ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ঠাকুরগাঁওয়ে নেই বিনোদন ব্যবস্থা

ফিরোজ আমিন সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৩, অক্টোবর ২, ২০১২
ঠাকুরগাঁওয়ে নেই বিনোদন ব্যবস্থা

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে বিনোদনের কোনো সুব্যবস্থা নেই। শিশুদের জন্য নির্মিত পৌরসভার একমাত্র পার্কটিরও জরাজীর্ণ দশা।



সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। আর নির্মাণাধীন জেলা পরিষদের শিশুপার্কটি ২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। তাই জেলাবাসীর বেড়াতে যাওয়ার একমাত্র ভরসাস্থল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ আর শহর ঘেঁষা টাঙ্গন নদীর পাড়।

পৌর শিশুপার্ক:

১৯৫৮ সালে ৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে ২য় শ্রেণীর পৌরসভা থেকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয় এটি। বর্তমানে এ শহরে ২ লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তৎকালীন সরকার শিশুদের বিনোদনের জন্য ১৯৬৫ সালে ৩১ শতাংশ (প্রায় ১ বিঘা) জমির উপর শহরের আশ্রমপাড়ায় নির্মাণ করে শিশুপার্ক। ১০টি আম আর কাঠাল গাছের ছায়া থাকায় পার্কে মুক্ত বাতাসের কোনো অভাব নেই। কিন্তু জায়গা অল্প হওয়ায় এখানে তেমন কোনো খেলার সরঞ্জাম বসানো হয়নি। হাতেগোণা ২টি দোলনা আর ২টি স্লিপার ছাড়া এখানে আর কিছুই নেই। বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি ৯টি ব্রেঞ্চ থাকলেও সেগুলো ভেঙে নষ্ট হয়ে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন পার হলেও এই শিশুপার্কটিতে আধুনিকতা ছোঁয়া লাগেনি। হয়নি কোনো সংস্কারও। লোহার খেলনাগুলো মরিচা ধরে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পার্কের ফটক ভেঙে গেছে। ভাঙা ফটকের রডসহ অন্যান্য সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাচ্ছে। পার্কটি এখন গোচারণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে। পার্কের ভাঙাচোরা ফটক আর প্রাচীর ভেদ করে গরু-ছাগল ঢুকে পড়ে অনায়াসে।

দেখভালের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পার্কের পুরো মাঠই থাকে নোংরা আর আবর্জনায় ভর্তি। আর সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে কাদায় ভরে যায় পুরো মাঠ। এছাড়াও এখানে নেই টয়লেট ব্যবস্থা আর টিউবওয়েলের ব্যবস্থা।

পার্কের এমন বেহাল দশা সত্ত্বেও আর কোনো বিকল্প না থাকায় অনেক শিশুই এখানে খেলতে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণ কর্তৃপক্ষের কাছে সংস্কার করে পার্কটি বিনোদনের উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন।

শহরের আশ্রমপাড়ার দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ময়মুনা মোস্তারিন মুমু বলেন, কোথাও ঘুরে বেড়ানোর স্থান নেই। বাধ্য হয়ে পার্কে আসি। কিন্তু মাঠটি সবসময় নোংরা থাকে। খেলনাগুলোও ভাঙাচোরা।

মুমুর বাবা মজিবর রহমান জানান, এখানে নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। সব সময় বখাটেদের আড্ডা বসে এখানে। শিশুপার্কটিতে বসার পরিবেশ না থাকায় বিকেল হলে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড়মাঠে সময় কাটানো হয়।
 
পার্কে বেড়াতে আসা কালিবাড়ি এলাকার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অরন্য, তাজ ইসলাম, হাজীপাড়ার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র আরিফ, মুন্সিপাড়ার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র রফিকুল, রাকিব ও সাইফুল জানায়, শুধু দোলনা ছাড়া আর কিছু নেই এই পার্কে। অনেক দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে।

তারা আরও জানায়, তারা নিজেরাই ফুটবল আর ক্রিকেট বল এনে এখানে খেলে। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমি, কান্তা রানী ও তাদের সঙ্গে থাকা অভিভাবকরা জানান, এখানে খেলার জন্য রাইডার, বিভিন্ন ধরনের চড়কি এবং স্পিডবোট বসালে জাকজমক হবে পার্কটি। সেই সঙ্গে এখানে টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা করা জরুরি।

শহরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা সোলায়মান আলী (৫৫) জানান, ফটকের রড চুরি হচ্ছে, দেখভালের কেউ নেই। এখানে আধুনিক সরঞ্জাম বসিয়ে পার্কটি ঝকঝকে করার দাবি জানান তিনি।
 
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র এসএমএ মঈন বলেন, জায়গা সল্পতার কারণে শিশুপার্কে খেলার সামগ্রী বসানো যাচ্ছেনা। মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হয়।

বড় ধরনের জায়গা পাওয়া গেলে পৌরসভায় নতুনভাবে আধুনিক শিশুপার্ক তৈরি করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

জেলা পরিষদের শিশুপার্ক:

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ শিশুদের বিনোদনের কথা ভেবে ২০১০-১১ অর্থ বছরে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের টাঙ্গন নদীর ধারে একটি শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট, ৩ পাশে প্রাচীর নির্মাণ, প্রবেশ পথ এবং টিকেট ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২ বছরেও এখানে কোনো রাইডার ও খেলার অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়নি। পুরো মাঠ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ প্রশাসক সাদেক কুরাইশির সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিষদের আয় বৃদ্ধির জন্য শিশুপার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে কাজ শেষ করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে পার্কটি তৈরি করে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করার।

লোকায়ণ শিশুস্বর্গ ও জাদুঘর:

২০০৮ সালে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে ঠাকুরগাঁওয়ে বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) শিশুস্বর্গ লোকায়ণ ও জাদুঘর স্থাপন করে। এই লোকায়ণ জাদুঘর ও শিশুস্বর্গকে ঘিরে বছরে হাতেগোণা কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। শিশুস্বর্গের মাঠে রাইডার আর খেলনা সামগ্রী থাকলেও অনুষ্ঠান ছাড়া শিশুরা তেমন আসেনা। তাই রাইডারগুলো কর্তৃপক্ষ ঘরে তুলে রেখেছে।

রাস্তাঘাট ভালো হলেও শহর থেকে দূরে হওয়ায় অভিভাবকরা এখানে শিশুদের নিয়ে আসতে চাননা। তবে খুব তাড়াতাড়ি পার্কটিকে শিশুদের আগ্রহের জায়গায় পরিণত করতে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামান।

এদিকে, বিকেলে সব বয়সের মানুষের আনাগোনা দেখা যায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ আর টাঙ্গন নদী ঘেষা অপরাজেয় ৭১ মাঠে। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ হওয়ায় এখানে বসে ৭টি ফুচকা আর চটপটির দোকান। বিকেল হলেই এসব দোকানে বাড়ে লোকজনের ভীড়।

এছাড়াও টাঙ্গন নদীর পাড়ে বেড়াতে যান কেউ কেউ। তবে আর্টগ্যালারি এলাকায় টাঙ্গন নদী ঘেঁষে এ বছরের ২৫ মার্চ নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ অপরাজেয় ৭১। বালুময় এই মাঠেও ভীর জমান বিনোদন প্রেমীদের অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১২
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।