ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মনমোহনের ‘ঠিক হ্যায়’ কাণ্ডে ৫ দূরদর্শনকর্মী সাসপেন্ড

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৯, ডিসেম্বর ২৫, ২০১২
মনমোহনের ‘ঠিক হ্যায়’ কাণ্ডে ৫ দূরদর্শনকর্মী সাসপেন্ড

ঢাকা: দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল জাতিকে শান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ‘ঠিক হ্যায়’ (অর্থাৎ ঠিক আছে তো!) কাণ্ডে শেষ তক চাকরি হারিয়েছেন ভারতীয় সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দূরদর্শনের ৫ কর্মী।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত বাসে ডেন্টাল কলেজ ছাত্রী গণধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ বিক্ষোভে রাজধানী নয়াদিল্লিসহ সারা ভারত এখন উত্তাল।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা ‍বাহিনী কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ধর্ষকদের চরম শাস্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠা আপামর জনতাকে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সোমবার সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, “আমি নিজে ৩ কন্যার পিতা। তাই এ ঘটনার মর্ম অনুধাবন করতে পারি। তাই জনগণ যে ক্রোধ প্রদর্শন করছে, আমি মনে করি তা জায়েজ (বৈধ)। কিন্তু এর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সহিংসতা না করার অনুরোধ করছি। ”

তবে এক মিনিটব্যাপী সংক্ষিপ্ত ওই ভাষণ শেষ করেই মনমোহন ভাষণ সম্প্রচারের দায়িত্ব পালনরত দূরদর্শন ক্রুদের প্রশ্ন করেন, “ঠিক হ্যায়!” তবে ওই ‘ঠিক হ্যায়’ অংশটি বেঠিকভাবে অর্থা‍ৎ অসম্পাদিত অবস্থায় ৪১টি স্টেশনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়ে যায়।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মনমোহনের ওই মন্তব্যকে নিয়ে দেশ-বিদেশে থাকা ভারতীয়দের সমালোচনামুখর, বুদ্ধিদীপ্ত আর ব্যাঙ্গাত্নক মন্তব্যে সয়লাব হয়ে যেতে থাকে টুইটারসহ সামাজিক ওয়েবসাইটগুলো।

সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তীক্ষ্ণ-আক্রমণ আর শ্লেষাত্মক মন্তব্যের জোয়ার বয়ে যায় যেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ওই মন্তব্যগুলো নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও করে। এ ঘটনা মনমোহনের জন্য ব্রিবতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মন্তব্যগুলোতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির উচিৎ ছিল এ ধরনের ভাষণের আগে রিহার্সেল করা...এ ধরনের আবেগ ঘন বিষয়ে তার ভাষণ ছিল শুষ্কং কাষ্ঠং ধরনের... ঠিক হ্যায়, কিন্তু সমগ্র দেশকে ধর্ষণ করাটা ঠিক হচ্ছে না...সহ অনেক ধরনের মন্তব্য।

এর মধ্যে একজনের মন্তব্য হচ্ছে এরকম: আমাদের প্রধানমন্ত্রী নয়া আমির খান হয়েছেন আর বলছেন, অল ইজ ওয়েল (থ্রি ইডিয়ট্‌স চলচ্চিত্রের বিখ্যাত ডায়লগ) অর্থাৎ সব ঠিক আছে!

আরেকজন আরো তীক্ষ্ণ খোঁচা দিয়ে বলেন, ভাগবত গীতায় আছে— “যা ঘটে গেছে তা ঠিক আছে, যা হচ্ছে তাও ঠিক আছে আর ভবিষ্যতে যা হবে তাও ঠিকই হবে” জনাব। ঠিক আছে, রাম নাম জপুন তাহলে!

আরেকটি মন্তব্য ছিল— বন্ধুরা, ‘ঠিক হ্যায়’ কথাটি আসলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওয়্যারলেসযোগে সোনিয়া গান্ধীকে বলেছিলেন। বাস্তবিক অর্থে তিনিই (সোনিয়া) তো তার সব বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট লিখে দেন এবং তাকে পরিচালনা করেন।

এদিকে, দূরদর্শন কর্মীদের বরখাস্তকরণ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তার ভাষণ ধারণের জন্য দু’দফা স্লট বরাদ্দ করা হয় দূরদর্শন ও এএনআই-কে। তারা পুরো খামখেয়ালীপনার সঙ্গে ওই ভাষণের শেষে রাষ্ট্রপতির ‘ঠিক হ্যায়’ কথাটি এডিট না করেই ৪১টি টিভি চ্যানেলে তা সম্প্রচার করে।

অপরদিকে, ৫ দূরদর্শনকর্মীকে সাসপেন্ডের পর ফের সরগরম হয়ে উঠেছে টুইটার। একজন টুইট করেছে— দূরদর্শন কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করা হলো কিন্তু ধর্ষকরা বছরের পর পছর শাস্তি পায় না... খুব ভালো...বাস্তবিকই সব ঠিক আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।