ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বারকোডের জনক উডল্যান্ড

বাবু আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৩, ডিসেম্বর ১৭, ২০১২
বারকোডের জনক উডল্যান্ড

এ সময়ে আধুনিক বাজারগুলোও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। বড় বড় সুপার শপগুলোতে গেলেই দেখা যাবে সব পণ্যের গায়ে বারকোড দিয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।



পণ্যের প্যাকেটে দেখা যায় কয়েকটি কালো সরলরেখার দাগ। এগুলোই মূলত বারকোড নামে পরিচিত। বারকোডে পণ্য সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য দেওয়া থাকে। এসব লেজার যন্ত্রের মাধ্যমে পড়া যায়।

বাজারে পণ্যের তো অভাব নেই। সব পণ্যের তথ্য সংরক্ষণ করা সময়সাপেক্ষ। এটা সমস্যাও বটে। একবার এক সুপারশপের কর্মকর্তা কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রধানকে এ সমস্যা থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়ে গবেষণা করার অনুরোধ জানান।

দুই বন্ধু উডল্যান্ড এবং বার্নার্ড সিলভারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুজনই তখন পড়াশোনা করছেন ড্রেক্সেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। প্রকৌশল বিভাগের প্রধান এ বিষয়ে খুব একটা মনোযোগ না দিলেও দু বন্ধুর ভাবনা সেখান থেকেই শুরু।

বার্নার্ড ও উডল্যান্ড সব পণ্যের তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা শুরু করলেন। প্রাথমিক কিছু কাজ করার পরে উডল্যান্ড তার বন্ধুকে বলেন, এটা সম্ভব!

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করে উডল্যান্ড তখন মার্কিন সামরিক বাহিনীর আনবিক বোমা উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন। ঠিক তখনই তিনি বারকোড নিয়ে কাজ শুরু করেন। কাজের চাপ সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছিল।

অনেককিছু ভেবেই মাস্টার্স ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর চাকরি ছেড়ে চলে যান দাদার কাছে মিয়ামিতে। সেখানেই বসেই ভাবতে থাকেন। কিভাবে সিম্বলের সাহায্যে একটি পণ্যের সব তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।

কাজ শুরু করেই দেখলেন এখানে মোর্স কোডের প্রয়োজন। মোর্স কোড হচ্ছে ক্ষুদেবার্তাকে শব্দ কিংবা আলোর সিগনালে রুপান্তরিত করা। তখন ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা কাজে লেগে গেল। এ মোর্স কোড তিনি বয়স্কাউটে থাকতে শিখেছিলেন।

এসব ভাবতেই ভাবতেই একদিন তিনি সৈকতে বসে নিজ মনে মোর্সকোড এবং ড্যাশ তৈরি করছিলেন। আঙ্গুল দিয়ে দাগ দিচ্ছিলেন সমুদ্রের বালুতে। হুট করেই খেয়াল করে দেখেন প্যারালাল লাইনের আকার হয়ে যাচ্ছে। তখনই মোর্স কোডের ধারণা থেকে তিনি সোর্স কোডের ধারণা পান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই মুহূর্তটি ছিল নতুন করে শুরু করার।

১৯৪০ দশকে বন্ধু বার্নার্ড সিলভারের সঙ্গে এক অনন্য মোটা এবং সরু লম্বাদাগের সারি সিস্টেম তৈরি করেন। ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর বারকোডের পেটেন্ট পান উডল্যান্ড ও তার বন্ধু সিলভার। এ পেটেন্ট পরবর্তীতে মাত্র ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়।

প্রসঙ্গত, উডল্যান্ড ১৯৫১ সালে বারকোড নিয়ে আরও কাজ করার জন্য আইবিএম প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু তখনও বারকোড রিড করার মতো উন্নত প্রযুক্তির লেজার আবিষ্কৃত হয়নি। এ জন্য ১৯৭৪ সালের আগে বারকোড ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছিল না।

অবশ্য তারও আগে ৭০ দশক থেকে উন্নত লেজার প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ শুরু করেন উডল্যান্ড। এটা অবশ্য আইবিএম প্রতিষ্ঠানের যোগদানের পর। সেখানে আরেকটি গবেষকদল বারকোড পড়তে পারে এমন একটি লেজার প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করছিল।

আইবিএময়ের গবেষকদল চারকোণা বারকোড আবিষ্কার করে। সবার প্রথম ১৯৭৪ সালের জুন মাসে একটি চুইংগামের প্যাকেটে বার কোড ব্যবহার করা হয়।  

অসাধারণ এ বিজ্ঞানীকে বলা হয় বারকোডের জনক। যদিও ‍তার বন্ধু বার্নার্ডকেও বলা হয় বারকোডের প্রতিষ্ঠাতা। উডল্যান্ডের এ আবিষ্কারের ফলে বিশ্ব দুই দশক এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানের এ বিজয়ী মানুষটি ৯১ বছর বয়সে গত ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক/ সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।