ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০২ সফর ১৪৪৭

ফিচার

ইতিহাসের এই দিনে

অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১২, জুলাই ২৮, ২০২৫
অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু

১৯১৪: সার্বিয়ার একটি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’‑এর সদস্য গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ ১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার সারাজেভো শহরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফার্দিনান্দ এবং তার স্ত্রী সোফি‑কে হত্যা করে। এক মাস পর, অস্ট্রিয়া‑হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এতে রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো শক্তিশালী দেশগুলো নিজ নিজ জোটের পক্ষে একে একে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ‘দ্য গ্রেট ওয়ার’ যা পরে পরিচিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নামে। যুদ্ধ চলে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। এতে অন্তত ৭ কোটি সৈন্য অংশগ্রহণ করে এবং প্রায় ১.৭ কোটি মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিল সাধারণ মানুষ।

যুদ্ধে মূল দুই জোট ছিল ‘কেন্দ্রীয় শক্তি’ ও ‘মিত্র শক্তি‘ । অস্ট্রিয়া‑হাঙ্গেরি, জার্মানি, অটোমান সাম্রাজ্য, বুলগেরিয়া ছিল কেন্দ্রীয় শক্তি আর মিত্র শক্তি হলো ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র (১৯১৭ সালে)।  

যুদ্ধের পর অস্ট্রো‑হাঙ্গেরি, অটোমান, রুশ ও জার্মান সাম্রাজ্য ভেঙে যায়। জাতিসংঘের পূর্বসূরি ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জার্মানিতে নাৎসি শক্তির উত্থান এই ।

১৯৭৬: উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশের তাংশান শহরে ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ৩:৪২ মিনিট এক ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৭.৫ থেকে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। চীনা সরকারের মতে এতে আনুমানিক ২,৪২,০০০ জন  প্রাণহানি হয়। অন্য সূত্র অনুযায়ী: মৃতের সংখ্যা ৬,৫০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। গৃহহীন হয় অন্তত ১৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ। পুরো শহর মাত্র ১৫ সেকেন্ডে ধ্বংস হয়ে যায়। শহরের ৯০% ভবন ধসে পড়ে।

রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের উপর ছাদ ভেঙে পড়ে, যার ফলে নিহতের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও পরাঘাতমূলক ভূমিকম্প জনমনে ভয় ছড়িয়ে দেয়। পুরো শহরে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিযোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সরকারি সহায়তা পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। হাজার হাজার পরিবার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যায়।  

এই সময় চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ছিল মাওবাদী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের শেষ পর্যায়ে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ভূমিকম্পের প্রকৃত তথ্য অনেকাংশে গোপন রেখেছিল। কিছু গবেষক বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাব ছিল রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার নিদর্শন।

২০০৫: দীর্ঘ ৩০ বছরের রক্তাক্ত সংঘাতের পর ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই, আয়ারল্যান্ডের অন্যতম আলোচিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় জানায়, তারা চিরতরে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করছে এবং ভবিষ্যতে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার করেছে। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড উভয় সরকারের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়।

আইআরএ‑এর ঘোষণাটি আসে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যেখানে উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৯৬৮ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চলা এক রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব চলেছে, যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয়  ‘দ্য ট্রাবলস’। এ সংঘাত ছিল মূলত ক্যাথলিক জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে প্রটেস্ট্যান্ট ইউনিয়নিস্টদের মধ্যে। জাতীয়তাবাদীরা চাইতো আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে আর ইউনিয়নিস্টরা যুক্তরাজ্যের অংশে থেকেই যাওয়ার পক্ষে

আইআরএ বহু বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ, বিস্ফোরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি কৌশলের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। লন্ডন, বেলফাস্ট ও ডাবলিনে ঘটানো বিস্ফোরণে বহু প্রাণহানি হয়। প্রায় ৩,৫০০ মানুষ নিহত এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হন। এই সংঘাত শুধু রাজনৈতিক নয়, সমাজ-সাংস্কৃতিক বিভাজনও গভীর করে তোলে। আইআরএ‑এর ঘোষণাটি ১৯৯৮ সালের গুড ফ্রাইডে চুক্তির ধারাবাহিকতার ফল। চুক্তিটির মাধ্যমে মিত্র ও বিরোধী সব পক্ষ আলোচনার টেবিলে বসে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসে।

এদিন আইআরএ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় তারা সশস্ত্র কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করছে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করবে এবং কোনো ধরনের সহিংসতা আর সমর্থন করবে না। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী বার্টি অহের্ন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এই ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।