ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

যে স্কুলে শিক্ষক মাত্র একজন!

শাহীন রহমান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪৯, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২
যে স্কুলে শিক্ষক মাত্র একজন!

পাবনা: পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, ভালো শ্রেণীকক্ষ ও আসবাবপত্রও নেই। তাতে কি? তবুও এটি একটি স্কুলই বটে! নাম তার হাট উধুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।



পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত ও সমস্যা জর্জরিত একটি এলাকায় এর অবস্থান।

এ স্কুলটিতে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়া হয় না। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানও করা হয় না। তাই ছেলে-মেয়েদের একমাত্র কাজই হচ্ছে, স্কুলে আসা আর গল্প-গুজব করে বাড়ি ফিরে যাওয়া। এটাই তাদের নিত্যদিনের কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলের ঘরের মেঝে এবং দেয়াল ফেটে গেছে। সংস্কারের অভাবে তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিশুদের পাঠদান চলছে।

এ স্কুলের মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪৭ জন। গত দেড় বছর ধরে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক অবশ্য রয়েছেন। তবে সেটা সংখ্যায় মাত্র এক।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ থেকে দুজন প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন বলে জানান স্কুলের অভিভাবকরা।

অন্যদিকে একমাত্র সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন স্কুলে আসেন অনেক দূর থেকে। সকাল ৯টায় স্কুলে এসে খাতা স্বাক্ষর করে তিনি দুপুর ১২টার মধ্যেই আবার বাড়ি ফিরে যান বলে তার বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগ।

সম্প্রতি স্কুল পরিদর্শনে গেলে বেশকিছু ছাত্র-ছাত্রীকে খালি গায়ে স্কুলের বারান্দায় আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘‘শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে ফাটল ধরায় শিশুদের কক্ষে বসিয়ে রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া শিক্ষকের অভাবে ৫টি ক্লাস আমার একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয় না। ’’

স্থানীয় অভিভাবক আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের শিশুরা স্কুলে এসে পড়ালেখা করে না। বরং তারা (অনেকে পোশাক ছাড়া) স্কুলে গিয়ে খেলাধুলা করে আর আড্ডা দেয়।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আকছেদ সরদার এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে জানান, “দেড় বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের ৪টি পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। দেলোয়ার হোসেন একা আর কি করবেন। তাই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান তিনিও। ”

আকছেদ সরদার জানান, “আনোয়ার হোসেন নামের একজন শিক্ষককে কিছুদিন আগে এখানে ডেপুটেশন দিলেও বিদ্যালয়টি অবস্থান প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় তিনিও প্রতিদিন আসেন না। ”

উপজেলা পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়া স্কুলের প্যারা শিক্ষক আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ‘‘আগে উপ-বৃত্তির টাকার একটা অংশ থেকে আমাদের বেতন দেওয়া হতো। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ায় গ্রামের লোকেরা এদিকটা আর দেখেন না। ফলে আমরা বেতন পাচ্ছি না। ’’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘স্কুলটি দুর্গম অঞ্চলে হওয়ায় কোনো শিক্ষক সেখানে থাকতে চান না। তবে খুব শিগগিরই তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করছি, তখন আর শিক্ষক সংকট থাকবে না। ’’

এছাড়া বিদ্যালয়ের ফাঁটল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘‘বিদ্যালয়টি পুননির্মাণ অথবা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। ’’

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।