ঢাকা: গণধর্ষণজনিত বিভৎস নির্যাতনে নিহত মেডিকেল ছাত্রী ‘দামিনী’র (সাধারণ মানুষের দেওয়া ভিকটিমের অনেকগুলো প্রতীকি নামের একটি, যার অর্থ বজ্র বা বিজলী) নিজ রাজ্য উত্তর প্রদেশের মানুষ এখন শোকে মুহ্যমান। এ ঘটনায় বিচারের রায় না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবার অনশনে যাবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, দিল্লির পৈশাচিক ওই ঘটনার শিকার তরুণীর মরদেহ রোববার ভোররাতে সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার চার্টার্ড প্লেনে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর ভারতজুড়ে চলমান চাপা ক্ষোভের মাঝে পুলিশ ও র্যাফ (র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স)-এর কড়া নিরাপত্তায় মরদেহ পশ্চিম দিল্লির দ্বারকা২৪ সেক্টর এলাকার শবদাহ কেন্দ্রে নিয়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে সৎকার করা হয়।
‘ভারতের সাহসী কন্যা’ দামিনীর উত্তর প্রদেশের বাল্লিয়ায় জেলার মান্দোরা কালান গ্রাম যেন শোকে একেবারে স্থবির হয়ে গেছে। গ্রাম প্রধান শিব মন্দির সিং মিডিয়াকে জানান, নিহতের আত্মার শান্তির জন্য এরই মধ্যে একটি প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্ষকদের কঠিন শাস্তির দাবিতে ক্রমশ ফুঁসতে থাকা ভারতের জনগণের সঙ্গে স্থানীয়রাও দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চরম অসন্তোষে সময় পার করছে। সিং বলেন, মান্দোরাবাসী চায়, ধর্ষকদের এমন চরম শাস্তি দেওয়া হোক যাতে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যদের অন্তরে চরম ভীতির সঞ্চার করে।
অপরদিকে, দামিনীর এক আত্মীয় জানিয়েছেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া পর্যন্ত দামিনীর পরিবার অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ৬ দুর্বৃত্ত কর্তৃক ওই তরুণীর গণধর্ষণসহ নারকীয় নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর জানার পর থেকেই মান্দোরা গ্রামের মন্দিরে তার সুস্থ্যতা কামনায় দিন-রাত বিশেষ প্রার্থণাসভার আয়োজন করে এসেছে গ্রামবাসী।
আত্মীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ভয়াবহ ওই গণধর্ষণ ঘটনার সময় ধর্ষকদের মারপিটে আহত তরুণীর বন্ধুর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। দিল্লির মহাবীর এনক্লেভ এলাকায় পাশাপাশি বাসায় থাকতো তারা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তাদের সাতপাকে বাঁধা পড়ার কথা ছিল। বিয়ের কেনাকাটাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু গণধিকৃত বাসচালক রামসিং ও তার সঙ্গী দুর্বৃত্তদল সব স্বপ্ন শেষ করে দিল।
ওই ঘটনার পর টানা ১৩ দিন চরম যন্ত্রণায় ভুগে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত পরাভূত হয় দামিনী। শনিবার ভোরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে সে।
প্রসঙ্গত, রোববার ভোররাতে দামিনীর মরদেহ নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষ প্লেন দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে দিল্লির মহাবীর এনক্লেভ এলাকার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে ধর্মীয় আচার পালন শেষে মরদেহ দ্বারকা২৪ সেক্টর এলাকার শবদাহ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। এসময় শবদাহ কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা দিল্লি পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়। এমনকি সাংবাদিকদেরকেও দাহকেন্দ্রের আশপাশে যেতে দেওয়া হয়নি।
এ অবস্থায় অল্পক্ষণেই দাহকর্ম সমাধা করা হয়। দাহকালে শ্মশাণঘাটে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরপিএন সিংহ, পশ্চিম দিল্লির সাংসদ মহাবল মিশ্র, দিল্লি বিজেপি প্রধান বিজেন্দ্র গুপ্তাসহ দিল্লি পুলিশের ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২
একে