ঢাকা: দিল্লিতে চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষকারীদের মধ্যে সবচে’ বেশি নির্যতনকারী পাবে সবচে’ কম শাস্তি! প্রচলিত আইন মোতাবেক ওই অপরাধী ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’। এ কারণে দণ্ডবিধি সূত্রে অন্যদের তুলনায় কম সাজাই ভোগ করতে হবে জঘন্যতম এই অপরাধীকে।
হিন্দি অনলাইন সংবাদপত্র নবভারত টাইম্স জানায়, হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, ভিকটিমের ওপর সবচে’ বেশি নিপীড়ন করেছে ওই কিশোর। তার ‘নাবালকত্ব’ পেরিয়ে ‘সাবালক’ হতে আর প্রায় একমাস সময় বাকি আছে। কিন্তু বয়সগত কারণে অর্থাৎ ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে গ্রেফতার হওয়ায় আদালতে তার বিচার জেজে (জুভেনাইল জাস্টিস) অ্যাক্ট-২০০০ এর অধীনে কিশোর অপরাধী আদালতেই হবে বলে জানা গেছে। তবে যেহেতু কিছুদিনের মধ্যেই সে প্রাপ্ত বয়স্ক হযে যাবে, তাই তাকে কিশোর অপরাধী সংশোধন কেন্দ্রে রাখা যাবে না। সে সূত্রে তাকে তিহার জেলেই রাখা হবে।
বিকাস পাহবা নামের একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মিডিয়াকে জানান, জেজে অ্যক্ট অনুযায়ী চার্জশিট দাখিলের পর অভিযুক্ত যে কোনো সময়ে জামিন চাইতে পারে। এক্ষেত্রে কী অপরাধে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তা বিবেচনায় আসবে না। আর তাই ৩ মাস জেল খাটার পর সে জামিনে বেরিয়ে আসতে পারে।
তবে, এক্ষেত্রে জেজে বোর্ড জামিনের আবেদন নাকচ করতে পারে যদি অভিযুক্ত ‘সমাজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি’ স্বরূপ প্রতীয়মান হয় অথবা তার দ্বারা সংঘটিত অপরাধটি জঘন্যতর প্রকৃতির হয়।
প্রসঙ্গত, ‘নাবালক’ হওয়ার সূত্রে ওই অপরাধীর পরিচয় মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি।
ভারতের জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট (কিশোর অপরাধ আইন) অনুযায়ী তার বিচার হবে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের অধীনে। আর গণধর্ষণে অংশগ্রহণকারী ওই ‘কিশোরকে’ সর্বোচ্চ ৩ বছরের সাজা খাটতে হবে। আর ওই একই আইনের সূত্রে এমনও হতে পারে যে রায়ের পর মোটমাট ৩ মাসের সাজা খেটে সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে।
জেজে আইনের ধারায় আছে, অপরাধ যাই হোক না কেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অপরাধীর সাজা সর্বোচ্চ ৩ বছর।
এদিকে, গণধর্ষণ পীড়িত ওই তরুণী শনিবার ভোরে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন হত্যা মামলা দায়ের হলে তাতেও ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ হওয়ার সুবিধায় কিশোররূপী ওই চরম অপরাধীর শাস্তি তুলনামূলক কমই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনজ্ঞদের মতে, ভিকটিমের মৃত্যুর পর অন্য অপরাধীদের চরম দণ্ডভোগের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ ওই অপরাধী একই চক্রের সঙ্গে থেকে অন্যদের চেয়ে জঘন্যতর অপরাধ করা সত্ত্বেও লঘুদণ্ডে পার পেয়ে যেতে পারে।
প্রচলিত আইন আর অপরাধের ধরণ ও মাত্রা অনুযায়ী বাকি ৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে আইনবিশারদরা ধারণা করছেন।
গত শুক্রবার ভিকটিমের মৃত্যুর পর দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বলেছেন, সরকার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে লক্ষ্যে সরকার আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে ধর্ষকদের কঠোরতর শাস্তির বিধান করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ দিল্লিতে চলন্ত বাসে ডেন্টাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় বাসচালক রাম সিং। চরম ধিকৃত ওই অপকর্মের হোতা হিসেবে বাসচালক রামসিংয়ের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে জেলখানার কয়েদিরা পর্যন্ত চরম ক্রোধ প্রকাশ করছে বিভিন্নভাবে।
সম্প্রতি, হাই সিকিউরিটি তিহার জেলে বন্দি হিসেবে নেওয়ার পর রামসিংকে অন্যান্য কয়েদিরা গণধোলাই দেয়। এসময় তাকে অশ্রাব্য-অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজও করা হয়। কারারক্ষীরা সময় মত উদ্ধার করতে না পারলে কয়েদিরা তাকে হয়তো হত্যাই করতো বলে জেল সূত্র জানায়।
এছাড়া আরেকটি সুত্র জানায়, বন্দি রামসিংকে মানুষের মলমূত্র খেতেও বাধ্য করা হয়। তিহার জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারি চাকুরে না হলে তারাও রামসিংকে পেটাতেন। সর্বশেষ, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিকটিম তার একাধিক জবানবন্দিতে তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। সে সূত্রে জানা গেছে, তার ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছে ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ ওই তরুণ। ধর্ষক দল তরুণের সঙ্গে থাকা তার বন্ধুকে প্রচণ্ড মারপিট করে ঘটনার সময়। সবশেষে তাদের দু’জনকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২
একে