ঢাকা: ‘ঠাণ্ডার দিনে মাইনষে কম খায়, তাই রাত তিনটা পর্যন্ত থাকতে হয়। ” জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাস্তার আইল্যান্ডের ওপর ভাত বিক্রি করার ফাঁকে শীতে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলছিলেন রীনা বেগম।
খোলা আকাশের নীচে দরিদ্র মানুষের হোটেল চালান রীনা। ক্রেতাদের বসার জন্য নেই চেয়ার-টেবিল। হাতে প্লেট নিয়েই খেতে হয় সবাইকে। ভাত আর ৩ পদের তরকারি থাকে তার রেস্টুরেন্টে। বিক্রি শুরু করেন রাতে। দুপুরে রোদ থাকে বলেই রাত বেছে নিতে হয় তার।
শীত বেশি থাকলে বিক্রি কম হয় বলেই শীতের ওপর তার ক্ষোভ। চাঁদুপরের এই নারী থাকেন লালবাগে। রাত ৯টার থেকে ৩টা পর্যন্ত ভাত বিক্রি করেন। সঙ্গে থাকে আলু ভর্তা, সবজি, ডিম ভাজি ও ডাল। প্রতি প্লেটের দাম ২০ টাকা!
তার ক্রেতারা সবাই সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর। বিশেষ করে রাতের রিকশা চালক ও ফেরিওয়ালারা। কথার এক ফাঁকে জানিয়ে দেন, গরমের সময় রাত ১টার মধ্যে সব খাবার বিক্রি হয়ে যায়।
প্রতিদিন কতো প্লেট বিক্রি হয় তা বলতে না পারলেও রীনা বলেন, ‘দিনের ৫শ’ ট্যাকার বাজার করি। সব বিক্রি হলে ১৫০-২০০ ট্যাকা লাভ থাহে। জিনিসের দাম বেশি, লাভ কম হয়। ”
ডিম ভাজিসহ ২০ টাকায় এক প্লেট খাবার বিক্রি করলে লাভ কম হয় কিনা জানতে চাইলে রীনা বলেন, “২টা ডিম একলগে ভাইজা ৩ পিস করি। খাবারের দাম বেশি হইলে বিক্রি কম হইবো। ”
রীনার একটু পাশেই বসে কয়েকটি হাড়ি আর প্লেট নিয়ে বসে আছেন মাজেদা খাতুন। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। বাড়ি শরীয়তপুর। বিক্রি কম বলে একটু মন খারাপ। তবে, রাগ তার ‘কম্বলঅলা’দের ওপর। কারণ এখন পর্যন্ত তাকে কেউ কম্বল দেয়নি।
বললেন, “শীতে অনেক মানুষই কম্বল পাইছে। কম্বরঅলারা আমারে একখানও দেয় না। ”
পাশে বসে থাকা এক ক্রেতা ‘প্রাইভেটকার’ থেকে নতুন কম্বল পেয়েছেন শুনে মাজেদার হতাশা যেনো আরেকটু বাড়লো। বললেন “আমারে কেউ দেয় না। ”
বিক্রি কেমন হয় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি হলের মাগনা ভাত আনি না। সব ভাত বিক্রি না অইলে লস। ” জানিয়ে দিলেন, সবজি আর ভর্তার সঙ্গে রুই মাছও বিক্রি করেন তিনি।
মাজেদার পাশে আরও কয়েকজন নারীও বিক্রি করছেন ভাত। তবে, রীনার বিক্রিই বেশি। তার ক্রেতাদের একজন এর কারণও বললেন- “এইহানে ২০ টাকায় ডিম, ভর্তা আর সবজি পাওয়া যায়। এইডা আমাগো রেস্টুরেন (রেস্টুরেন্ট)। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১২
এসএইচ/সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর