বগুড়া: কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বগুড়াসহ দেশের অন্যান্য স্থানের গাছিরা।
কষ্ট হলেও বছরে একবারই আসা এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তারা।
রস সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে গাছ তৈরির কাজ শেষ করেছেন তারা। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হবে খেজুর রস সংগ্রহ ও খাওয়ার মহোৎসব।
শুধু রস খাওয়াই শেষ নয়, রস দিয়ে লালি ও গুড় ছাড়াও তৈরি করা হয় নানা রকম খাবার।
রস আর রসের তৈরি পিঠে মিলে শুরু হবে শীতোৎসব। পুরো শীত মৌসুম জুড়েই থাকবে এ আমেজ। আর তাইতো বহুদিন আগেই সুমিষ্ট রস সংগ্রহের জন্য গাছ বাছাই ও ঘষা-মাজাসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যার কাজ শেষ করেছেন গাছিরা।
বাংলানিউজকে গাছিরা জানান, কোমরে রশি বা দড়ি বাঁধাসহ বিভিন্ন রকম ঝুঁকি নিয়েই ছোট-বড় নানা আকৃতির খেজুর গাছ ‘তোলা-কাটা’ করে কলসি লাগাতে হয়।
তবে এসব কাজে সাপের কামড় বা মৌমাছির আক্রমণ ছাড়া পেশাদার গাছিদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না বলেও জানান তারা।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বগুড়ার শেরপুরের ভাবনীপুর, কুসুম্বী, খামারকান্দি, মির্জাপুর, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম, কাহালু উপজেলা এবং মহাস্থানগড় ও এর আশপাশের এলাকা খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
এখানকার উৎপাদিত খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পাঠানো হতো।
তবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সঠিক পরিচর্যার অভাবসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বর্তমান সময়ে খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদন এ অঞ্চলে বেশ খানিকটা কমে গেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী টুনিপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেন ও ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল রউফ বাংলানিউজকে জানান, তার জানা মতে শেরপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন গাছি শীত মৌসুমে খেজুরের রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তিনি আরও জানান, এ মুহূর্তে প্রতি লিটার খেজুর রস ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের আছির উদ্দিন, বিদুইলের আব্দুল মজিদ ও কৈগাড়ী এলাকার শাফিন বাংলানিউজকে জানান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো (এনজিও) যদি খেজুর গাছের সঠিক পরিচর্যা করতো এবং মানুষ যদি খেজুর গাছ না কাটতো তাহলে এখান থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব হতো।
তারা আরও জানান, বর্তমানে প্রতি লিটার খেজুর রস ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেও মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। কারণ, আগের তুলনায় গাছের সংখ্যা অনেক কম, তাই রসের পরিমানও অনেক কমে গেছে।
আদমদীঘি উপজেলার রেলস্টেশন এলাকার মো. আমজাদ জানান, রস সংগ্রহ ও বিক্রি করে পুরো শীতের মৌসুম তাদের সংসার ভালোই চলে। তবে আগের মতো গাছের সংখ্যা বেশি থাকলে আয় থেকে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয়ও করা যেতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১২
টিএমএম/সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর