ঢাকা: ভারতের মত একটি দেশ যেখানে হরহামেশা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-ফাসাদ-হানাহানি আর নরহত্যা সংবাদ শিরোনাম হয়, সাম্পদ্রায়িক ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকার পক্ষ সদা তটস্থ থাকে গদি রক্ষায়— ঠিক সেই দেশেই অসাধারণ কিছু ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ সবাইকে ফের আশাবাদী করে তোলে— নাহ! সবকিছুই পচে-গলে শেষ হয়ে যায়নি।
এমনি একটি ঘটনা এবারের ঈদুল ফিতরের সময়ে ঘটেছে দেশটির উত্তরাখণ্ড রাজ্যে।
স্থানীয় সংবাদপত্রের রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, হিমালয়ের গারওয়াল পর্বতশ্রেণীর অলকানন্দা নদীর পাশের পাহাড়ি এক ছোট শহর জশিমাথ এলাকায় কোনো ঈদগাহ বা মসজিদ নেই। এই শহরে বসবাসরত কমবেশি ৮০০ সদস্যের সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজ শহরের গান্ধী ময়দানে ঈদের নামাজসহ অন্যান্য নামাজ আদায় করে থাকে।
কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে গান্ধী ময়দান কাদায় সয়লাব হয়ে যায়। ফলে সেখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর ওপর ঈদের দিনটিও চলছিল ভারী বর্ষণ।
এ অবস্থায় শহরের মুসলমান সমাজ কঠিন সমস্যায় পড়ে ঈদ জামাত নিয়ে। ঠিক এমনি সংকট মুহূর্তে স্থানীয় গুরদুয়ারার প্রধান তাদের জন্য চরম স্বস্তির এক প্রস্তাব পাঠান। তিনি বলেন, মুসলমানরা ইচ্ছা করলে গুরদুয়ারার প্রধান হলরুমটি ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
এ প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করে মুসলমানরা। এরপর নতুন কাপড়ে সুবেশিত মুসলমানরা আতরের খুশবাই ছড়িয়ে গুরদুয়ারার হলরুমে হাজির হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত।

নামাজ শেষে হলরুমের বাইরে অপেক্ষমান শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গেও কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে তারা। এসময় সেখানে উপস্থিত শহরের হিন্দু বাসিন্দারা শিখ ও মুসলমান সম্পদ্রায়ের এই অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ অবলোকন করে। তারা দু’সম্পদ্রায়কেই এজন্য অভিনন্দিত করে।
গুরদুয়ারার প্রবন্ধক (প্রধান) সরদার বুটা সিং সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মুসলমানদের সমস্যা সমাধানে তিনি শুভেচ্ছার হাত হাড়িয়ে দিয়েছেন মাত্র।
অপরপক্ষে স্থানীয় মুসলমানদের নেতা মৌলভী আসিফ সাংবাদিকদের বলেন, গুরদুয়ারা কমিটি এর মাধ্যমে একই সঙ্গে মানবতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত আর সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা উপস্থাপন করেছে। তিনি আরও জানান, এজন্য মুসলিম সমাজ গুরদুয়ারা কমিটির কাছে কৃতজ্ঞ।
ঋষিকেশ এলাকার জাতীয় হাইওয়ে৫৮ থেকে আড়াই শ’ মাইল দূরের জশিমাথ শহরের অবস্থান বদ্রিনাথ ও হেমকান্ত সাহিব নামের দু’টি প্রসিদ্ধ তীর্থকেন্দ্রের কাছাকাছি। এর প্রথমটি হিন্দুদের অপরটি শিখদের পবিত্রভূমি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৩ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর