মিত না হয়ে আমি ‘চিরউন্নত মমশিরে’র সেই জ্যোতির্ময় আদম সুরতের
বদন পাণে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি।
এসময়ে হঠাৎ দৈববাণী হলো- “হাল জাজাউল ইহ্সান, ইল্লাল ইহ্সান!”
সৎকর্ম্যরে পুরষ্কার স্বরূপ আজ তোমার মনোষ্কাম আমি পূর্ণ করিলাম। এই নাও,
কথা বলো সেই সুন্দরতম মানবের সনে!
বুকে, মনে, মননে হাজারো প্রশ্ন। তবে তার আগে আমি নিশ্চিত হয়ে নিলাম
আশপাশে কোনো সানগ্লাসধারী আছেন কীনা।
না, কি ছাইপাশ ভাবছি! আজতো সেরকম কোনো দিন নয়। আজ কারো গায়ে কোনো
পোশাক, এমনকি ছেঁড়া গেঞ্জিটাও নেই। সানগ্লাসধারী আসবে কোত্থেকে?
তাঁকে সর্বদা ঘিরে থাকা ‘চাটার দল’দেরও দেখা যাচ্ছেনা কাছাকাছি। অনুমান করলাম
নিশ্চয় এ মুহূর্তে মহা-জিল্লতি আর
গর্দিশে দিশেহারা অবস্থায় আছেন তেনারা।
আমি আনন্দ আর গর্বের যূথবন্ধী প্রগল্ভতায় বাক্যবান হই
“মান্যবর, আপনি আমার...”
কিন্তু তথাপি আমার বাকযন্ত্র শব্দহীন রয়। জ্যোতির্ময় স্মিতহাস্যে শুধোলেন
তারপর, আমার পর কিরূপ ছিলে তোমরা?
এইবার আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করি, অনেকটা যেন
ঠিক হাইকোর্টের বিচারপতিদের মতো। তবে এটাও সত্য, ইতোমধেই আমরা
আমাদের লাজ-শরম সব ‘সার্ফ এক্সেলে’ ধুয়ে ফেলেছি এক্কেবারে সাফ-সুতরো করে।
আমি হঠাৎই সপ্রতিভ হয়ে সরব হই এক্সেলেন্সি মুজিব, আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে,
আমরা শেষতক “জাহান্নামের আগুনে বসে পুষ্পের হাসি” হাসার মতো সামর্থবান হয়ে উঠেছিলাম।
না না, আপনার বিদেহী আবার অভিশাপ কিছুই করতে পারেনি আমাদের...
তবে আমি এ পর্যায়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত এবং জিজ্ঞাস্য একটি বিষয়ের অবতারণা করছিÑ
‘জঙ্গলদেশীয়দের ষড়যন্ত্রে সেদিন কি করে একীভূত হয়েছিল
গান্ধীজী’র ‘ত্রিরত্নে’র মতো দিল্লি-পিন্ডি আর এদেশীয় জেনারেলরা?
কারও ভাষ্যে মুজিব, কারও শেখ মুজিব, কারওবা মজিবর কিংবা শেখসাব
এছাড়াও দু’একজনের ভাষায় বঙ্গবন্ধু বা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান,
কিংবা ধরুন ৭ মার্চের পল্টনে উচ্চারিত স্রেফ ‘শে...খ’
স্নেহার্দ্য স্মিতহাস্য করেন।
চারদিকের সুতীব্র কোলাহল আর গনগণে দ্বৈত সূর্যের অমানবিক তাপ
ম্রিয়মান হয়ে আসে ইন্দ্রিয়ে আমার। ঐশীবাণীর তাল-লয়-ছন্দে
শেখ সাহেব বলেন, বৎস! জান নিশ্চয়; জলধারা সর্বদাই নিম্নমুখী ধাবিত হয়।
আর এগুলোতো ছিল নির্জলা নর্দমার...
সহসা তীব্র করতালিতে আমি সম্বিৎ ফিরে পাই। নিজকে আবিষ্কার করি
এক জন্মদিনের পার্টিতে। ইয়েস! আজ পনেরই আগস্ট। আজ একটি জন্মদিবস আছে!
কি আশ্চর্য! এই মহতি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আমি পড়েছিলাম ঘুমিয়ে? ধৃষ্টতাতো কম নয় আমার!
সম্মুখস্থ আলোকিত পুষ্পপল্লবসজ্জিত মঞ্চে দৃষ্টিপাত করি, দৃষ্টিনন্দন এবং অবশ্যই
রুচিকর এক বার্থডে কেকের সামনে সেই অপরিচিতাকে আবিষ্কার করি।
দাঁড়ান, ভাই দাঁড়ান। এত অস্থির হচ্ছেন কেন? আমার প্রতিবেদন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে
যাকে নিয়ে আজকের এই উৎসব আয়োজন, সেই মহামান্যাকে এখন, চিনতে পারছি আমি।
এই সেই অপরিচিতা। তিনি আর কেউ নন...
অভিনন্দন! আপনাকে অভিনন্দন। শুভ হোক জন্মদিন, শুভহোক আজকের এই দিন।
...আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে ‘পরিচিত অপরিচিতা’ নিঃশব্দে হেসে উঠলেন
অতঃপর আমি স্থির নিশ্চিত হলাম
আমাদের ফিরে যাবার আর কোনো পথ নেই...
ahsan.akraza@gmail.com