ফিল বসুয়া। ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার।
একটি ব্যান্ডও তৈরি করলেন। নাম দেন প্রপেলার। বেশ কটি কনসার্ট করার পর আবার গানের প্রতিও অনীহার সায়। তবে কনসার্ট করার সময় লাইটিং করার দৃশ্যটা তাকে বরাবরই মুগ্ধ করত।
যাহোক। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর গানেও তার কিছু করা হলো না। হুট করে মাথায় চেপে বসল নতুন ভুত। আর তা হলো স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ তৈরি করবেন। কখনও কোডিং নিয়ে কাজ করেননি। কিন্তু আগ্রহ তৈরি হলো। সিদ্ধান্ত নিলেন। কোডিং নিজে নিজে শিখে অ্যাপ তৈরি করবেন।
বই পড়ার জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করলেন। আশ্চর্য ঘটনা হলো তার এ অ্যাপটি ডাউনলোড হয় ৬০ লাখ বার। তিনি এ সম্পর্কে বলেন, এটা করতে গিয়ে ভাবলাম স্মার্টফোন দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
এমনই অদ্ভুত খেয়ালী হলো বসুয়া। তার বয়স ৩৮। একেকবার একেক নেশায় মত্ত হওয়াটাই তার স্বভাব। জীবনের মূল্য তার কাছে নতুন কিছু করা। নতুনত্ব না থাকলে, তিনি যেন কিছুই ভাবতে পারেন না। তবে এখনও কাজ করছেন নতুন কিছু নিয়েই।
শুরুতেই বলেছি, কনসার্ট করার সময় তিনি সব সময় লাইটিং দেখে মুগ্ধ হতেন। এজন্য আলোর খেলার দিকেই মন দিলেন আবার। তিনি একটি বাল্ব বানাবেন বলে ঠিক করলেন। এটি হবে অসাধারণ শক্তি সম্পন্ন। প্রায় ২৫ বছর হবে এর মেয়াদ। চাইলে ইচ্ছামতো আলোর রঙও বদলে দেওয়া যাবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করবে স্মার্টফোন। আলো বাড়ানো, কমানো থেকে শুরু করে রঙ বদলের খেলাও খেলবে এ বাল্ব।
বলে রাখা দরকার দরকার, কবে এ বাল্বের কথা তিনি ভাবলেন। ২০১২ সালের এপ্রিলেই এক বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিচ্ছিলেন বসুয়া। বন্ধু গল্পের সময় হুট করেই বলে ওঠে, আচ্ছা এ বাল্বকে কি তারহীন (ওয়্যারলেস) করা যায় না? বসুয়া একটু ভেবেই বললেন, পারার কথা। আমরা তো মনে হয় মোবাইল দিয়েও একটা বাল্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বন্ধু তখন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। বসুয়া এ হাসিতি খুব একটা পাত্তা দেননি। তবে ঘরে এসেই এ নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করেন। খুঁজতে গিয়ে দেখেন জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ফিলিপস ওয়্যারলেস বাল্ব তৈরি করেছে। এ জন্য প্রয়োজন একটি রাউটার। বসুয়া তখন হাসতে হাসতে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাহলে তো কাজের সুযোগ থেকেই গেলো।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে বাল্ব নিয়ন্ত্রণ করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি বসুয়ার। সময় লেগেছে মাত্র ছয় মাস। এ অল্প সময়েই মধ্যেই বেসিক সার্কিট ডিজাইন এবং কোডও তৈরি করে ফেলেন।
তবে তৈরি করলেই তো হবে না। চাই অর্থের যোগান। মানুষের নাগালে তো যেতে হবে। তিনি অর্থ সংগ্রহ শুরু করলেন। পরীক্ষামূলক পদ্ধতি দেখে সবাই মুগ্ধ। এক সপ্তাহে তিনি পেয়ে যান ১৩ লাখ ডলার। এরপর তিনি আর অর্থ তোলেননি। তিনি ঘোষণা দিলেন, এ মুহূর্তে আমি ২২ হাজার বাল্ব তৈরি করতে পারবো। বাল্বের নাম দিলেন ‘লাইফএক্স’।
বসুয়া এখন প্রাতিষ্ঠানীকভাবে বাল্ব উৎপাদন করছেন। বাল্ব কেনার পদ্ধতিটাও চমৎকার। তার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে বাল্বটি কিনতে হবে। এ জন্য গুণতে হবে ৭৯ ডলার। এর উচ্চমূল্য সম্পর্কে বসুয়া বলেন, এখন পরীক্ষামূলক। তাই দাম বেশি। উৎপাদন যখন বাড়বে তখন দামও কমে আসবে। এ ছাড়াও বাল্বের ভোক্তারা কতটা সন্তুষ্ট হয়, তাও দেখার বিষয়।
অস্ট্রিলিয়ার মেলবোর্ন শহরে কাজ হচ্ছে বসুয়ার প্রতিষ্ঠানে। আটজন কর্মচারি নিয়ে চলছে আলোর খেলা খেলতে সক্ষম এমন বাল্ব। তার এ উদ্যোগে হাত বাড়িয়েছেন অস্ট্রিলিয়ান নাগরিকেরা। অস্ট্রিলিয়ার একজন জনপ্রিয় ব্যবসায়ী তাকে ২০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন।
তিনি বসুয়া সম্পর্কে বলেন, এ পাগল ছেলেকে আমি অনেকদিন ধরেই চিনি। ও একটা পাগল। যখন যা মাথায় আসে তাই করে। আর তাতে সফলও হয়। এ জন্য ওর কাজে অর্থ অনুদান দেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই। আমি জানি, ও এটাতেও সফল হবে।
ফিল বসুয়া এখন কাজ করেই যাচ্ছেন। কখনও গান, কখনও কোডিং আর এখন আলোর খেলা নিয়ে মত্ত। হয়ত এখানে সফল হওয়ার পর আবার বদলে যাবে তার ভাবনার বিষয়। এভাবেই বসুয়া এগিয়ে যাচ্ছেন। এমন উপভোগ্য জীবন তো লোভনীয়। সঙ্গে শিক্ষণীয়ও। আবিষ্কারেই যেন বসুয়ার আনন্দ।
বাংলাদেশ সময় ১৪৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান