ঢাকা: আফগান সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী— এ অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ঔপনিবেশিক ধাঁচের এক নয়া নিরাপত্তা আইন বলবৎ হয়েছে সেখানে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অ্যামেনিস্টির ওই প্রতিবেদন মতে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে সেখানে চলছে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রসঙ্গত, ওইসব অঞ্চল তালেবান আর আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনাবলীর জন্য আলোচিত। আর এখন তাতে ‘গোদেঁর ওপর বিষফোঁড়া’র মতো সেনা নির্যাতন।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকার ওইসব জনপদগুলোতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে আটক করে রেখেছে দীর্ঘকাল ধরে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী মিডিয়া ডন.কম জানায়, লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার, এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মীয়-স্বজন, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা এবং জঙ্গিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে।
সেনাবাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রমাণ তাদের সংগ্রহে আছে দাবি করে অ্যামনেস্টি জানায়, সেনাবাহিনীর হাতে আটক নাগরিকদের আদালতে সোপর্দ করা হয় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনার শিকারদের স্বজনরা জানেনই না তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উপ-পরিচালক পলি ট্রাসকোট বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর হাতে আটক হতভাগ্য ব্যক্তিদের লাশ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই স্বজনদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে, অথবা উপজাতীয় অধ্যুষিত দুর্গম এলাকাগুলোতে বেওয়ারিশ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে।
পলি আরো বলেন, পাকিস্তান সরকারের উচিৎ উপজাতি অঞ্চলে ভেঙ্গে পড়া আইনি ব্যবস্থা দ্রুত পুনর্গঠনে উদ্যোগ নেওয়া। কারণ, চিড় ধরা আইনি ব্যবস্থা সেসব অঞ্চলে নৃশংস ঘটনার ধারবাহিকতাকে জিইয়ে রেখেছে।
অ্যামনেস্টি আরো বলেছে, ওইসব ঘটনায় দায়ের হওয়া অভিযোগের সূত্রে আদালত যদিও তদন্তের নির্দেশ দেয়, কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্যকেই ওইসব হত্যা, নির্যাতন বা গুমের অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।
এসব বিষয় উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থাটি দাবি করেছে, ২০১১ সালে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীকে দেওয়া গ্রেফতার এবং বিনা বিচারে আটক রাখার ব্যাপক ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হোক। এছাড়া উপজাতি এলাকাকে আদালত ও সংসদের এখতিয়ারে আনারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তান সরকার দাবি করে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ ঘটনার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসজনিত কারণে এ যাবত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটির সেনাবাহিনী বছরের পর বছর ধরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় নিজদেশি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
এদিকে, অ্যামনেস্টির রিপোর্ট প্রসঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা পুরো রিপোর্টটি পড়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে একইসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার প্রতিবেদনে, মানবাধিকারকর্মী, সাহায্যকর্মী, সাংবাদিক এবং সন্দেহভাজন গুপ্তচরদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গি দলগুলোর বিরুদ্ধে।
বিবিসি উর্দু সার্ভিস জানায়, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আটকের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে থাকে তালেবানরা। এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব এলাকায় তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর শক্ত অবস্থান রয়েছে, সেসব এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো নির্মম নৃশংস আর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আল-শাম্সদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের ওপর পাইকারি হারে যে পৈশাচিক অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়, তার ভয়াবহতা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তবে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় রমনা রেসকোর্সে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে যবনিকাপাত হয় বাংলাদেশে তাদের চালানো আতঙ্কের দীর্ঘ প্রহর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১২
একে;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর