ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে স্মাইল ফাউন্ডেশন

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৮, ডিসেম্বর ১৮, ২০১২
মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে স্মাইল ফাউন্ডেশন

ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে হৈচৈ পড়ে গেল। কয়েকশ শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে দেখে সবাই বিস্মিত।

কেউ এখানে নৌকা ভ্রমণে আসেনি। এরা কেউ মানববন্ধনও করবে না। বড় বড় লেন্স লাগিয়ে ক্যামেরায় বুড়িগঙ্গার নোংরা ছবিও তুলবে না। তাহলে ওরা কি করছে এখানে? এমন প্রশ্ন সেদিন নদী তীরের মানুষগুলোর মনে।

পরে সবাই জানতে পারে, ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী মিলে বুড়িগঙ্গা নদী পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী একসঙ্গে হয়ে অনেক নৌকা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম এবং প্রস্তুতি নিয়ে নেমে পড়েছে বুড়িগঙ্গা নদী পরিষ্কার করতে। এমন উদ্যোগের কথা শুনতেই খোঁজ নিতে ইচ্ছে হয় এরা কারা। তখনই জানতে পারি, ‘স্মাইল ফাউন্ডেশন’ নামে সংগঠনটির নাম।

স্মাইল ফাউন্ডেশন শুরু হয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে। তখন ফেসবুকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সব কাজ। এ বিষয়ে স্মাইল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী তাইফ সাদাত বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে ভেবেছিলাম ছোট করে কিছু করার কথা। মানুষের জন্য ছোট করে হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলাম। আমার মায়ের নাম ‘হাসি’। সেখান থেকে স্মাইল ফাউন্ডেশন নামটা ঠিক করেছি।

মায়ের মুখে হাসি দেখলে পৃথিবীর সব মানুষের মনই শান্তিতে ভরে ওঠে। তাই আমি প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। সে জন্যই স্মাইল ফাউন্ডেশনের যা করা প্রয়োজন সব কিছুই করতে প্রস্তুত।

স্মাইল ফাউন্ডেশন শুরু করতে গিয়েই তাইফ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক পেয়ে যান। তার পাশে দাঁড়ায় অসংখ্য নিবেদিত তরুণ। তাদের সবার উদ্যোগেই এগিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠন।

স্মাইল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, ধানমন্ডি লেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তাইফ সাদাত ও তার বন্ধুরা মিলে ছিন্নমূল শিশুদের জন্য ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনারত তরুণরা নিজ খরচে ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ইন্টার্ন ডাক্তারদের নিয়ে চলে যান শহরের বিভিন্ন বস্তিতে। দেওয়া হয় ফ্রি চিকিৎসা।  

তাইফ আরও জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধপল্লীতে সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যায় স্মাইল ফাউন্ডেশনের তরুণরা। তারা সেখানে জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে হাজির হন।

এছাড়াও দেশের দক্ষিণের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক উপকূলীয় ঝড়ে কয়েক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক জেলে সমুদ্রে নিখোঁজ হন, নৌকা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে হতাশাগ্রস্থ। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবেনি। খুব একটা গুরুত্বও পায়নি উপকূলীয় অঞ্চলের এ ঘটনা। সেখানে পৌঁছায়নি প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীও। কিন্তু নিজের দল নিয়ে ঠিকই সময়মত পৌঁছে গেছে স্মাইল ফাউন্ডেশন।  

তারা সবাই নিজ উদ্যোগ নিয়ে কয়েক টন শুকনো খাবার, ওষুধ ও খাবার পানি নিয়ে হাজির হয়েছেন ভোলার মনপুরা সহ নদীবেষ্টিত দুর্গম জনপদে। সেখানে হাজার হাজার অনাহারী মানুষের চরম দুর্দশা দেখে বিস্মিত সবাই। মানুষের কষ্ট যেন তাদের সেদিন হার মানিয়েছে।

স্মাইল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠছে স্কুল। ছিন্নমূল শিশুদের জন্য এ স্কুলকে আদর্শ স্কুল হিসেবে গড়ে তুলতেই তাদের যত প্রচেষ্টা। এখন পর্যন্ত চলনবিল ও ঢাকায় তাদের স্কুল হয়েছে। কোমল শিশুদের শিক্ষা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় হবে। উদ্যোগী হবে। দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবে। এমনই স্বপ্ন স্মাইল ফাউন্ডেশনের।
 
তাইফ জানায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে গড়ে তোলা হবে স্মাইল ফাউন্ডেশনের স্কুল। ধীরে ধীরে দেশের দূর্গম এলাকাতেও স্কুল গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর তাইফ।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ছাড়া এ জাতি কখনই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা যারা উপর তলার মানুষ তারা খুব সহজেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের হাজার ‍হাজার মেধাবী শিশু শুধুমাত্র সুযোগের অভাবে ঝরে পড়ছে। আমি চেষ্টা করবো এরা যাতে কোনোভাবেই ঝরে না পড়ে।

শুধু প্রাইমারি শিক্ষাদানই নয়। তাইফ তাদের উচ্চ শিক্ষারও ব্যবস্থা করে দিবেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন। একদিন স্মাইল ফাউন্ডেশনের স্কুল থেকে পাশ করে শিক্ষার্থীরাই দেশের উচ্চ পদে চলে যাবে। এমনই স্বপ্ন দেখে তারা।

তাদের নানান উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সম্প্রতি তারা রাজধানী ঢাকার এক অভিজাত হোটেলে কনসার্টের আয়োজন করে। সেখানে টিকিট হিসেবে ছিল, পুরানো শীতবস্ত্র। যারা তিনটা কাপড় দান করবে; তাদেরই মিলবে কনসার্টের টিকিট। এ কাপড়গুলো তারা নিয়ে গেছে দেশের দূর্গম অঞ্চল পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম।    

স্মাইল ফাউন্ডেশন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। অসহায় মানুষকে বলতে চায়, তোমরা একা নও; এগিয়ে যাও। আমরা তোমাদের পাশে আছি।  

স্মাইল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তাইফ বলেন, আমরা মানুষের অর্থ সাহায্য চাই না। আমরা চাই সবাই আমাদের পাশে থাকুক। যখন যে উদ্যোগ আমরা নেব তখন যেন সবাই আমাদের পাশে থাকে। এটাই যথেষ্ঠ।  

স্মাইল ফাউন্ডেশন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ওয়েবসাইটে। লিংক (http://www.smilefoundationbd.org/)। এছাড়াও ফেসবুক সদস্য হতে হলে ভিজিট করুন (https://www.facebook.com/groups/smilefoundbd/?ref=ts&fref=ts)।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।