ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

জাবিতে হুমায়ূন আহমেদ ও তার সৃষ্টি

ওয়ালিউল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৩০, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২
জাবিতে হুমায়ূন আহমেদ ও তার সৃষ্টি

জাবি: কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র বাকের ভাই, হিমু, মিসির আলী, শুভ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে উপস্থিত হয়েছিল।

নিজেদের চরিত্রের নানা দিক নিয়ে তারা প্রশ্ন করেছে স্বয়ং লেখককে।

নিজেদের আক্ষেপ তারা তুলে ধরেছে লেখকের কাছে। হিমুর আক্ষেপ, মহাপুরুষ বানানোর জন্য তাঁকে রূপার কাছ থেকে দূরে না রাখলে কি হতো না? হিমুরা পায়ে সেন্ডেল পরে না। এখনতো হিমু নেই। কারণ হুমায়ূন নেই।

কিন্তু এখনও অভাবের কারণে পাদুকা বিহীন মানুষ আছে। মিসির আলীর মতো যৌক্তিক মানুষকে শেষ বয়সে বিয়ে দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? পাঠক হৃদয়ে মিসির আলীকে একটি বারও কী ভাববাদী করে দেখানো যেত না? শুভ্রকে কেন শুধুই পড়ুয়া ডোমেস্টিক চরিত্রে তুলে ধরা হলো? এমন নানা আক্ষেপ স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদের কাছে তুলে ধরেছে বিতর্কের মাধ্যমে।

বাকের ভাই বলেছে, ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে কতো খুন হয় তার বিচার হয় না, সাগর রুনীর খুনের বিচার নেই, আর আমাকে শত দর্শকের প্রতিবাদ সত্ত্বেও কেন ফাঁসি দেওয়া হলো? এখন সবাই হিমু হতে চায়, সবাই মিসির আলী হতে চায় কিন্তু কেউ বাকের ভাই হতে চায় না। কারণ বাকের ভাইরা মরে যাবে। তাদের মৃত্য নিশ্চিত। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি করা জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে স্বয়ং তাদের স্রষ্টার সামনে এভাবেই হাজির করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির ব্যতিক্রমী এ নাটকীয় বিতর্কের আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন (জুডো)। এতে বিতর্ক করেন হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে নাট্যজন সালাম সাকলাইন, বাকের ভাই চরিত্রে সাইয়্যেদ মু. তাফহীম, শুভ্র চরিত্রে সাখাওয়াত জামিল সৈকত, মিসির আলী চরিত্রে দেবাংশু ঘোষ এবং হিমু চরিত্রে কৌশিক আজাদ প্রণয়।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অরাটরি ক্লাব ও জুডোর যৌথ আয়োজনে এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই হুমায়ূন আহমেদ আমার একান্ত প্রিয়ভাজন একজন মানুষ। আমাদের পরিবারের সাথে তাঁর পরিবারের ছিল গভীর যোগাযোগ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পর আমার খুব ইচ্ছা ছিল হুমায়ূন আহমেদকে এখানে আমন্ত্রণ করার। কোন এক রাতে খোলা আকাশের নিচে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একসাথে জোৎস্না দেখার ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। আজ তাঁর সৃষ্টি কর্ম নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি সত্যিই অসাধারণ।

হুমায়ূন আহমেদের জীবনকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন কার্টুন পত্রিকা উন্মাদ’র সম্পাদক ও হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত জীবনে খুবই রহস্যময় ছিলেন। তিনি রহস্য পছন্দ করতেন। তাঁর স্মরণে আজ এই ব্যতিক্রমী বিতর্ক আয়োজনটিও রহস্য সৃষ্টি করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে জাকারিয়া পলাশ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুমায়ূন আহমেদকে ভালোবাসে। নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের জন্য আমরা এ ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছি। আলোচনা ও বিতর্ক শেষে ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়..’ শিরোনামে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

নূর-ই-আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা, ছাত্র-কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের সহকারী-পরিচালক শামসুন্নাহার খানম মেরী, জনসংযোগ অফিসের উপ-পরিচালক ও গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাট্যজন সালাম সাকলাইন, এআইইউবি ওরাটরি ক্লাবের সভাপতি এসএম রাইসুল ইসলাম, জুডোর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের আহবায়ক নাজনীন করিম মিথি, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কলি মাহমুদ, জুডোর সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাইয়্যেদ মু. তাফহীম, মাসুম রেজা মেহেদী, শরীফা শবনম তানিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৌশিক আজাদ প্রণয় প্রমুখ।

দু’দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনে গত শুক্রবার এআইইউবি মিলনায়তনে `হিমু, মিসির আলীরা বিলাসী, হৈমন্তীর মতো সার্বজনীন হয়ে ওঠে নি` এ বিষয়ের উপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০‌১২

সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।