রাবি: উচ্চশিক্ষা শেষে সবাই একটা ভালো চাকরি চায়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে চাকরি পেতে হলে নিজেকে তৈরি করতে হয়।
শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মুক্ত চিন্তা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক জ্ঞান-ধারণা চর্চার। একাজটি একা করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন একটি প্লাটফরম; যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নাতুর তরুণেরা একতাবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করবেন।
এ লক্ষকে সামনে রেখে ১৯৮৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদপত্র পাঠক ফোরাম’। কথাগুলো বলছিলেন রাবি সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সভাপতি এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বিপুল বাসব।
ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা রাবি ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী আরিফ হাসনাত দিকনির্দেশনায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে পাঠক ফোরাম সুদীর্ঘ ২৩ বছর অতিক্রম করেছে। ২৩ বছরের পথ পরিক্রমায় পাঠক ফোরাম চত্বর মুখরিত হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থীর পদচারণায়, যারা আজ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “বর্তমানে পাঠক ফোরামের স্থায়ী সদস্য ৪০০। নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থীদেরকে মেধা বিকাশে সহায়তা করতে ফোরামের প্রায় ৩০ জন তরুণ শিক্ষার্থী বিনাপারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাঠক ফোরাম একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী ও ক্যারিয়ারগঠনমূলক সংগঠন।
ফোরামের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনটির সহসভাপতি মোর্শেদা আক্তার শ্যামলী বাংলানিউজকে বলেন, “বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইছুক শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে প্রস্তুতিমূলক ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিয়মতি এসব ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কারিগরি জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তুলতে এখানে রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ দফতর; যার অধীনে ফোরামের সদস্যদের নিয়মিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফোরামের এসব ক্লাস ও প্রশিক্ষণে ফোরামের সদস্য ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। ক্যারিয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ এবং পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করার মাধ্যমে ফোরামের সদস্যরা নিজেদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য প্রস্তুত করেন এখানে।
পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনটি বনভোজন, শিক্ষাসফরসহ বিভিন্ন চিত্তবিনোদনমূলক কর্মসূচি উদযাপন করে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশ এবং সচেতন নাগরিত হিসেবে গড়ে তুলতে ফোরামের উদ্যোগে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলেও জানান তিনি।
এসব অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া ফোরামের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘ত্রৈমাসিক ফোরাম’ পত্রিকা। ফোরামের কার্যক্রম চলে সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে। সদস্যরা মাসিক ১৫ টাকা চাঁদা দেন। ফোরামের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ২১ সদস্যের একটি কার্যকরি কমিটি। ফোরামের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও মাসিক চাঁদা আদায় করা এবং কার্যকর কমিটিকে সহায়তা করতে আছে ১০০ জন হল ও ছাত্রাবাস প্রতিনিধি। প্রতিবছরের ৩ মার্চ ফেরামের কমিটি পুনর্গঠিত হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় অভিষেক।
অভিষেক অনুষ্ঠানে সদস্যদের উদ্যেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীরা। গত ২৩ বছরের পথ পরিক্রমায় ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত রাবি সংবাদপত্র পাঠক ফোরাম চত্বর ধন্য হয়েছে বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন প্রখ্যাত গুণীজনের পদচারণায়।
ফোরামের সদস্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, “পাঠক ফোরামের মতো একটি স্বেচ্ছাসেবী ক্যারিয়ারগঠনমূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর