স্নায়ুযুদ্ধকালে এই বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছিল সম্ভাব্য মার্কিন পারমানবিক হামলার ভয়াবহ পরিস্থিত থেকে সোভিয়েত নেতাদের রক্ষার জন্য। বাঙ্কার-৪২ নামে পরিচিত এই ভূ-অভ্যন্তরস্থ বিশাল কেবিনটি বর্তমানে আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
সেন্ট্রাল মস্কোয় ক্রেমলিনের কাছেই ভূ-পৃষ্ঠের ৫৬ মিটার গর্ভীরে (১৮৪ ফিট) অসংখ্য লাল রঙের অ্যালার্মবাতি সমৃদ্ধ এই বাঙ্কারে একত্রে ৩০০ জনের পার্টি করার মত সুবিধা রয়েছে। বাঙ্কারটিকে মায়ান বা মায়াদের কথিত ভবিষ্যৎবাণী মোতাবেক আগামী ২১ ডিসেম্বরের পৃথিবী ধ্বংসের দিনটিতে নিরাপদে থাকার আশ্রয়স্থান হিসেবে দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা। শুধু দাবিই নয়, মওকামত এ সূত্রে কিছুটা নগদ আয়ের সুযোগও হাতছাড়া করতে চাইছে না তারা। এজন্য ওই বাঙ্কারে এক জম্পেশ পার্টির আয়োজন করেছে তারা যাতে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০০০ মার্কিন ডলার।
এ প্রসঙ্গে আলেক্সি পাবলোভস্কি নামে মস্কোর এক ট্যুর গাইড বলেন, জটিল-সংকটপূর্ণ ওই দিনটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আর আরাম-আয়েশে কাটাতে পারলে অনেকের জন্যই তা হবে বেশ স্বস্তিকর।
পাবলোভস্কি আরও বলেন, তবে বাঙ্কার-৪২ এর ভেতরে পার্টি আয়োজনের আইডিয়াটা এসেছে দর্শকদের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, কেয়ামতের মত বিষয়ের ওপর আমাদের হাত নেই। তবে আমরা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য বেশ ভালমতই প্রস্তুতি নিয়েছি।
ব্যাপক আকর্ষণ সমৃদ্ধ ওই পার্টি শুরু হবে ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে। চলবে পরবর্তী (কেয়ামতের!) পুরোটা দিন।
“বাঙ্কারটি আকারে বিশাল আর এখানে সবকিছুই এমনভাবে সাজানো-গোছানো যে লোকজন নিজেদেরকে বেশ নিরাপদ বোধ করবে। এটি উষ্ণ ও আরামদায়ক আর একইসঙ্গে স্বস্তিপূর্ণ স্থান যেটা শুধু একদিন বসবাসের জন্য নয়, এটি পুরোপুরি একটি যুদ্ধকাল এমনকি পৃথিবীর বিনাশকাল পর্যন্ত সমযের জন্য নিরাপদ আবাস হতে পারে,” গত বুধবার বাঙ্কার-৪২ ভ্রমণকারী ছাত্রী আনা এ মন্তব্য করেন।
১৯৫৬ সালে নির্মিত বাঙ্কার-৪২ এর ওই পার্টির সুযোগ-সুবিধাদি সম্পর্কে পাবলোভস্কি বলেন, সেখানে কার্টন দেখার সুবিধাসহ শিশুদের জন্য আলাদা স্থান থাকবে, বড়দের জন্য থাকবে সিনেমা বিশ্বের বিলোপ সম্পর্কিত আলোচনা এবং মিউজিয়াম পরিদর্শন। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের বাঙ্কার থেকে প্রচারিত সরাসরি সচিত্র প্রতিবেদন প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
যথাসময়ে বাঙ্কারে প্রবেশের পর ২১ ডিসেম্বরের অতিথিদের লিফটে করে নিমেষেই নিয়ে যাওয়া হবে ১৮ তলা নিচের অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ বাঙ্কার-৪২ এর গোলকধাঁধাঁপূর্ণ এলাকায়। সেখানে অবতরণের পরপরই উচ্চশব্দের লাউডস্পিকারে তাদের স্বাগত জানানো হবে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সতর্কবাণী দিয়ে, “সবার দৃষ্টি আর্কষণ করছি! সবার দৃষ্টি আর্কষণ করছি! শত্রু আমাদের ওপর পরমাণু বোমা হামলা করেছে। ”
এদিকে, দুনিয়ার অন্যান্য দেশের বিভিন্ন পর্যটক আবাসস্থলগুলোও ২১ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে শঙ্কিত মানুষজনকে তাদের আতিথ্য নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যেমন সার্বিয়ার রটাঞ্জ পার্বত্যাঞ্চলের একটি আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের ভবনটিকে ‘২১ ডিসেম্বরের প্রলয়’ থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ স্থান বলে প্রচার করে সেই বিশেষ দিনটির জন্য গ্রাহক টানছে। তারা বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে ওই পার্বত্যাঞ্চলের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ২০ ডিসেম্বর, ২০১২
একে