ঢাকা: প্রাচীন সৈকত, সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ, সূর্যের ঝলমলে আলো আর গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু—কি নেই কক্সবাজারে? একটি আদর্শ অবকাশযাপন কেন্দ্রে যা যা থাকা দরকার, তার সবই আছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এ সৈকতে।
১০০ কিলোমিটারেরও বেশি সৈকত নিয়ে কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত।
বুধবার বিবিসিতে প্রকাশিত এসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব কথা হয়েছে।
এতে বলা হয়, গ্রীষ্মকালীন এই স্বর্গকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্টদের আকৃষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকার আশা করছে, আগামী ১০ বছরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় হবে এ খাতে। তবে কক্সবাজার সৈকতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলেই একে দুরাশা বলে মনে হবে।
কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনো উদ্যোগ না নিলে অচিরে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পারে।

কয়েক দশক আগেও এটি ছিল ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত নগরীর বাসিন্দাদের জন্য একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার স্থান। কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বহুতল হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট, রেস্টুরেন্ট একসময়ের মনোরম দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। এমনকি মূল সৈকতে গেলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাস্ট ফুড, স্যুভনির, খেলনার দোকান চোখে পড়বে, যা খুবই দৃষ্টিকটু। এখনও এলাকা জুড়ে অপরিকল্পতি নির্মাণ কাজ চলছে।
পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, এখনই যদি উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে চিরকালের মতো সৌন্দর্য হারাতে পারে পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত।
২০১১ সালে যদিও আদালত কক্সবাজার সৈকত থেকে সব রকম অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার আদেশ দিয়েছিলেন, কার্যত তার কোনো ফলাফল দেখা যায়নি। আদেশ কার্যকর করার জন্য একটি সরকারি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির এক কর্মকর্তা জানালেন, কোন কোন ভবন উচ্ছেদ করা হবে, তার তালিকা করা হচ্ছে।
কিন্তু এই ধীরগতির প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এর মধ্যে মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে, ক্ষয়ে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ।
পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান কক্সবাজারের অপরিকল্পিত বসতির কথা স্বীকার করে জানান, সরকার এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। ড্রাইভের দক্ষিণ পাশে, অর্থাৎ সৈকতের দিকে যেন কোনো বাড়িঘর না থাকে সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ”
তবে সমস্যাটি শুধু কক্সবাজার সৈকত নিয়েই নয়। কাছাকাছি পাহাড়গুলোও এখন হুমকির সম্মুখীন। পাহাড় থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে বাড়িঘর তৈরির জন্য। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধস বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জুনেই এখানে পাহাড় ধ্বসে অনেক মানুষ নিহত হয়েছিলেন, ধ্বংস হয়েছিল বাড়িঘর।
সৈকতে আসা পর্যটকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও সেখানকার পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে। তারা প্রায়ই স্যুভনির হিসেবে শামুক, ঝিনুক, প্রবাল নিয়ে যান। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেন্ট মার্টিনের মতো দ্বীপগুলো থেকে প্রচুর শামুক, ঝিনুক, প্রবাল সংগ্রহ করছে, যা সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।

কক্সবাজারে আগত লাখ লাখ পর্যটন এলাকার পরিবেশ দূষণেও প্রচুর ভূমিকা রাখছেন। সৈকত এলাকায় গেলেই দেখা যাবে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া খালি প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি। একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্রের জন্য যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকার বলছে, ইতোমধ্যে কক্সবাজারের গড়ে ওঠা বাড়িঘর নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতোটুকুই কক্সবাজারকে বাঁচাতে যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরকার আরও আশা করছে, ২০২১ সালের মধ্যে কক্সবাজারে আগত বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অন্তত দশ লাখে উন্নীত হবে। পর্যটন খাতের আয় বাড়ার পাশাপাশি এর ফলে অন্তত পাঁচ লাখ নতুন চাকরির সৃষ্টি হবে। কিন্তু এ বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকৃষ্ট করার জন্য কক্সবাজারকেও তার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।
এর আগে কখনোই পর্যটন শিল্প তেমন গুরুত্ব পায়নি বাংলাদেশে। কিন্তু ঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে এই পর্যটনই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের চিত্রও পালটে দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১২
আরআর