ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

জুয়াড়িদের নতুন স্বর্গ ম্যানিলা

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৫, ডিসেম্বর ২৮, ২০১২
জুয়াড়িদের নতুন স্বর্গ ম্যানিলা

ঢাকা: এশিয়ার ক্যাসিনো স্বর্গ বলতে ম্যাকাও বা সিঙ্গাপুরের কথাই আগে মনে আসে। তবে শিগগিরই এ তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন একটি নাম- ম্যানিলা।

। শক্তিশালী অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের কল্যাণে ইতোমধ্যে ক্যাসিনোর প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গেছে ফিলিপাইনের এ রাজধানীতে।

১০২ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত ক্যাসিনো সোলায়ার ম্যানিলা আগামী মার্চেই চালু হতে যাচ্ছে। এটি তৈরি করেছেন ফিলিপাইনের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ও বন্দর ব্যবসায়ী এনরিক রাজন জুনিয়র। তিনি একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনাল সার্ভিস ও ব্লুমবেরি রিসোর্টের চেয়ারম্যান।

অবশ্য ইতোমধ্যেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে বহুমূল্য এ স্থাপনা নিয়ে। জাপানি বিলিওনিয়ার কাজুও ওকাদা এ প্রকল্পের কাজে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। ফিলিপাইন সরকার তদন্ত চালাচ্ছে তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে। ওকাদা নিজেও একই স্থান ম্যানিলা বে’তে আরেকটি ক্যাসিনো তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন।

রাজন অবশ্য দাবি করেছেন, তদন্ত তার ক্যাসিনো প্রকল্পে কোনো বাধা তৈরি করবে না। তিনি বলেন, “ওকাদা একজন বিদেশি, তিনি সম্ভবত জানেন না কিভাবে ফিলিপাইনে ব্যবসা করতে হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আকুইনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। ”

উল্লেখ্য, ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তৃতীয় বেনাইনো আকুইনো দেশটির ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

১৫ তলা, ৫০০ রুম বিশিষ্ট সোলায়ার ক্যাসিনো নির্মাণে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ৬ হাজার শ্রমিক। সারি সারি জুয়ার মেশিন আর বাতিদান এখন চালু হওয়ার অপেক্ষায়।
২৫০ একরের ম্যানিলে বে’তে আগামী তিন বছরে যে চারটি রিসোর্ট চালু হতে যাচ্ছে, সোলায়ার তার মধ্যে একটি। এটিই সবার প্রথমে চালু হচ্ছে। এ নির্মাণগুলো লাখেরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।

অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও একটি ক্যাসিনো রয়েছে, যেটি যৌথভাবে তৈরি করছেন ফিলিপাইনের শীর্ষ ধনী ও বেলে কর্পোরেশনের মালিক হেনরি সি, অস্ট্রেলিয়ান বিলিওনিয়ার জেমস প্যাকার ও হংকংয়ের ব্যবসায়ী লরেন্স হো।

অবশ্য বেশ কিছু প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হচ্ছে তাদের সবাইকেই। ম্যানিলার দুর্বল অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও দুর্নীতির মতো সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিপাইনে বৈদেশিক বিনিয়োগ সীমিত। তবে স্থানীয়ভাবে ক্যাসিনোর ব্যাপক চাহিদা, স্থানীয়দের জন্য বিশেষ ছাড়, সরকারি সহযোগিতা ইত্যাদির ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্যাসিনো নিয়ে বেশ আশাবাদী।

বর্তমানে ম্যানিলার বিভিন্ন স্থানে জুয়া খেলার সর্বনিম্ন বাজি ধরা হয় ১ ডলার। বিপরীতে চীনের শাসনাধীন ম্যাকাওতে সাধারণত জুয়ার সর্বনিম্ন বাজি ধরা হয় ৩৮ ডলার। টাকার অঙ্কের এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে চীন ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাঘা বাঘা জুয়াড়িদের নিজেদের ক্যাসিনোতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে ম্যানিলা।

এছাড়া ম্যাকাওয়ের মোট জুয়া রাজস্বের ৭০ ভাগেরও বেশি আসে জাঙ্কেটদের মাধ্যমে। জাঙ্কেট হলো এমন একটি মধ্যবর্তী দল, যারা ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জুয়াড়িদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করে ও মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা সহজ করে দেয়। ম্যানিলাও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে জুয়াড়িদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। তাই তারা জাঙ্কেটদের জন্য গ্যাম্বলিং ট্যাক্স কমানোর পাশাপাশি আকর্ষণীয় বেতন দিচ্ছে।

ম্যানিলার একজন জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগ কর্মকর্তা পল জোসেফ গার্সিয়ার মতে, “সত্যিই আমরা বিদেশি ভিআইপি বা ম্যাকাওর জাঙ্কেটদের আকৃষ্ট করতে পারবো কিনা আমি নিশ্চিত নই। তবে আমাদেরও বাজার দখলের কিছুটা সুযোগ আছে, এটা ঠিক। ” তিনি আরও জানান, ফিলিপাইনের জুয়া খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগে শেয়ারের দাম কমার অপেক্ষা করবেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৮০০ সালে ফিলিপাইন যখন স্প্যানিশদের কলোনি ছিল, তখন থেকেই এখানে জুয়া খেলার প্রসার ঘটে। ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট অ্যান্ড গেমিং কর্পোরেশন (প্যাগকর) বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকেই ১৩টি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করছে।

ক্যাসিনোর পাশাপাশি বাস্কেটবল জুয়া, বিঙ্গো, হিউটেঙ (অবৈধ খেলা) ইত্যাদি একই গোত্রের খেলাও ফিলিপাইনের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে জনপ্রিয়।

বর্তমানে ফিলিপাইনের ব্যক্তিমালাকানাধীন ক্যাসিনোগুলোর অন্যতম দ্য রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড। জেনটিং হংকং ও ফিলিপাইনের আরেক ধনী অ্যান্ড্রু ট্যানের মালিকানাধীন এ ক্যাসিনোতে শপিং মল, থিয়েটার, হোটেল (ম্যারিয়ট), ভিআইপি ক্লাব- সবই রয়েছে। আর বিরাট জাঁকজমকপূর্ণ বিরাট জুয়ার ফ্লোর তো আছেই। রোববার রাতে রিসোর্ট ওয়ার্ল্ডের ভিআইপি ফ্লোরে চিনের জুয়াড়িদের ‘ব্যাকারে’ খেলার আসর বসে। মান্দারিন ওয়েইট্রেসরা সেখানে বহুমূল্য পানীয় সরবরাহ করে।

এর বিপরীতে সরকারি প্যাগকোরের আওতাধীন ক্যাসিনো ফিলিপিনোর চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। সেখানে গেলে প্লাস্টিকের চেয়ারে ফ্যাকাশে আলোর নিচে বসে স্থানীয় বৃদ্ধদের বিঙ্গো খেলতে দেখা যায়।

এনরিক রাজনের সোলায়ার ক্যাসিনোটিও চৈনিকদের আকৃষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। এতে থাকছে ৯০টি ভিআইপি টেবিল ও ২০০টি সাধারণ জুয়ার টেবিল। এরই মধ্যে দুই ডজনেরও বেশি জাঙ্কেটের সঙ্গে কথা বলেছে কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে, এক বছরের মধ্যে ক্যাসিনো যে মুনাফা লাভ করবে, তার ৫০ শতাংশেরও বেশি আসবে জাঙ্কেটদের মাধ্যমে, ভিআইপি টেবিল থেকে।

এছাড়া যানজট, পুরনো ও জনবহুল বিমানবন্দর এড়িয়ে ম্যানিলাকে জুয়ার রুই-কাতলাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন রাজন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ব্যক্তিগতভাবে হংকং, ম্যাকাও, সাংহাই থেকে বিমানে করে নিয়ে আসবো। ”  

হংকং ভিত্তিক একটি বিনিয়োগ সংস্থা এরই মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ফিলিপাইনের জুয়ার মার্কেট ২০১৫ সালের মধ্যেই ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে জুয়া থেকে এর চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি আয় করে ম্যাকাও। তবে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে ফিলিপাইন, যারা ২০১১ সালে ৫৭০ কোটি ডলার আয় করেছে জুয়া থেকে।

দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামও এখন জুয়াকে বৈধ করার কথা চিন্তা করছে। তবে আগামী কয়েক বছরে ফিলিপাইনই এ খাতের আদর্শ প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে।

বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ফিচার

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।