ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ইতিহাসের দুই সাহসী নারী

বাবু আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৭, নভেম্বর ৮, ২০১২
ইতিহাসের দুই সাহসী নারী

ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যাবে সাহসী বিপ্লবীদের। যাদের সাহসী ভূমিকার কারণেই আজকে বিশ্ব শান্তির কথা ভাবে।

এদের কেউ কেউ শান্তির মধ্যে দিয়ে বিপ্লব করেছেন। কেউ করেছেন যুদ্ধ। স্বপ্নযাত্রার এবারের আয়োজনে থাকছে তেমনই দুই সাহসী নারীর গল্প।

সেলিয়া সানচেস মানদুলে

কিউবান বিপ্লবী নারী সেলিয়া সানচেস মানদুলে। কিউবার অরিয়েন্ত প্রদেশে তার জন্ম ১৯২০ সালের ৯ মে। celiaকথিত আছে সেলিয়া ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রেমিকা। ১৯৫২ সালের ১০ মার্চ বাতিস্তার অভ্যুত্থানের পরই সংগ্রামী হয়ে ওঠেন সেলিয়া।

ফ্র্যাঙ্ক পিয়াসের সঙ্গে গড়ে তোলেন নিজস্ব স্কোয়াড। সেলিয়ার কাজ ছিল কিউবার সাউথ-ইস্ট কোস্ট থেকে বিপ্লবীরা যাতে নিরাপদে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেওয়া। এরপর ১৯৫৭ সালের দিকে গেরিলা বাহিনীতে যোগ দেন সেলিয়া। সেখানে একজন বার্তা বাহক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

সেলিয়া ফুলের মধ্যে করে বার্তা পাঠাতেন। এ কারণে সেই বার্তা কখনও শত্রু পক্ষের হাতে ধরা পড়তো না। বিপ্লবীদের জেনারেল স্টাফের একজন সদস্য হিসেবে চে গুয়েভারা এবং অন্যান্যদের অস্ত্র এবং মাঝে মাঝে খাবার ও ওষুধ সরবরাহের কাজ সফলতার সঙ্গে করতেন সেলিয়া।

ধীরে ধীরে তিনি ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ক্যাস্ত্রোর চিকিৎসক রেনে ভাল্যাজোর সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৮২ সালে হুট করেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সে বছরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।

leila-khaledলায়লা খালেদ

লায়লা খালেদ ছিলেন বিমান হাইজ্যাক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। লায়লাকে পরে তার সহকর্মীরা নাটকীয়তার মাধ্যমে মুক্ত করে আনেন। লায়লা খালেদের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৯ এপ্রিল। লায়লা খালেদ জন্মগ্রহণ করেন হাইফা শহরে।

লায়লা ও তার পরিবার ১৯৪৮ সালে লেবাননে চলে আসেন। ছোটবেলা থেকে লায়লা তার বড় ভাইকে অনুসরণ করতেন। তার বড় ছিলেন ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের একজন অগ্রগামী সদস্য। বড় ভাইয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে লায়লা যোগ দেন ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে।

লায়লা খালেদ লাইমলাইটে আসেন ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট রোম থেকে এথেন্সের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি বিমান হাইজ্যাকের মাধ্যমে। লায়লা দাবী করেন, হাইজ্যাকিংয়ের সময়ে কোনো যাত্রী আহত বা নিহত হননি।

এ হাইজ্যাকিংয়ের সময় তার একটি ছবি তোলা হয়। যেখানে তিনি একে-৪৭ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ ছবিটি পরে হয়ে যায় ইতিহাস। এখনও পোস্টার হিসেবে বহু বিপ্লবীর অন্তরে সাহস জোগায় লায়লা।

সাহস ও চালাকী কোনোটাতেই পিছিয়ে ছিলেন না লায়লা খালেদ। প্লেন হাইজ্যাকিংয়ের ছবি বিশ্বমিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তিনি নাক ও চিবুকে ৬টি প্লাস্টিক সার্জারি করেন। চেহারার ধরণ পাল্টে ফেলেন লায়লা।

লায়লা সবসময়ই আরব-ইসরায়েলে শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। লায়লা মনে করতেন, বর্তমান সময়ে যে প্রক্রিয়ায় শান্তির কথা বলা হয়, তা মোটেও শান্তির পথ নয়। এ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে ইসরায়েলের হাতেই সবধরনের তাস তুলে দেওয়া হয়েছে।

বিপ্লবের অংশ হিসেবেই তিনি ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিলের একজন সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। এতে করে বিশ্বের কাছে নিজের মনের কথা সোচ্চারভাবে যেন বলতে পারেন।

ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক লিনা মকবুল এর ডকুমেন্টারি ‘হাইজ্যাকার- দ্য লাইফ অব লায়লা খালিদ’ নির্মাণ করেন। ডকুমেন্টরিটি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।